#নয়াদিল্লি: দুর্ভাবনা সঙ্গী করেই পৃথিবী থেকে রওনা হয়ে গিয়েছে চন্দ্রযান-২। চাঁদে লাফিয়ে পড়ার সময়েই হবে তার আসল পরীক্ষা।
চাঁদের কক্ষপথে যান তো আগেও পাঠিয়েছে ভারত। এ বার পরীক্ষা চাঁদে নামার। উপর থেকে কিছু ছেড়ে দিলে তা আছাড় খেয়ে পড়বে। এ ক্ষেত্রে আলতো করে নামাতে হবে ল্যান্ডার বিক্রমকে। তার পেটে রয়েছে রোভার প্রজ্ঞান। এরা দু’টিতে মিলে অনেক জটিল খোঁজখবর চালাবে চাঁদে। তাদের অক্ষত রেখে নামাতে হবে। যেটিকে বলা হয় ‘সফট ল্যান্ডিং’। আগে যা কখনও করেনি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। ফলে এটাই এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে।
ইসরো সূত্রের খবর, প্রজ্ঞানকে পেটে নিয়ে চাঁদের মাটি ছুঁতে ১৫ মিনিট সময় নেবে ল্যান্ডার বিক্রম। ইসরোর প্রাণপুরুষ বিক্রম সারাভাইয়ের নামে যার নামকরণ করা হয়েছে। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর রাতে (রাত ১২টার পরে হওয়ায় সরকারি হিসেবে যা ৭ সেপ্টেম্বর) ওই ১৫ মিনিটই বলে দেবে, ভারতের দূত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস তৈরি করতে পারবে কি না!
দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানেই প্রথম বার ল্যান্ডার ও রোভার তৈরি করেছে ইসরো। সামান্য ভুলচুক হলে সব চেষ্টা জলে যাবে। ফলে ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবনের উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক। ওই ১৫ মিনিট নিয়ে তাঁর উদ্বেগ আজ ফুটে উঠেছে তাঁর কথাতেও। বাহুবলীর যাত্রা সফল হওয়ার ঘোষণা করে বলেছেন, ‘‘যাত্রা সবে শুরু। শেষের ১৫ মিনিট কিন্তু কাঁপুনি ধরানো।’’ তবে ইসরোর আধিকারিকদের অনেকেই অবশ্য এখনই ওই ১৫ মিনিট নিয়ে ভাবতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, সবে তো যাত্রা শুরু। অবতরণের আগেও বহু বাধা পেরোতে হবে। তাই আগামী ৪৮ দিনই স্নায়ুর চাপ নিয়ে কাটবে তাঁদের।
ইসরো সূত্রের খবর, অবতরণের ৪ দিন আগে অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে বিক্রম। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় ৪ দিন ধরে পাক খাবে সে। সে সময় তার গতি থাকবে ঘণ্টায় ৬১২০ কিলোমিটার। যা কিনা পৃথিবীর দ্রুততম বুলেট ট্রেনের গতির থেকে ১৪ গুণ বেশি। এখান থেকেই শুরু হবে অবতরণ প্রক্রিয়া। ওই গতি এবং উচ্চতা থেকে সাড়ে ১০ মিনিটের মধ্যে ৭.৪ কিলোমিটার উচ্চতায় নেমে আসবে সে। গতি কমে দাঁড়াবে ঘণ্টায় ৫২৬ কিলোমিটার। তার পরের ৩৮ সেকেন্ডে সে নেমে আসবে ৫ কিলোমিটার উচ্চতায়, গতিবেগ কমে হবে ঘণ্টায় ৩৩১ কিলোমিটার। পরবর্তী ৮৯ সেকেন্ডে ল্যান্ডার আরও গতি কমাবে। ৪০০ মিটার উচ্চতা কমিয়ে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে এসে পৌঁছবে সে।
এর পরবর্তী ১২ সেকেন্ড তার বুদ্ধির খেলা। তখন সে থমকে দাঁড়াবে। পরপর তথ্য সংগ্রহ করবে। চাঁদের মাটিতে কীভাবে সে লাফিয়ে নামবে, কতটা দূরত্ব থেকে লাফালে ঝাঁকুনিতে ক্ষতি হবে না সব বিচার তার নিজের। সে পর্ব সেরে পরবর্তী ৬৬ সেকেন্ডে সে নেমে আসবে ১০০ মিটারের মধ্যে। সেখানে আরও ২৫ সেকেন্ড থামবে সে। ইসরো জানিয়েছে, বিক্রমের শরীরে এমন কিছু প্রোগ্রামিং করা আছে যার জেরে তার শরীরই তখন জানিয়ে দেবে কোথায় নামতে হবে। যে দুটি গহ্বরের মধ্যবর্তী সমতল ভূমি ঠিক করা আছে, সেখানেই সে নামতে পারবে কি না। শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ঠিক থাকলে এবার সিদ্ধান্ত নেবে বিক্রম।
পরিস্থিতি ঠিক থাকলে এর ৬৫ সেকেন্ডের মধ্যে চাঁদের পিঠের ১০ মিনিট দূরত্বে নেমে আসবে বিক্রম। এতক্ষণ সে নামছিল আড়াআড়িভাবে, ঘুরতে ঘুরতে। এই জায়গায় সে নামবে সোজাসুজি। তবে এর বিকল্প পথও তৈরি আছে। যদি অন্য পথে তাকে নামতে হয়, তবে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের হিসেব ধরলে, ৪০ সেকেন্ডে তাকে নামতে হবে ৬০ মিনিট দূরত্বে। পরের ১০ মিনিট দূরত্ব নামবে ২৫ সেকেন্ডে। এইটুকু যাত্রাপথ খুব সুখের নাও হতে পারে। তাই গতিবেগ এখানে সে নিজেই নির্ধারণ করবে।
তারপর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১০ মিনিট দূরত্ব থেকে ১৩ সেকেন্ডে চাঁদের মাটিতে আলতো করে লাফিয়ে পড়বে সে। যেখানে রি-টেকের কোনও সুযোগ নেই। তখন তার গতিবেগ শূন্য। ল্যান্ডারের পায়ের তলার সর্ষে তখন কথা বলবে। ১০ মিনিট দূরত্ব পর্যন্ত পাঁচটি ইঞ্জিনই সক্রিয় থাকবে। চাঁদের মাটির স্পর্শ পেলে চার পায়ে লাগানো সেনসর থামতে বলে দেবে ইঞ্জিনগুলিকে।
চাঁদে নামার পরে ১৫ মিনিট জিরোবে বিক্রম। বুঝে নেবে, সব ঠিকঠাক আছে কি না। চাঁদের প্রথম ছবিটি তুলে ইসরোকে পাঠাবে বিক্রম। সেই ছবিই বলে দেবে, জয় হল ভারতের। ঘন্টা চারেক পর তার গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসবে প্রজ্ঞান রোভার। তারপর শুরু হবে চাঁদের পাহাড় আবিষ্কারের পালা।