আজ বিশ্ব মশা দিবস। ১৮৯৭ সালে ২০ অগস্ট স্যার রোনাল্ড রস আবিষ্কার করেন যে, অ্যানোফিলিস মশাই ম্যালেরিয়া ছড়ায়। অ্যানোফিলিস মশার অন্ত্রে ম্যালেরিয়ার পরজীবী আবিষ্কার করেন তিনি। তাঁকে স্মরণ করে ১৯৩০ সাল থেকে ২০ অগস্ট বিশ্ব মশা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিশ্ব মশা দিবস ২০২১-এর থিম হল ‘রিচিং দ্য জিরো ম্যালেরিয়া টার্গেট’। মশা বাহিত রোগগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক, এ কারণে প্রতিবছর বহু মৃত্যু হয়। হু-এর মতে, বিশ্বে প্রতি বছর ম্যালেরিয়ার ২১ কোটি ৯ লক্ষ মামলা সামনে আসে। তার মধ্যে মৃত্যু হয় ৪ লক্ষেরও বেশি ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের। অন্য দিকে ৯.৬ কোটি ডেঙ্গির মামলা সামনে আসে, যার মধ্যে ৪০,০০০ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন না। তাই এমন পরিস্থিতিতে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি হয়ে পড়ে।
বর্ষাকালের সময় মশাবাহিত রোগের পরিসংখ্যান দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বর্ষাকাল মশাদের প্রজননের সময়। অতএব সময় মশার উপদ্রব দেখা যায় বেশি। তাই মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করা উচিত—
১. সঠিক পোশাক নির্বাচন করুন- বর্ষাকালে বা যে কোনও সময় মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে ফুল স্লিভ জামাকাপড় পরুন। টাইট জামাকাপড় এ সময় না-পড়াই ভালো। আবার ত্ব উন্মুক্ত থাকলে সেখানে মশা কামড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে মসকিউটো রেপেলেন্ট ক্রিম লাগানো যেতে পারে।
২. স্প্রে ব্যবহার করুন- মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য কীট স্প্রে ব্যবহার করুন। এছাড়াও প্রাকৃতির উপায় মশা তাড়াতে হলে লেমন বাম, তুলসী, ল্যাভেন্ডার ও মেহেন্দি গাছ বাড়িতে রাখতে পারেন। এ ছাড়াও লেমনগ্রাস, পুদিনা, নীলগিরি এসেনশিয়াল অয়েলও শরীরে লাগাতে পারেন।
৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন- বাড়ি ছাদে, বাগানে বা বাড়ি সংলগ্ন স্থানে জল জমা হতে দেবেন না। কারণ এই জলেই প্রজনন করে মশা। তা ছাড়াও অপ্রয়োজনে দরজা, জানালা খোলা রাখবেন না।
আরও পড়ুন: Homecare Tips: ওয়াশিং মেশিন দীর্ঘ দিন ভাল রাখতে চান? এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন
৪. লক্ষণ দেখা দিলে সাবধান হন- বর্ষাকালে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। জ্বর, ঠান্ডা লাগা, গাঁটে ব্যথা, বমির মতো লক্ষণ দেখা গেলে বিলম্ব করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ও চিকেনগুনিয়ার মতো রোগ বিপজ্জনক এবং মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
এই সমস্ত সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি মশা তাড়ানোর জন্য মসকিউটো রেপেলেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে অনেকেরই বাজারজাত মসকিউটো রেপেলেন্টে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে বাড়িতেই কিছু এমন সামগ্রী রয়েছে, যা মশা তাড়াতে সাহায্য করবে।
১. জোয়ানের ধোঁয়া- এই ধোঁয়া শুধু মশাই নয়, বরং বাড়ির অন্যান্য কীটপতঙ্গও দূর করে। এর জন্য জ্বলন্ত ঘুটের ওপর জোয়ান রেখে দিন। তার পর ঘরের কোনও এক কোণায় এটি রেখে কিছুক্ষণের জন্য দরজা, জানালা বন্ধ করে দিন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মশা সেখান থেকে পালাবে।
২. কর্পূরের ধোঁয়া- ঘুটে না-থাকলে জোয়ানের পরিবর্তে কর্পূরের ধোঁয়াও দেখাতে পারেন। একটি প্রদীপে কর্পূর রেখে বন্ধ ঘরে জ্বালিয়ে দিন। কর্পূরের ধোঁয়ায় মশা দূর হবে।
৩. লেবু ও লবঙ্গ- মশা লেবুর গন্ধ সহ্য করতে পারে না। আধ চুকরো লেবুতে ৪-৫টি লবঙ্গ পুতে দিন। মশার উপদ্রব যেখানে বেশি, সেখানে এটি রাখুন। কিছু ক্ষণ পর লেবুর গন্ধে অসহ্য হয়ে মশা সেখান থেকে দূর হবে।
৪. বিয়ার- বিয়ারের গন্ধে মশা পালিয়ে যায়। বিয়ারে জল মিশিয়ে ঘরে ছেটালে মশার উপদ্রব কমতে পারে।
৫. রসুন- রসুনের তীব্র গন্ধ মশা সহ্য করতে পারে না। তাই মশা তাড়াতে রসুন ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য ৩-৪ কোয়া রসুন থেতো করে জলে ফুটিয়ে নিন। এর পর বাড়ির আনাচে-কানাচে সেই জল ছেটান। মশা দূর করার জন্য রসুনের জল একটি কার্যকরী উপায়।
আরও পড়ুন: শুধু দাঁত পরিষ্কার নয়, গৃহস্থালির কাজেও সাহায্য করে টুথপেস্ট! জানুন কিছু ব্যতিক্রমী ব্যবহার