Site icon The News Nest

নাগাল্যান্ডে সেনার গুলিতে হত নিরাপরাধ গ্রামবাসী, প্রশ্নের মুখে শান্তি আলোচনা

naga

সেনার কাণ্ডজ্ঞানহীন ভূমিকায় তপ্ত নাগাল্যান্ড। মন জেলার ওটিং গ্রামের ঘটনায় ফুঁসছে সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্নের মুখে নাগা শান্তি আলোচনা। মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করে কবে ফের শান্তি আলোচনা সম্ভব তা নিয়েই সন্দিহান মধ্যস্থতাকারী গোষ্ঠীর সদস্যরা।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মহলের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, “এটা নাগাল্যান্ড পুলিশের অভিযান ছিল না। ঘটনার দায় স্থানীয় পুলিশ বা রাজ্য সরকারের উপর চাপিয়ে ক্ষোভ প্রশমন করা যাবে না। এই ঘটনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানে মারাত্মক ভুলের দরুণ ঘটেছে। ফলে আবারও নাগা জনগোষ্ঠী বনাম ভারত রাষ্ট্রের সংঘাতের তত্ত্ব জোরাল হবে। এর ফলে জঙ্গি সংগঠনগুলির হাত সাময়িকভাবে হলেও শক্ত হবে। তবে কেন্দ্র যদি দ্রুত শক্ত হাতে ঘটনার মোকাবিলা করে তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।”

আলোচনাপন্থী নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ এনএনপিজি মন জেলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ। সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য জি জিমোমি বলেছেন, ‘ইন্দো-নাগা শান্তি আলোচনা শেষ। এখন ভারত সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার কী পদক্ষেপ করছে, তাদের মনোভাব দেখে পরবর্তী পন্থা ঠিক হবে। শান্তি আলোচনার জন্য কেন্দ্রকে নাগাল্যান্ড থেকে আস্পা প্রত্যাহার করতে হবে। এই আইন না থাকলে রবিবারের ঘটনা ঘটতো না।’

নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, অসম ও মায়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে নাগা স্বাধীনভূমি বা ‘গ্রেটার নাগালিম’ গড়ার ডাক বহুদিনের৷ এই দাবিতে অনেক দিন ধরেই জঙ্গি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন (NSCN)৷ সংগঠনটি বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর মুইভা গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে কেন্দ্র৷ ২০১৫ সালে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটির সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে মোদি সরকার। কিন্তু সমস্ত আলোচনা থমকে আছে সংগঠনটির দু’টি দাবির উপর। সেগুলি হচ্ছে নাগাল্যাণ্ডের জন্য পৃথক পতাকা এবং পৃথক সংবিধান। যা কিছুতেই মানতে নারাজ দিল্লি।

কয়েকদিন আগেই ডিমাপুরে নাগা জঙ্গিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও নেইফু রিও। ওই বৈঠক সম্পর্কে বলতে গিয়ে অসমের (Assam) মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁকে উলফার (পরেশপন্থী) মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গেও আলোচনায় বসার সবুজ সংকেত দিয়েছেন। এনএসসিএন (আইএম)-এর প্রধান থুইংগালেং মুইভার সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন হিমন্ত ও রিও। যদিও বৈঠকে ঠিক কী কথা হয়েছে, তা জানা যায়নি।

বিগত কয়েকবছরে এনএসসিএন-এর বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীকে আলোচনার টেবিলে আনতে সক্ষম হয়েছে মোদি সরকার। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, খাঙ্গও কন্যাক ও নিকি সুমি গোষ্ঠী। এর দু’জনেই একসময় আলোচনা বিরোধী গোষ্ঠী এনএসসিএন (খাপলাং)-এর সদস্য ছিল। খাপলাংয়ের মিলিটারি কমান্ডার থাকায় মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলে নিকি সুমির যথেষ্ট দাপট রয়েছে। বলে রাখা ভাল, নাগাল্যান্ডে শান্তি ফেরাতে মুইভা গোষ্ঠী ছাড়াও NSCN (NK), NSCN(R), NSCN (K-Khango) and NSCN (Niki Sumi) গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করেছে কেন্দ্র। কিন্তু ওটিংয়ের ঘটনায় জনরোষের কথা মাথায় রেখে তারাও কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াবে। যাতে শান্তি আলোচনা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

 

Exit mobile version