শতবর্ষে সত্যজিৎ, লকডাউনের জেরে ফাঁকা পরে রায় বাড়ি

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

ওয়েব ডেস্ক: করোনার কারণে থমকে গিয়েছে জনজীবন। প্রকৃতি যেন রুখে দাঁড়িয়েছে মানবজাতির বিরুদ্ধে। চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় থাকলে, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর ভাবনা-চিন্তা করতেন হয়তো। তার সৃষ্টিতেও ছাপ পড়ত। লকডাউন নিয়ে ছবি হয়তো বানাতেন না। তবে এই সংকট, দাগ কেটে যেত তার মনে। এসব কি হত তিনি থাকলে? সত্যিই কি তিনি নেই? তিনি আছেন ভক্তদের মনে।

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। ১৯২১ সালের ২ মে কলকাতা শহরের খ্যাতনামা এক বাঙালি পরিবারে জন্মেছিলেন গুণী এই পরিচালক। আজ তার ১০০ তম জন্মদিন।

অন্য বছর জন্মদিনে রায় বাড়িতে বহু লোক যেতেন। ভিড় করতেন, তার সঙ্গে কাজ করেছেন যারা, তার ভক্তরা, এই দিনে সত্যজিৎ বাবুর বাড়ি তাদের অবারিত দ্বার। পথের পাঁচালীর পরিচালককে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হন তার গুণমুগ্ধরা। ১০০ বছরের জন্মদিনে অনেক পরিকল্পনা ছিল। বড় করে উদযাপন করার পরিকল্পনা ছিল। লকডাউনের জেরে সব পরিকল্পনা এখন বৃথা। তবে গৃহবন্দি থাকাকালীন সত্যজিতের পরিবার খুঁজে পেয়েছে তার বহু পুরনো ছবি, নেগেটিভ- যা নিয়ে পড়ে প্রদর্শনী করার ইচ্ছে রয়েছে তাদের। 

রাস্তাঘাট এখন ফাঁকা। সেই সঙ্গে ফাঁকা বিশপ লেফ্রয় রোড। যেখানে আজকের দিনে বসতো চাঁদের হাট। আজ একাকী সেই বিখ্যাত রায়বাড়ি। সেখানে জন্মদিন পালন হচ্ছে আজ, তবে ছোট করে। সত্যজিৎ আজ আমাদের মধ্যে থাকুন আর না-ই থাকুন, পথের পাঁচালী, প্রতিদ্বন্দ্বী, গুপিগাইন বাঘাবাইন, সোনার কেল্লা-র স্রষ্টা চিরকাল থেকে যাবে বাঙালির মননে।

সত্যজিৎ রায়ের জীবন অনেক সংগ্রামের। একই সঙ্গে নামকরা পরিবারের সদস্য তিনি। বাবা সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা কবিতা ও শিশুসাহিত্যের সেরা লেখকদের একজন। সত্যজিৎ রায়ের দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীও ছিলেন একজন নামকরা লেখক, চিত্রকর, দার্শনিক ও প্রকাশক।

মাত্র তিন বছর বয়সে বাবা হারান সত্যজিৎ। মা সুপ্রভা দেবী বহু কষ্টে তাকে বড় করেন। বিশ্বখ্যাত রত্ন সত্যজিৎ বড় হয়ে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতি পড়তে যান। ১৯৪০ সালের দিকে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকবছর পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯৪৩ সালে শান্তিনিকেতন ছেড়ে তিনি কলকাতায় এসে ৮০ টাকা বেতনে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ শুরু করেন।

একই বছর প্রখ্যাত ফরাসি পরিচালক জ্যঁ রেনোয়া তাঁর ‘দ্য রিভার’ চলচ্চিত্রটির শুটিং করতে কলকাতায় আসেন। ‘দ্য রিভার’ ছবিতে রেনোয়ার সহকারীর কাজ করেন তিনি। এই সময় থেকে চলচ্চিত্র-নির্মাতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা শুরু করেন সত্যজিৎ। জানা যায়, ‘দ্য বাই সাইকেল থিফ’ ছবিটি দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।

১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায় তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’ নির্মাণ করেন। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়। ‘পথের পাঁচালী’ মোট ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। এটি কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট’ পুরস্কারও অর্জন করে। এছাড়া তার বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে অপুর সংসার, মহানগর, চারুলতা, সোনার কেল্লা, হীরক রাজার দেশে অন্যতম।

চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে লেখক, প্রকাশক, কাহিনীকার, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক।

সত্যজিৎ রায়  জীবদ্দশায় বহু পুরস্কার পেয়েছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।  ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের সরকার সত্যজিৎ রায়কে বিশেষ সম্মানসূচক পুরস্কার লেজিওঁ দনরে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন। ভারত সরকারের ভারতরত্নসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest