ওয়েব ডেস্ক: ক্রমশ বাইরে বেরনো আরম্ভ করতেই হবে আমাদের এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে, এই সহজ কথাটা আমরা মোটামুটি সবাই বুঝে গেছি। মাস্ক ছাড়া বাইরে পা দেওয়া নিষিদ্ধ – বাচ্চা-বুড়ো সকলকে এই নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা। লকডাউন তোলার পর্যায়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। শুধু মাস্ক পরলেই কি হবে? না কি পরতে হবে ফেস শিল্ডও? এই নিয়ে সংশয়ে অনেকেই।
বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অনেকেই মাস্কের উপর স্বচ্ছ্ব প্লাস্টিকের মুখাবরণ বা ফেস শিল্ড পরছেন। গণপরিবহনে উঠলে এ বার থেকে কি দুটোই কি পরতে হবে, না কি যে কোনও একটা পরলে হবে? কোনটা বেশি নিরাপত্তা দেবে? ত্রিস্তরীয় ও ফিল্টার দেওয়া কাপড়ের কাপড়ের মাস্ক ঠিক ভাবে পরলে এবং মানুষের সঙ্গে ৩-৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে পারলে প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ সুরক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু তাতে অনেক রকম সমস্যাও থেকে যায়। এই সমস্যা মূলত আমাদেরই ভুলে। কেমন সে সব?
অনেকে মাস্ক ঠিক ভাবে সামলাতে পারেন না। কেউ কথা বলার সময় চিবুকের কাছে নামিয়ে নেন, কেউ বা পরেন নাকের নীচে এবং তা প্রায়ই নাক থেকে সরে যায়। কখনও আবার এত হালকা করে বাঁধেন যে চারপাশে প্রচুর ফাঁক থেকে যায়। অনেকে আবার বার বার মাস্কের বাইরের অংশে হাত দিয়ে সেই হাত নাকে-মুখে-চোখে লাগান। কেউ কেউ একটাই মাস্ক না ধুয়ে বা ডিজপোজেবল হলে না ফেলে, রোজ পরতে থাকেন। ফলে মাস্ক পরার উদ্দেশ্যই মাটি হয়ে যেতে বসেছে। বিপদ বাড়ে। এ দিকে আশপাশে এত উপসর্গহীন রোগী ঘুরে বেড়াচ্ছেন যে কখন কার থেকে সংক্রমণ এসে ঢুকল, তা টের পাওয়া যাচ্ছে না। তার উপর মাস্ক পরলে আবার আলাদা করে চশমা বা সানগ্লাসেও চোখ ঢাকতে হয়।
আরও পড়ুন: মাত্র ৫০ টাকায় ডায়ালিসিস! গরিবদের সুস্থ হয়ে ওঠার ভরসা দিচ্ছেন ফুয়াদ ডাক্তার
ফেস শিল্ড অনেকটা বর্মের মতো কাজ করে। পিভিসি বা মোটা প্লাস্টিকের তৈরি এই শিল্ড হেলমেটের ফেস কভারের মতোই আপনার মুখের সামনেটা ঢেকে রাখবে। ডাক্তার বা নার্সরা হাসপাতালে অপারেশনের সময় অনেকক্ষেত্রে মাস্কের উপর ফেস শিল্ড ব্যবহার করেন। তাতে রোগীর শরীর থেকে ছিটকে আসা যে কোনও তরলের সংস্পর্শ এড়ানো সম্ভব হয়। কোভিড ঠেকাতে কীভাবে কার্যকর হবে তা? প্রথমত, এটি আপনার মুখের উপর একটা আবরণ হিসেবে থাকবে, কিন্তু স্বচ্ছ হওয়ায় দৃষ্টিপথে কোনও বাধা তৈরি করবে না। দুই, অনেকের মাস্ক পরে শ্বাস নিতে অসুবিধে হচ্ছে, দমচাপা লাগছে। তাঁরাও স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন এই বর্ম ব্যবহার করলে। তিন, শিল্ডের আবরণ থাকলেও আপনার মুখ এবং অভিব্যক্তি বুঝতে অসুবিধে হবে না। সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নাকি?
অনেকেই ফেস মাস্কের উপর শিল্ড পরে নিচ্ছেন — ‘আংরেজি মিডিয়াম’-খ্যাত অভিনেত্রী রাধিকা মদন তাঁর ইনস্টা অ্যাকাউন্টে তেমনই একটি ছবি দিয়েছেন সম্প্রতি। মুম্বই থেকে দিল্লির বাড়ি ফেরার আগে তিনিও মাস্ক এবং শিল্ডের যৌথ কবচে মুড়ে নিয়েছিলেন নিজেকে।
ফেস শিল্ড থাকলে মুখে, নাকে বা চোখে হাত দিতে পারবেন না একেবারেই, তাই সংক্রমণের আশঙ্কাও কম। সিঙ্গাপুরে বাচ্চাদের স্কুল খোলার কথা সামনের মাসে, সেখানে তাদের ফেস শিল্ড পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমেরিকার কিছু স্কুলেও ছাত্র-শিক্ষক সবাইকেই এই শিল্ড পরতে হবে। সবচেয়ে বড়ো সুবিধে হচ্ছে, আপনি এই সুরক্ষাকবচটি রোজ পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিয়ে আবার ব্যবহার করতে পারবেন। মাস্কের ক্ষেত্রে কিন্তু সে সুবিধে নেই। কয়েকবার পরার পর ফেলে দিতেই হবে।
তা হলে কি প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাসের মতো মাস্কের বদলে ফেস শিল্ড ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ? এক কথায় উত্তর দেওয়া মুশকিল। তবে যখন বাস বা মেট্রোরেলে চড়বেন, তখন মাস্ক আর ফেস শিল্ড দুটোই ব্যবহার করুন। বাজারে বা যে কোনও ভিড় জায়গায় গেলেও সেটাই করা উচিত। সেই সঙ্গে বার বার হাত ধোয়া, সোশাল ডিস্ট্যানসিং বাজায় রাখা এবং অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে না যাওয়ার মতো বিষয়গুলি তো মেনে চলতে হবেই।
আরও পড়ুন: কোয়ারেন্টাইন কারে কয়, সেকী কেবলই যাতনাময় ?