গেরুয়া শাসনে বিপদ বাড়ছে সংখ্যাগুরুরও,সাবধান না হলে কেঁদে কুল পাবেন না

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

সংখ্যাগরিষ্ঠরা সচেতন না হলে তারা পস্তানোর সময় পর্যন্ত পাবে না। যখন বিদ্বেষ আফিমের ঘোর কাটবে তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় শাসক দল জানে কেবল গরিষ্টদের জন্য আলাদা করে কিছু করা যায় না। তা সম্ভব নয়। তাদের আলাদা করে কিছু দেওয়া কার্যত অসম্ভব। সে কারণেই তারা কর্মসংস্থানের জায়গায় মন্দিরের নেশা ধরানোর চেষ্টা করছে।  ধর্মের শাশ্বত বাণীর জায়গায় নিয়ে এসেছে বিদ্বেষ প্রচার।

এদেশে মন্দির কিংবা মসজিদের কমতি নেই। কেবল কাজ নেই। হিন্দুর কাজ নেই। মুসলিমের কাজ নেই। দলিতের কাজ নেই। আদিবাসীর কাজ নেই। কেবল ভারত মাতা কি জয় স্লোগান আছে। ন্যায় ও অহিংসার অন্যতম মহাকাব্যিক উদাহরণ শ্রী রামচন্দ্রের নাম নিয়ে ‘রণহুংকার’ আছে।

আরও পড়ুন: PM CARES ট্রাস্টে সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই, কেন্দ্রের নথিতেই বিস্ফোরক তথ্য

rathyatra saarthi 11

রাজ্যে রাজ্যে পদ্ম চিহ্নিত পতাকা পুঁতে দেবার হিড়িক আছে। সংগঠন বাড়ানোর হ্যাপার থেকে অন্যের দল ভেঙে নেতা বাড়ানোর ওপর জোর রয়েছ। অতি সাধারণ মানুষ যে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি  ধরতে পারে, তাকেও বিদ্বেষে প্যাকেটে মুড়ে বাজারজাত করার দক্ষতা আছে। সংখ্যাধিক্য ‘অসৎ’ এনআরআই সাগরেদ আছে। বড় সংখ্যক মিডিয়া আছে। আদানি আছে।আম্বানি আছে। কর্মসংস্থান নেই। জিনিসের দাম বাড়ছে প্রতিদিন।রোজগার কমছে সাধারণের। আর্থিক উন্নতির কোনও রূপালী রেখা নেই।

facebook 10 modi adv 111315074611

এরপরও পদ্মপন্থী হিন্দুরা বলতেই পারেন, ”আগে কি এমন ভাল দিন ছিল !  এখন তো আর যাইহোক দুর্নীতি নেই ! কংগ্রেসের আমলে কি দাঙ্গা কম হয়েছে ? কংগ্রেস মুসলিমদের তোষন করেছে। ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি কপচেছে। তার বেলায় তো এই সব ‘লিবরানডু’ (লিবারাল পন্থী )দের আপত্তি ছিল না। তাহলে এখন এমন ‘ফাটছে’ কেন?” কথার মধ্যে যুক্তি রয়েছে। কিন্তু তা এবার ভেবে দেখতে হবে হিন্দুদেরই। যাদের নিয়ে তোষণের কথা বলা হয়, তাদের জিজ্ঞাসা করলে বুঝতে পারবেন, তারা কোনও রাজনৈতিক দলকেই আপন ভাবে না। ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমরা ভোট দিলে আজ মুসলিম লীগের দাপট থাকত। আছে কী ? তারা বুঝে নিয়েছে, তাদের আপন কেউ নয়। তার পরেও তাদের কাছে যারা মন্দের ভালো, তারা তাদের ভোট দেয়। সাধারণত তা কট্টর সাম্প্রদায়িক দলের বিরুদ্ধে যায়। সে ভোট পেয়েছে, কংগ্রেস, সিপিএম, সপা, বসপা, আরজেডির মত ধর্ম নিরপেক্ষ দলগুলি।

ধর্ম দেখে মুসলিমরা ভোট দেয়না। হিন্দুরাও তা দিত না। তবে শাহ-মোদী যুগে তাতে পরিবর্তন এসেছে।নানা রঙের বিদ্বেষ বাজারজাত করার বিশেষ দক্ষতা কেন্দ্রীয় শাসক দলকে এক শ্রেণীর হিন্দুর কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

babri masjid 1200

কংগ্রেস চাইত, বিজেপির মত গেরুয়া দলগুলি মুসলিম তোষণের কথা প্রচার করুক। এতে তাদের দুটো সুবিধা হয়েছিল। মুসলিমদের জন্য তাদের আলাদা করে কিছু করতে হয়নি। অথচ তারা মুসলিমদের জন্য প্রাণপাত করছে, সেটা আরএসএস তাদের নেটওয়ার্ক দিয়ে প্রচার করেছিল। ফলে মুসলমানদের একটা বড় অংশের মধ্যেও এই বিভ্রান্তি প্রবল ছিল যে, কংগ্রেস বুঝি তাদের দল। মাঝখান থেকে কংগ্রেসের সুবিধা হয়ে গিয়েছিল। মুসলিমরা তাদের চোখবন্ধ করে ভোট দিয়েছিল।

