সময়টা ভালো যাচ্ছে না ফেসবুকের। এর আগে প্রায় ৭ ঘণ্টা বন্ধ থাকার জেরে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়েছে ফেসবুককে। আর এবার ফেসবুকের ‘হুইসেল ব্লোয়ার’ ফ্রান্সেস হাউজেন মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে অভ্যন্তরীণ একটি রিপোর্ট পেশ করলেন।
হাউজেন নিজের অভিযোগের পক্ষে যে অভ্যন্তরীণ নথিপত্র জমা দিয়েছেন তার মধ্যে এমন নথি রয়েছে যাতে উল্লেখ করা আছে যে ফেসবুক কীভাবে আরএসএস পরিচালিত অ্যাকাউন্টগুলির পোস্ট প্রোমোট করেছে। হাউজেন বলেন, ‘আরএসএস ব্যবহারকারী, গোষ্ঠী এবং পেজগুলি ভীতি প্রদর্শনকারী, মুসলিম-বিরোধী কনটেন্টগুলি হিন্দুপন্থী জনগোষ্ঠীকে ভিএন্ডআই উদ্দেশ্য নিয়ে লক্ষ্য করে। মুসলমানদের ‘শুয়োর’ এবং ‘কুকুর’ -এর সাথে তুলনা করে অসংখ্য অমানবিক পোস্ট ছিল এবং কুরআনে পুরুষদের তাদের পরিবারের সদস্যদের ধর্ষণ করার আহ্বান জানায় বলে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।’ তবে এই সব কন্টেন্ট মডারেট করার কেউ ছিল না বলে অভিযোগ হাউজেনের। হাউজেনের দাবি করেন যে ভারতে বাংলা ভাষার কনটেন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য বাঙালি মডারেটরের ঘাটতি ছিল।
দাবি করা হয়েছে ঘৃণামূলক কনটেন্টের মাত্র ০.২ শতাংশ পোস্ট সরানো হয় ফেসবুকের অটোমেটেড সিস্টেমের দ্বারা। মুসলিমবিরোধী পোস্টকে প্রায় কখনও ‘ফ্ল্যাগ’ করা হয়নি ফেসবুকে।ফেসবুকের সিভিক ইন্টেগ্রিটি গ্রুপের প্রোডাক্ট ম্যানেজার ছিলেন ফ্রান্সেস হাউজেন। গত মে মাসে সংস্থাটির চাকরি ছাড়েন তিনি। মঙ্গলবার ক্যাপিটল হিলে ফ্রান্সেস হাউজেন বলেন, ‘ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামকে নিরাপদ করার উপায় ভালো করেই জানে সংস্থা। কিন্তু প্রয়োজনীয় সেসব পরিবর্তন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আনতে চায় না। কারণ তারা (ফেসবুক) মানুষের নিরাপত্তার আগে ব্যবসায়িক লাভকে বেশি প্রাধান্য দেয়।’
সেই সঙ্গে রিপোর্টে ফ্রান্সেস দাবি করেছেন, ফেসবুকের তরফে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল, তাতে দেখা গিয়েছিল যে পশ্চিমবঙ্গের ৪০ শতাংশ প্রথমসারির ‘ভিউ পোর্ট ভিউস’ (ভিপিভি) সিভিক পোস্টারই ভুয়ো বা অসত্য। একটি ক্ষেত্রে এমনই একটি অসত্য পোস্টে গত ২৮ দিনে ৩০ মিলিয়নের বেশি ভিউ হয়েছিল (সবথেকে বেশি ‘ভিউ পোর্ট ভিউস’)। তবে কোন সময়ের মধ্যে সেই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, রাজনৈতিক ধারণা গড়ে তুলতে বিভিন্ন লোকজন সিভিক কনটেন্ট ছড়িয়ে দেন। যাঁরা ‘অথেন্টিক’। সেই বার্তাই ঘুরেফিরে এসে পুরো বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
যদিও রিপোর্টে ফ্রান্সেস দাবি করেছেন, ভুয়ো খবরের বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও অধিকাংশ জিনিসপত্র ফেসবুকের নজরে আসে না বা কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বাংলা এবং হিন্দিতে লোকজনের অভাবের জন্য সেরকম কনটেন্টের বেশিরভাগটাই ফেসবুকের নজরে আসে না বা কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে দাবি করেছেন ফেসবুকের সিভিক ইন্টেগ্রিটি গ্রুপের প্রাক্তন প্রোডাক্ট ম্যানেজার।