‘ফুটবে এবার পদ্মফুল, বাংলা ছাড়ো তৃণমূল…!’ আগরতলায় বাবুল সুপ্রিয়র সভার মাঝেই বেজে উঠল এককালে তাঁরই গাওয়া গান। তার তাতেই কার্যত অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির (BJP) থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বাবুল।
শুক্রবার ত্রিপুরায় পৌছে গেছেন বাবুল সুপ্রিয়। সেখানে পৌছেই বাবুল জোর কদমে নেমে পড়েন তৃণমূলের হয়ে প্রচারে। শুক্র সন্ধ্যায় বাবুল সুপ্রিয় প্রচার সারছিলেন আগরতলার দূর্গা চৌমহনীতে। সভায় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাংসদ সুস্মিতা দেব, তৃণমূল নেত্রী সায়নী ঘোষ, নেতা সুবল ভৌমিক সহ অনেকেই। একটি পথসভার আয়োজন করা হয়েছিলে সেখানে। এরই মধ্যে সায়নী ঘোষ যখন বক্তৃতা রাখতে শুরু করেন, তখনই একটা টেম্পো গাড়িতে একাধিক মাইক লাগানো অবস্থায় বিজেপির প্রচার গাড়ি যাচ্ছিল। সেখানেই বাজানো হচ্ছিল, বাবুল সুপ্রিয়র গাওয়া গান, “এই তৃণমূল আর না, আর না” গানটি।
তখনই সায়নী ঘোষকে বলতে শোনা যায়, আরে এই গাড়ি এখানে কেন? যাই হোক বাজাও বাজাও। মানুষ আমাদের সাথেই আছে। সেই গানের তালে শরীর দোলাতেও দেখা যায় সায়নীকে। তার পরেই বাবুলের দিকে তাকান সায়নী। চেয়ারে বসে থাকা বাবুল উঠে দাঁড়িয়ে সায়নীর হাত থেকে মাইক নিয়ে বলেন, “সায়নী দারুণ জোশের সাথে কথা বলে। আপনারা সবাই আমার মতো ওঁর কথা শুনবেন৷ তবে আমার ভালো লাগছে আমরা গ্রাস রুট থেকে শুরু করেছি। পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে পারছি। ভেবে দেখুন কতটা অহঙ্কার থাকলে বা যারা বড় নেতা তারা দলের কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করলে এরকমটা হয় আপনারা ভাবুন। যে ছেলেটা এই গানটা তৈরি করেছিল, সেই দলটা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। দিদির সাথে তৃণমূল কংগ্রেসে চলে এসেছে৷ জানি না বেশি এক্সারসাইজ করলে কি হয়? মাথায় মাসল গজায়। আমার গান আমার সামনেই বাজাচ্ছে। আরে ভাই ম্যায়নে জো কমিটমেন্ট কর দিয়া, উসকে বাদ ম্যায়নে খুদ কো ভি নেহি শুনতা হু। আমি এই গানটাও শুনছি না। আমি তৃণমূলের হয়ে আরও ভালো গান বানাব। বাজতে দাও আমার গান। এটা আসলে acknowledgment দলকে, লোকসভার আসন ছেড়ে দিয়ে আমি মমতা-অভিষেকের সাথে কাজ করছি। ভাই তোরা আরও ছয় বার এই গানটা বাজা।”
বাবুলের এই প্রতিক্রিয়ায় অবশ্য উপস্থিত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বাবুল অবশ্য ত্রিপুরা পৌছে মনে করিয়ে দিয়েছেন, প্রায় ২৭ বছর ধরে তার সাথে ত্রিপুরার সম্পর্ক আছে৷ ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি আসছেন ত্রিপুরাতে।
ত্রিপুরায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করে তৃণমূল। সেখানেও যোগ দিয়েছিলেন বাবুল। বাবুলের বক্তব্য, “এখানে যে ভাবে গুন্ডামি হচ্ছে, সিসিটিভি না রাখা, ভিভিপ্যাট না রাখা। এগুলো ভোট বিধির উপেক্ষা ছাড়া কিছুই নয়। এগুলো চলতে পারে না। বাইক নিয়ে গুন্ডারা ছেলেদের ভয় দেখাচ্ছে, প্রার্থীদের হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ আর সরকারের মধ্যে যে সমীকরণ এটা খুব খারাপ। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।”
তাঁদের মূলত দু’টি দাবি। প্রথমটি হল, ভিভিপ্যাট এবং সিসিটিভিতে যথাযথ ভাবে নজরদারি চালাতে হবে। না হলে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সন্ত্রাস বা কারচুপির অভিযোগ বেশি করে উঠবে। একই সঙ্গে তৃণমূলের অভিযোগ, যে ভাবে লাগাতার সন্ত্রাস চলছে ত্রিপুরায়, তাদের প্রার্থী-কর্মিসমর্থকদের উপর হামলা হচ্ছে তা রুখতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। ত্রিপুরায় বিরোধী যে সমস্ত প্রার্থীরা রয়েছে, তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতেও এদিন সরব হয় তৃণমূল।