Ram Mandir Bhoomi Puja

আর দুর্নীতির কথা বলে লাভ নেই। কংগ্রেস জমানায় কিছু মিডিয়া বেঁচে ছিল। তারা লাগাতার দুর্নীতির খবর করেছে। অনেকে জেল খেটেছেন। কংগ্রেস জমনাতেই তা হয়েছে। কিন্তু এখন মিডিয়া নেই। তারা বেশিরভাগই ‘প্রচারকের’ দায়িত্ব নিষ্ঠা ভরে পালন করছে। ফলে দুর্নীতি হয়নি একথা কেবল নিষ্ঠাবান পদ্মপন্থীই বলতে পারে। দুর্নীতি যখন মিডিয়ার কন্ঠ রোধ করতে শুরু করে, তা যখন ন্যায় বিচারালয় পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তখন স্বচ্ছতার প্রশ্ন অবান্তর হয়ে যায়।কানিমোঝি কিংবা এ রাজাকে সম্ভবত সুধী পাঠক ভুলে যাননি।

ayodhya ram mandir ians 69

সংসারের দিকে তাকিয়ে দেখবেন, যে সন্তান দুর্বল বাবা-মা তাকে বাড়তি খানিকটা স্নেহ ও প্রশ্রয় প্রদর্শন করে। এর কারণ হল, যে দুর্বল তার মনে ভিতরে একটা কষ্ট থাকে। সেখানে একটা বিচ্ছিন্নতা কাজ করে। অভিমান তাকে চেপে ধরে। দুর্বল সন্তানের প্রতি বাবা-মা তাই স্বাভাবিক কারণেই খানিকটা বাৎসল্য দেখান। তা দেখে বাকি সন্তানরা বিরক্ত হয়। কেউ কেউ মা-বাবাকে প্রকাশ্যে বলেও বসে যে, ‘তোমরা কেবল ওকেই ভালোবাসো।’ কিন্তু তারা যখন বড় হয় তখন সবটা বুঝে যায়। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠরা অনেকেই তা বুঝলেন না। তারা এখনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের এই মনস্তাত্ত্বিক অপরিপক্কতা নিয়ে খেলা করে রাজনীতিবিদরা ।

 

দুর্ভাগ্যের বিষয় এতদিন যে খেলা চলছিল সংখ্যালঘুদের নিয়ে এবার তা শুরু হয়েছে সংখ্যাগুরুদের নিয়ে। যেটা এদেশের হিন্দুরা অনেকেই এখনও বুঝে উঠতে পারছে না । কংগ্রেস সংখ্যালঘুদের নিয়ে খেলেছিল। বিজেপি সংখ্যাগুরুদের নিয়ে খেলেছে। সংখ্যালঘুরা পিছিয়ে থাকলেও দেশের অগ্রগতি সম্ভব, সংখ্যাগুরুর পিছিয়ে পড়লে জাতির অধঃগতি রুখে কার সাধ্যি।

রাজনীতি মানেই খানিক সত্যের সঙ্গে অগুনতি মিথ্যার কোলাজ। একদিকে রাজনীতিবিদদের মিথ্যা ভাষণ,অন্যদিকে মিথ্যা ও বিদ্বেষপূর্ণ ইতিহাস নিয়ে নাটক রচনা সাধারণ হিন্দুর মনে একটা মুসলিম বিদ্বেষ তৈরিতে সমর্থ হয়েছে। বাংলার প্রেক্ষিতে বলা যায়, কংগ্রেস কিংবা বাম সব জমনাতেই বিনোদনের মোড়কে এই বিদ্বেষ প্রচার হয়েছে। নাটক, যাত্রা ও পালাগানের বিনোদনের ভিতর দিয়ে ঢুকেছে বিদ্বেষ। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষিত হিন্দু ও অর্ধশিক্ষিত হিন্দুর মধ্যে মুসলিমদের সম্পর্কে ভাল ধারণা তৈরী হয়নি। সুতরাং এর জন্য কেবল বিজেপিকে গাল দিয়ে লাভ নেই। বিজেপি কেবল আম হিন্দুর মনে তৈরী হওয়া এই বিদ্বেষ ফসল কেটে ঘরে তুলতে চেষ্টা করছে।

