অবশেষে প্রায় সাড়ে ৮ ঘণ্টা ম্যারাথন জেরার পর ইডির দপ্তর থেকে বেরলেন রিয়া চক্রবর্তী। সূত্রের খবর, ইডির তরফে দিন দুয়েক আগেই রিয়াকে তাঁর সম্পত্তি এবং ২টি ফ্ল্যাটের কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু অভিনেত্রী সেসব দলিল এবং তথ্য ছাড়াই শুক্রবার সকালে ইডির দপ্তরে হাজির হন। যথারীতি জেরার মুখে পড়তে তাঁকে। ইডির তরফ থেকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে রিয়া বলেন, “তিনি ভুলে গিয়েছেন কোথায় ফ্ল্যাট-বাড়ির কাগজপত্র রেখেছেন।” স্বাভাবিকবশতই এই বিষয়টিকে মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না তদন্তকারীরা।
ইডির দপ্তর সূত্রে খবর, রিয়াকে সাড়ে ৮ঘণ্টা ধরে যে সমস্ত প্রশ্ন করা হয়েছে সবেতেই তিনি প্রায় একই উত্তর দিয়েছেন যে, “ঠিক মনে করতে পারছি না, কী হয়েছিল।” অন্যদিকে, শুক্রবারই এই বিষয়ে ইডির দপ্তরে রিয়া চক্রবর্তীর পাশাপাশি জেরা করা হয় রিয়ার ভাই সৌভিক চক্রবর্তী, সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রাক্তন বিজনেস ম্যানেজার শ্রুতি মোদি এবং রিয়ার অ্যাকাউন্টেন্ট রীতেশ সাহকে। প্রত্যেকের জিজ্ঞাসাবাদই আলাদা আলাদা ঘরে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে ফের রিয়াকে তলব করতে পারে ইডির আধিকারিকরা। পাশাপাশি অভিনেতার বন্ধু সিদ্ধার্থ পৈঠানিকেও আগামীকাল অর্থাৎ ৮ আগস্ট ডেকে পাঠিয়েছে দপ্তরে।
প্রসঙ্গত, সুশান্ত সিং রাজপুতের ব্যাংক অ্যাকউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে।তদন্তের অভিমুখ এখন রিয়া চক্রবর্তীর সম্পত্তি, টাকাপয়সা ও বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে।একটানা প্রায় ছ’ ঘণ্টার উপর ইডি দফতরে রিয়ার জেরা চলছে। ঘুরেফিরে উঠছে রিয়ার সম্পত্তি আর টাকাপয়সা খরচের প্রশ্ন। ২০১৮-’১৯-এ রিয়া চক্রবর্তী যেখানে ১৪ লাখ টাকা রোজগার করেন, সেখানে কী ভাবে ৬৫ লাখ টাকা খরচ করলেন তিনি? সে টাকা কোথা থেকে কী ভাবে পেলেন রিয়া? প্রশ্ন ইডির।
আরও পড়ুন: Bandish Bandits Review: গান পাগল হলে এই সিরিজ আপনার জন্যই, দেখুন ভিডিও…
ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, রিয়ার নামে মুম্বইয়ের অভিজাত এলাকায় দুটো ফ্ল্যাট আছে।জানা গিয়েছে, মুম্বইয়ের খারে-তে ৮৫ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর।আর একটি ফ্ল্যাট আছে ৬০ লক্ষ টাকার। অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট কেনার টাকা কোথায় পেলেন রিয়া? প্রশ্ন উঠছে সেখানেও। সুশান্তের বাবা আগেই অভিযোগ করেছিলেন, সুশান্তের টাকা আত্মসাৎ করেছেন রিয়া। সুশান্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা তিনি সরিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। অন্য দিকে, গতবছর রিয়ার অ্যাকাউন্টে ছিল ১০ লাখ টাকা। সেখান থেকে সেই নগদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ লাখে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সুশান্তের মোট চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল। তার মধ্যে দু’টি থেকে বড় অঙ্কের টাকা গিয়েছিল রিয়ার অ্যাকাউন্টে।
সুশান্তের বাড়ির পরিচারক, ম্যানেজার, ড্রাইভার, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সকলেই জানাচ্ছেন, সুশান্তকে সম্পূর্ণ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছিলেন রিয়া। সমস্ত খরচ করতেন সুশান্তের ক্রেডিট কার্ডে। শপিং থেকে শুরু করে ইয়োরোপ ভ্রমণ, সবটাই হত সুশান্তের টাকায়।
এর পাশাপাশি জোর করে সুশান্তকে বান্দ্রার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে নিয়ে আসা, পরিবারের সমস্ত খরচ চালানো, বিলাসবহুল গাড়ি কেনা— সবটাই নাকি সুশান্তের থেকে আদায় করেছিলেন রিয়া।সুশান্ত যে দুটো কোম্পানি খুলেছিলেন তার মধ্যে একটা ছিল আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি, যার অংশীদার ছিলেন রিয়ার ভাই শৌভিক চক্রবর্তী। সুশান্তের দ্বিতীয় কোম্পানি ভিভিড্রেজ রিয়ালিটিক্স চালু হয়েছিল ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে। এই কোম্পানি কাজ করে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি নিয়ে। কোম্পানিটির পার্টনার ছিলেন সুশান্ত নিজে, রিয়া এবং রিয়ার ভাই। তবে কোম্পানি খোলার সময় যে বিনিয়োগ করতে হয় তার পুরোটাই করেছিলেন সুশান্ত। আর তৃতীয় কোম্পানিটি ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশনের হয়ে কাজ করে। নাম, ‘ফ্রন্ট ইন্ডিয়া’। ‘কেদারনাথ’-এর তারকার এই কোম্পানিটি ভারতের মানুষের স্বাস্থ্য, দারিদ্র ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করে। এই কোম্পানিতে অর্থের লেনদেন রিয়ার হাত দিয়েই করতেন সুশান্ত। যদিও সেই অর্থ যে কোম্পানির খাতেই খরচ হয়েছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় ইডি।
আরও পড়ুন: Class of 83 trailer: পুলিশের ‘সত্যিকারের’ এনকাউন্টারের গল্প, প্রথমবার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ববি দেওল