আজ শবে বরাত!পালনের আগে জেনে নিন দিনটির ইতিহাস ও গুরুত্ব

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

ওয়েব ডেস্ক: শবে বরাত ক্ষমার চাওয়ার রাত। ক্ষমা পাওয়ার রাত। আরবি ক্যালেন্ডারের সাবান মাসের ১৪-১৫ এর মাঝামাঝি পালিত হয় শবে বরাত। যদিও পবিত্র কুরআন কিংবা অথেন্টিক(সহীহ) হাদিসে কোথাও আলাদা করে শবে বরাতের কথা স্পষ্ট করে লেখা নেই। শবে বরাত নামটি ফার্সি। শব মানে রাত। বরাত মানে ভাগ্য। এমনিতে মুসলিমরা বহু ফার্সি শব্দ ব্যবহার করেন। তাঁরা অনেকেই জানেন না যে এগুলি ফার্সি। উদাহরণ হিসাবে নামাজ এবং রোজার কথা তো বলাই যায়।আসলে আরব থেকে ইসলাম পাড়ি দিয়েছিল ইরানে। প্রতিটি দেশ ও অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে। আরব থেকে ইসলাম যখন ইরানে ঢুকল তখন ‘আল্লাহ’ ‘খোদা’ হয়ে গেলেন। ফার্সিতে আল্লাহর সমার্থক খোদা। ইরানি সুফিরা পরবর্তী কালে ইসলামকে তাদের আধ্যাত্মিক চেতনা ও নিজেদের সংস্কৃতি দিয়ে বিশ্বের নানা ভূখণ্ডে নিয়ে গিয়েছিলেন । ভারতে সুলতান ও মুঘল জমানায় ফার্সি আদালতের ভাষা ছিল। ফলে ফার্সি ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা দেশে। তাই হিন্দি, উর্দু, এবং বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে বহু ফার্সি শব্দ। মজার কথা হল এই ফার্সির মধ্যেও বহু আরবি ঢুকে পড়েছিল। আরবরা যেহেতু ইরান দখল করে নিয়েছিল, তাই তাদের ভাষাতেও আরবি প্রভাব পড়েছিল। একসময় ফার্সি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাব ভারতীয় উপমহাদেশে আরবি প্রভাবের থেকে অনেক বেশি পড়েছিল।

শবে বরাত সেই অর্থে মুসলিমদের ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠান নয়। অন্তত পবিত্র কুরআন তা বলছে না। খুব স্পষ্ট হাদিস এক্ষেত্রে নেই। কিন্তু বহু বছর ধরে মুসলিমদের একটা অংশ এই রাতকে আপন করে নিয়েছেন। বলা ভালো খানিকটা আনুষ্ঠানিক করে নিয়েছেন। উপাসনার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া- দাওয়াকেও তারা ধর্মীয় অনুষঙ্গ করে তুলেছে। যেমন মোমবাতি জ্বালান কিংবা কবরস্তানে যাওয়াকেও অনেকে আবশ্যিক করে তুলেছেন। যা ইসলামের প্রত্যক্ষ নির্দেশ নয়। স্বাভাবিক ভাবেই এতদিন যারা মসজিদে রাত জেগে প্রার্থনা করেছেন এই কথাগুলি তাদের ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে। তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

কেউ বলতেই পারেন ওঁরা খারাপ তো কিছু করছেন না। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছেন, মোমবাতি জ্বলাচ্ছেন। হালুয়া-রুটি বিলি করছেন এতে দোষের তো কিছু নেই। দেখুন, ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস তা আমরা সবাই জানি। আমরা খুশি করে ২৩ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা দিবস পালন করলে তা কি কেউ সমর্থন করবেন ? বরং অনেকেই বিরক্ত হবেন। এটিকে কেউই দেশ ভক্তির বহিঃপ্রকাশ হিসাবে মেনে নেবে না। যাঁরা প্রকৃত অর্থে ইসলাম মেনে চলেন তাদের বক্তব্য এক্ষেত্রে খানিকটা তেমনই।