atal bihari vajpayee lk advani duo built bjp from scratch

নাটকে যাত্রায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন লম্পট, অত্যাচারী, পাশবিক বাদশা ও সুলতানদের দেখানো হয়েছে। বাদশার সাঙ্গপাঙ্গরাও লম্পট এবং অত্যাচারী। হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করাই তাদের ‘হবি’। যাত্রার মধ্যে একটি অতি দুর্বল সৎ মুসলিম চরিত্র রাখা হত। যার ভূমিকা খানিকটা রান্নায় ব্যাবহৃত তেজপাতা গোছের। যে হিন্দু মহিলাদের বারবার ‘বহিন’ ‘বহিন’ সম্বোধন করত। এর ফলে জনমানসে এমন একটা ধারণা তৈরী হওয়া স্বাভাবিক যে মুসলিমরা সাধারণত লম্পট ও অত্যাচারী হয়। এক আধটা তেজ পাতা থাকতেও পারে। তবে তারা ব্যাতিক্রম। দীর্ঘদিন ধরে এইভাবে বিদ্বেষের জমি তৈরী হয়েছে। বিজেপি তাতে পদ্মদের চাষ করতে চেষ্টা করছে। তাতে তেমন দোষের তো কিছু নেই।

ধর্মের মুখোশ পরে অধর্মকে ব্যবহার করে কত দেশ যে আঁধারে তলিয়ে গিয়েছে তা কি এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠরা দেখেনি? বিদ্বেষকে ব্যবহার করে কেবল খুনের ব্যবসা চলতে পারে, তার বেশি কিছু নয়। ধর্মের স্লোগান আস্ফালনের ঢঙে কেউ দিলেই তাকে সন্দেহ করতে হবে। বুঝতে হবে তা হিংসা ছড়ানোর চক্রান্ত ছাড়া কিছু নয়। দুঃখের কথা হল,পাকিস্তান এতদিন যে পথে হেঁটেছে, শাহ-মোদীর সরকার দেশকে সেই পথে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছেন। সেনা নিয়ে রাজনীতি পাকিস্তানের অঙ্গ। ভারতে তা ছিল না। ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদের’ হিড়িক তুলে সেনাকে ব্যবহার করতে চাইছে শাহ-মোদির সরকার।

modi shah

হিন্দুদের জন্য এরা কিছু করবে না। কেবল জায়গার নাম পরিবর্তন ছাড়া। এদের কাজ মুসলিমদের মনে ত্রাস সৃষ্টি এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঘরে বসে আস্ফালন।  2020 তে দাঁড়িয়ে এরা হিন্দুদের মুঘল শাসনের গপ্পো শোনাতে এসেছে। মুঘলরা কি করেছিল তা জেনে একজন সাধারণ হিন্দু কিংবা সাধারণ মুসলিমের কি লাভ বলতে পারেন? তার ঐতিহাসিক মূল্য থাকতেই পারে। কিন্তু এই সরকারের কর্মসংস্থানে সম্রাট ঔরংজেব বাধা দিচ্ছেন, একথা তো বলা যাবে না। তবে যারা নোটবন্দির গপ্পো বিশ্বাস করেছিল, তাদের যেকোনও গপ্পো গেলানো যায়। শাহ-মোদির বুঝে গিয়েছেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠরা দেশের পরিচয়। তারাই উন্নয়নের চাকাকে গড়িয়ে নিয়ে যায়। তাতে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব মজবুত হলে আরও ভালো হয়। কিন্তু সংখাগরিষ্ঠরা যদি বিদ্বেষ প্রচারকে মোক্ষলাভের অঙ্গ ভাবে, তবে জেনে রাখবেন আত্মঘাতী এই প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হবে। আপনার বাড়ির চেতনা সম্পন্ন ছেলে মেয়েরাও এই বিদ্বেষপ্রচার থেকে রেহাই পাবে না। চাকরি চাইলেই ওরা আপনাদের ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ বলবে। ‘আরবান নকশাল’বলবে। ব্রেকিং নিউজ ওয়ালারা আপনাকে চীনের কিংবা পাকিস্তানের দালাল বানিয়ে দেবে।

ইতিমধ্যেই তা শুরু হয়ে গিয়েছে। যারা বোঝার বুঝছেন। কিন্তু বিদ্বেষের নেশায় মত্ত হয়ে রয়েছেন অনেকে। ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন, মুসলিমদের কৌশলে ভয় দেখানো ছাড়া কেন্দ্রীয় শাসক দলের সেই অর্থে কোনও কাজ নেই। তাদের এই কৌশল পদ্ম রাজ্যগুলিতে প্রয়োগ হচ্ছে। ইউপি তার অন্যতম উদাহরণ। এই ভয় দেখানোকে নিজেদের প্রাপ্তি মনে করবেন না। মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির দিকে তাকিয়ে দেখুন। সেখানে ধর্মের আস্ফালন রয়েছে। ধর্ম নেই। কেবল আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। আর বাতাসে রয়েছে বারুদের গন্ধ। দেশকে তা উন্নয়নের পথে এগোতে দেবে না। আপনারই পারেন ভয়াবহ এই প্রবণতা রুখতে। দেশের সনাতন সংষ্কৃতি ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। অভিমত ব্যক্তিগত 

আরও পড়ুন: রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আশঙ্কা, রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি শুভেন্দুর

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest