পিরিয়ড বা ঋতুচক্র। সহস্রাব্দ প্রজন্মের আগের প্রজন্মে পিরিয়ড নিয়ে কথা বলাটা বোধ করি পাপের চেয়েও বেশি কিছু ছিল। এরপর যারা এল, তাদের বেশ গুরুগম্ভীর নাম রয়েছে: মিলেনিয়াল জেনারেশন বা জেন ওয়াই। তরুণ প্রজন্মের প্রগতিশীল মনোভাবের কারণে পিরিয়ড যে ট্যাবু নয়, সেটি বর্তমানে প্রায় প্রতিষ্ঠিত সত্য। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও এটিকে স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হিসেবেই বিবেচনা করতে শিখছে। তবে সমাজের সর্বত্র প্রত্যেকের কাছে বিষয়টি সমানভাবে সহজ, স্বাভাবিক বলে এখনও স্বীকৃত হয়নি। এখনও নারীদেরকে ঘরে, কর্মক্ষেত্রে, রাস্তাঘাটে, সহকর্মী বা বন্ধুদের আড্ডায়, গণপরিবহনে পিরিয়ড নিয়ে শঙ্কিত থাকতে হয়, তাদের অস্বস্তির অনুভূতি পুরোপুরি এখনও কেটে যায়নি। যদি জিজ্ঞেস করা হয়, পিরিয়ড নিয়ে আমাদের জ্ঞানের দৌড় কতটুকু- কী বলতে পারব আমরা?
বাঙালি যে অবশ্যই বিজ্ঞানমনস্ক (!) তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। পার্থক্য এটুকুই যে, বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন জ্ঞান অন্বেষণের লক্ষ্যে আর ভেতো বাঙালির কাছে গবেষণা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে চটুল গালগপ্প বা চর্বিত চর্বণ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। পিরিয়ড নামক অসহ্য-যন্ত্রণাকর অভিজ্ঞতার একটি অসাধারণ ইতিবাচক দিক নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।
পিরিয়ড শেষ হওয়ার অব্যবহিত পরের সময়ে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশ কিছু বিষয়ে অধিক দক্ষতা প্রদর্শন করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ দূরত্ব প্রসঙ্গে আসা যাক। দূরত্ব বিষয়ক যেকোনো কিছুতে এই সময়ে নারীরা অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি বিশ্লেষণী আচরণ করতে সক্ষম। তিন সপ্তাহের মাথায় তারা যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনন্য হয়ে ওঠেন, যেমন কোনো ব্যক্তি ভীত হলে সেটি তারা আন্দাজ করতে পারেন দ্রুত। পিরিয়ডের কোনো একটি সময়ে তাদের মস্তিষ্ক অধিকতর দক্ষ আচরণ করতে শুরু করে। কিন্তু কেন?
ডিম্বাশয় পুরো মাস জুড়ে বিভিন্ন পরিমাণে এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন ক্ষরণ করে থাকে। এই দু’টি হরমোনের প্রাথমিক কাজ হলো জরায়ুর প্রাচীরকে দৃঢ় করে তোলা এবং ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গমনের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া। মস্তিষ্কের উপর এসব হরমোনের ওঠানামা তথা পিরিয়ডের প্রভাব কীরকম, তা নিয়ে দু’টি অসাধারণ গবেষণাকাজ পরিচালিত হয়েছে।
পুরুষদের মাঝে ব্রেন ল্যাটেরালাইজেশন বেশি দেখা যায়। অর্থাৎ, যে কোনো একটি কাজে পুরুষরা মস্তিষ্কের যেকোনো এক পাশ ব্যবহার করতে বেশি দক্ষ। অন্যদিকে, নারীদের ক্ষেত্রে ল্যাটেরালাইজেশনের হার যথেষ্ট কম। কোনো স্নায়ু আবেগকে প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষেত্রে নারীদের মস্তিষ্কের দুই পাশই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হরমোনাল লেভেলের কারণে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নারীদের চিন্তায় বেশি নমনীয়তা আসে। সবটা মিলিয়ে ঋতুচক্র নারীদের জন্য কেমন শাপেবর হয়ে গেল না?
আরও পড়ুন: আড়াই হাজারে কেনা বাটি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ কোটি টাকায়!