Pakistan Muslims taraweeh AFP

এশিয়ার দেশগুলি মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ,আফগানিস্তান, শ্রীলংকা, আজারবাইজান এবং তুরস্কে শবে বরাত পালিত হয়। সেন্ট্রাল এশিয়ার উজবেকিস্তান,তাজিকিস্তান,কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কিরগিচ্স্তানে শবে বরাত পালিত হয়। ইরাক ও ইরানেও তা পালিত হয়। আরবে বিশেষ করে সৌদিতে শবে বরাত পালিত হয়না বললেই চলে। তবে আরব ভূ খণ্ডে যেখানে সুফি প্রভাব রয়েছে সেখানে শবে বরাত পালিত হয়। এটা জেনে অনেকেই বলবেন তাহলে এত লোক এতকাল ধরে করছে সবই কি বাতিল? আসলে ভোট ছাড়া সংখ্যা সবক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়। সতীদাহের বিরুদ্ধে রামমোহন যখন দাঁড়িয়েছিলেন তিনি একাই ছিলেন। তবুও বন্ধ হয়েছিল সতীদাহ।ঘোর অন্যায়ের বিরুদ্ধে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) একাই দাঁড়িয়েছিলেন। জয় তাঁরই হয়েছিল। ব্রাহ্মণ্যবাদীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে একা গৌতম বুদ্ধই দাঁড়িয়েছিলেন। জয় হয়েছিল তাঁরই।

অনেকের ধারণা সুফিদের মাধ্যমে পার্সিয়ান সংস্কতি ধর্মের রূপে মুসলিমদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এটা হয়ে থাকে। দুর্গাপুজোর কথা বেদে রয়েছে, নাকি উপনিষদে – তা কোনও নিষ্ঠাবান হিন্দু তা বলতে পারবে না। এমনকি মহাকাব্যের অংশ গীতাতেও দূর্গা পুজোর কথা নেই। কেউ জিজ্ঞাসাও করে না কবে থেকে দূর্গা পুজো এমন সার্বজনীন হয়ে উঠলো। কিন্তু তা ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে। অথচ এর পালনের ইতিহাস প্রাচীন নয়। এখানে আলোচ্য বিষয় যেহেতু শবে বরাত তাই ভিন্ন প্রসঙ্গে যাওয়া ঠিক হবে না। মূল কথায় আসা যাক।

আসলে মহালয়ার মধ্যে যেমন পুজোর আগমনী বার্তা থাকে তেমনি শবে বরাতের মধ্যে থাকে পবিত্র রোজার পদধ্বনী। মুসলিমরা মনে মনে শুরু করে দেন রোজার প্রস্তুতি। এই রোজা শব্দটিও আরবি নয়। এটিও ফার্সি শব্দ। যে কোন ধর্ম কেবল আধ্যাত্মিকতা কিংবা ধর্মীয় কঠোর অনুশাসনে চলে না। তার জন্য উৎসব জরুরী। তাতে ধর্মপ্রাণ মন নরম হয়। শবে বরাতের রাতে পরম করুনাময় আল্লাহ সবার ভাগ্য লেখেন। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকে রাতভর প্রার্থনায় কাটিয়ে দেন। তাদের অনুতপ্ত বোধ অশ্রুধারা হয়ে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। যে অপরারাধের জন্য কারো কাছে মুখ ফুটে ক্ষমা চায়তে পারেননি সে অপরাধ আল্লাহর কাছে কবুল করে কাঁদেন তাঁরা । ছেলে পুলেরা মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং বাজি পুড়িয়ে আনন্দ করে।

এটি ইসলামের অনুশাসন নয় তা জেনেও নিজেদের এই খুশি থেকে বেঁধে রাখতে পারে না বেচারিরা । তাতেই বা কি? প্রদীপ, মোমবাতি কিংবা টর্চের আলোয় যে করোনা দূর হবে না প্রধানমন্ত্রী মোদী কি তা জানতেন না ? তারপরও গোটা দেশকে আলোর উৎসবে মাতিয়ে তুললেন তিনি।

eid uld fitr

যারা শবে বরাতে রাত জাগবেন, তাদের অনুরোধ এটিকে আবশ্যিক করে তুলবেন না। নামাজ পড়ুন, দান করুন, হালুয়া বানান, ক্ষমা চেয়ে চোখের জল ফেলুন , কেউ বাধা দেবে না। দয়া করে এখন কবরস্তানে ভিড় করার চেষ্টা করবেন না। আর জোর করে মসজিদে জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করবে না। মনে রাখবেন, মসজিদ কেবল সমবেত প্রার্থনার জায়গা। আল্লাহর সৃষ্টি ছড়িয়ে রয়েছে নিখিল বিশ্বজুড়ে। তাই তিনি কেবল মসজিদে বন্দি একথা মুসলিম হিসাবে মেনে নেওয়া বাস্তবচিত নয়।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest