কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের থেকে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে মেয়েদের এই মারণ অসুখ। তাই এই অতিমারির সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অক্টোবর মাস জুড়ে পালন করা হচ্ছে স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস। আমাদের দেশে প্রতি ২ জন স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের মধ্যে ১ জন মারা যান। এর অন্যতম কারণ অসুখটা যখন ডালপালা বিস্তার করে শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বেশিরভাগ মেয়ের তখনই হুঁশ হয়।
সাধারণত মহিলাদের চল্লিশ বছর পেরনোর পর মেয়েদের স্তন ক্যানসারের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেকটা বেড়ে যায়। কিন্তু জানেন কি আমাদের দৈনন্দিন জীবন-যাপনের পদ্ধতিও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
স্তন ক্যানসারের মৃত্যুহার কমছে না তেমন। এর একমাত্র কারণ, দেরিতে রোগ চিহ্নিতকরণ। অসুখটা যে গোড়ায় ধরা পড়ে না অধিকাংশ ক্ষেত্রে, তার জন্য দায়ী এই মারণরোগ সম্পর্কে সচেতনতার অভাবই। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্তন ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য হওয়ার পরেও যে হাজারো মহিলা এই অসুখের বলি হন, তার একমাত্র কারণ, স্তনের অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ডের অস্তিত্ব বুঝতে না-পারা অথবা বুঝেও উদাসীন থাকা। স্তন ক্যানসারের রাশ টানা যাচ্ছে না স্রেফ সচেতনতার জন্য।
এখন প্রশ্ন হল কী দেখে বুঝবেন এই মারণ রোগ আপনার শরীরে বাসা বাঁধছে?
১. কমবেশি সব মহিলাদের স্তনেই লাম্প থাকে। এর মধ্যে কয়েকটি ক্যানসারাস ও কয়েকটি নন-ক্যানসারাস। এই ব্রেস্ট লাম্পগুলি অনেক সময় আন্ডারআর্ম বা কলার বোনের তলাতেও দেখা যায়। এছাড়া স্তনবৃন্তের আশপাশেও এই ধরনের লাম্প থাকে যেগুলি টিপলে শক্ত লাগে এবং অবস্থান পরিবর্তন করে না। এমন কিছু দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রতি দিন স্নানের সময় স্তন ধরে যাচাই করতে হবে কোথাও কোনও লাম্প তৈরি হচ্ছে কি না। ব্যথাহীন লাম্পই বেশি মারাত্মক। এই রোগের ক্ষেত্রে বংশও প্রধাণ্য পায়। এর আগে পরিবারে কেউ আক্রান্ত হলে পরবর্তী জেনারেশনদেক ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যানসার থাকলে ঝুঁকি বেশি। বিএআরসিএ ১, ও বিএআরসি ২, জিন থাকলে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেশি।
আরও পড়ুন: করোনার পর ‘ক্যাট কিউ’! নয়া চিনা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করল ICMR
২. ব্রেস্ট লাম্পগুলি অনেক সময় আন্ডার আর্ম বা কলার বোনের তলায় দেখা যায়। স্তনবৃন্তের আশপাশেও এই ধরনের লাম্প থাকে, যেগুলি টিপলে শক্ত লাগে এবং অবস্থান পরিবর্তন করে না। আমাদের দেশে শহুরে এলাকায় মহিলাদের সব রকমের ক্যানসারের মধ্যে স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন ২৫%-৩২%। ৫০%-এরও বেশি স্তন ক্যানসারে আক্রান্তদের বয়স ২৫-৫০ বছর।
৩. ব্রেস্ট ফিডিং করাচ্ছেন না, অথচ স্তনবৃন্ত থেকে অল্প অল্প জলীয় পদার্থ ক্ষরিত হচ্ছে দেখলে সচেতন হোন। কোনও রকম র্যাশ নেই স্তনে, তবু ইচিং বা চুলকানির মতো অনুভূতি হচ্ছে, এমন কিছু কিন্তু ক্যানসারের লক্ষণ। অনেক সময় এর সঙ্গে নিপ্ল থেকে হালকা হালকা রস নিঃসৃত হয়, স্তনের ত্বকেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। তাই চুলকানির মতো কিছু হলে নিজে থেকে কোনও ক্রিম বা লোশন লাগাবেন না। আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলবেন। ২০১৮-য় দেশে স্তন ক্যানসারের নতুন রোগিণী ছিল ১৪.৫ লক্ষ। ২০২০-য় স্তন ক্যান্সারে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭.৩ লক্ষ।
৪. স্তনবৃন্ত চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া বা স্তনবৃন্তের শেপ অসমান হয়ে যাওয়া ক্যানসারের লক্ষণ, বিশেষ করে যদি ব্রেস্টফিডিং না চলাকালীন অবস্থাতেও এই বিষয়গুলি চোখে পড়ে। সঙ্গীকে বলুন ভাল করে পর্যবেক্ষণ করতে। সামান্য সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৫. স্তনে বিকৃতি বা ফোলা ভাব, স্তন লালচে হয়ে যাওয়া, স্তনে হাত দিলে ব্যথা লাগা এই রোগের লক্ষণ। তবে পিরিয়ডের আগে অনেকের স্তন ভারী হয় ও ব্যথা হয়। এতে ভয়ের কিছু নেই। তবে, স্তনের উপরের ত্বক যদি খসখসে হয়ে গেলে ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ। রাতে শোওয়ার সময় স্তনে ব্যথা বা অন্তর্বাস পরে থাকার সময় ঘর্ষণ বা ছড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হলে চিকিৎসকের শরণ নিন।
আরও পড়ুন: নিয়মিত একটু এলাচ খেলেই এড়াতে পারবেন মারাত্বক কিছু রোগ, জেনে নিন ১৮টি নিরাময়-গুণ