ওয়েব ডেস্ক: কফির দোকানে বসে আড্ডার ফাঁকে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়ার সময় হ্যাশট্যাগে বোঝানো হয়, আজ একটি বিশেষ দিন। সামাজিকমাধ্যমে ভেসে বেড়ায় শুভেচ্ছা। প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয় এভাবেই। নতুন নতুন বার্তা থাকে প্রতিবছরই। দিনটি সাজানো হয় বেগুনি বা পার্পল রঙের আভায়। এ রঙেই যেন নারীর কাজ ও চিন্তার শক্তি বার্তা হয়ে প্রতিধ্বনি তোলে।
সারা বিশ্ব জুড়ে ৮ মার্চ দিনটি পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে। পৃথিবীর কোনও অংশে এটি উদযাপনের দিন, কোথাও বা প্রতিবাদের। দিনটির পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের ইতিহাস। অনেক দেশে তাই আজও দিনটি পরিচিত আন্তর্জাতিক নারী শ্রমিক দিবস হিসেবেই। ১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতো কারখানার নারী শ্রমিকেরা। রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবাদে অধিকাংশ সময়েই যেটা দেখা যায়, এক্ষেত্রেও তাই-ই হলো। সেই মিছিলে চলল সরকারি লেঠেল বাহিনীর দমনপীড়ন।
আরও পড়ুন: বিশাল বড় কেক কেটে উদযাপন, জন্মদিনে চিনে নিন অচেনা-অজানা শ্রদ্ধা কাপুরকে
১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হল। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ, জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এর পর ১৯১০-এ ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে। এখানেই প্রথম ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দিলেন ক্লারা জেটকিন।
সিদ্ধান্ত হয়, ১৯১১ থেকে নারীদের সম অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। বলাই বাহুল্য, এই দিনটি উদযাপনের জন্য এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল নিয়মিত। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ মার্চ মাসের এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
পরে ১৯৯৫ সালে বেইজিং ঘোষণাপত্র এবং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশনের সময় ১৮০ টি সরকার একটি ঐতিহাসিক রোডম্যাপ স্বাক্ষর করেছিল। সেখানে এমন একটি বিশ্বের অঙ্গীকার করা হয়েছিল যেখানে প্রত্যেক মহিলার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ, শিক্ষা লাভ, আয় অর্জন এবং নিজের মনের মতো করে হিংসা ও বৈষম্য থেকে মুক্ত জীবনযাপন করার অধিকার অর্জনের কথা বলা হয়।
আরও পড়ুন: লাল শাড়িতে মিথিলা, ম্যাচিং ধুতি-পাঞ্জাবিতে সৃজিত, মুখার্জি দম্পতির রিসেপশন পার্টিতে চাঁদের হাট…
পৃথিবীর অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তার মধ্যে রয়েছে – আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি বিসাউ, এরিট্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়া। এ ছাড়া, চিন, ম্যাসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার, নেপালে এই দিনটিতে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারি ছুটি পেয়ে থাকেন।
‘আমি এই সমতার প্রজন্ম: নারীর অধিকার উপলব্ধি করি’—এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের স্লোগান এটা।