ওয়েব ডেস্ক: মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত প্রক্রিয়া ফাঁসি। ভারত ছাড়া এই প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে।
২০১৮ সালের এপ্রিলে দেওয়া অ্যামনেস্টির তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে বিশ্বের ১০৬টি (অর্ধেকের বেশি) দেশে মৃত্যুদণ্ড আইনত বন্ধ। আরও ৩৬টি দেশে মত্যুদণ্ড আইনত থাকলেও, তা কার্যকরী হয় না। অর্থাৎ ১৪২টি (বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশের বেশি) দেশে মৃত্যুদণ্ড আইনত বা কার্যত নেই।
আরও পড়ুন: অবশেষে ফাঁসি হয়ে গেল নির্ভয়ার চার ধর্ষক-হত্যাকারীর
বিশ্বে ৫৬টি দেশে কম-বেশি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সব চেয়ে বেশি ম়ৃত্যুদণ্ড হয় চিনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে এখনও মৃত্যুদণ্ডের অস্তিত্ব আছে। তবে, সব প্রদেশে নয়। ২০১৮ সালে ২৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে আমেরিকায়। সব চেয়ে বেশি টেক্সাসে (১৩ জনের)।
অ্যামেনস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য বলছে— ২০১৮ সালে, বিশ্বের ৫৪টি দেশে ২ হাজার ৫৩১ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছে। শেষ পাওয়া হিসেব অনুয়ায়ী, এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে কমপক্ষে ১৯ হাজার ৩৩৬ জন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার প্রহর গুনছে। তবে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বিশ্বে প্রাণদণ্ড কার্যকর করার সংখ্যা কমেছে ৩১ শতাংশ।
বিশ্বের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া ফাঁসি। ভারত ছাড়া এই প্রক্রিয়া চালু রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, জাপান, সিরিয়া, মালয়েশিয়া, কিনিয়া, জিম্বাবোয়ে, সুদান, বটসোয়ানা, মিশর এবং ক্যিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অধিকাংশ দেশে। আমেরিকার ওয়াশিংটন রাজ্যে বিষ ইঞ্জেকশনের পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড হিসেবে চালু রয়েছে ফাঁসিও।
আরও পড়ুন: জেলে রোজগার লক্ষ টাকা, চমকে দেওয়ার মতো শেষ ইচ্ছা মুকেশ ও বিনয়ের
প্রায় ২,৫০০ বছর আগে প্রাচীন পারস্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ফাঁসির প্রচলন হয় প্রথম। অপরাধীকে চরম দণ্ড দেওয়ার এই রীতি কয়েকটি কারণে জনপ্রিয় হয়েছে। প্রথমত, এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে তাড়াতাড়ি দণ্ডিতের প্রাণনাশ হয়। দ্বিতীয়ত, এই প্রক্রিয়া কার্যকর করতে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। তৃতীয়ত, এই প্রক্রিয়ায় অপেক্ষাকৃত স্বল্পমেয়াদী মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় আসামিকে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট চার রকম ফাঁসি প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত হল ‘লং ড্রপ’ পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় আসামির দেহের দৈর্ঘ্য, ওজন ও আকৃতি মেপে ফাঁসির প্রকোষ্ঠ তৈরি করা হয়। অর্থাৎ, গলায় ফাঁস লাগানোর পরে পায়ের নীচের পাটাতন সরে গেলে দেহটি ঠিক কত দূর পর্যন্ত পড়বে, তা আগেই নির্ধারণ করা হয়। প্রকোষ্ঠের ভিতরে দেহটি পড়ে যাওয়ার পরে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে দড়ির পতন আচমকা থেমে যায়। এর ফলে হ্যাঁচকা টান লেগে ভেঙে যায় কণ্ঠার হাড়। সঙ্গে সঙ্গে গভীর অচেতনতায় ডুবে যায় আসামির শরীর এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে মত্যু ঘনায়।
আরও পড়ুন: Nirbhaya convicts: জেনে নিন নির্ভয়ার ৬ খুনির আসল পরিচয়
ফাঁসির এই প্রক্রিয়া ১৮৭৪ সালে ব্রিটেনে চালু হয় এবং কালক্রমে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতেও বাস্তবায়িত হতে শুরু করে। ইংরেজের চালু করা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সেই পদ্ধতি আজও অনুসরণ করছে ভারত।