ভারত দরিদ্র এবং চরম অসাম্যের দেশ। ‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন দেখানো মোদি সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে এমনটাই দাবি করা হয়েছে ফ্রান্সের প্যারিস স্কুল অফ ইকোনোমিক্স-এ অবস্থিত ‘ওয়র্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাব’ -এর পেশ করা বিশ্ব অসাম্য রিপোর্টে।
সম্প্রতি দারিদ্র, অর্থনৈতিক অসাম্য ও লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ফ্রান্সের প্যারিস স্কুল অফ ইকোনোমিক্স-এ অবস্থিত ‘ওয়র্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাব’। এই রিপোর্ট তৈরিতে অন্যান্য অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন ফ্রান্সের অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি ও সংস্থাটির সহ-পরিচালক লুকাস চান্সেল। রিপোর্টের মুখবন্ধে নোবেলজয়ী দুই অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার ডাফলো লিখেছেন, বিশ্বের যে সব দেশে অসাম্য চরমে, ভারত এখন তার মধ্যে পড়ছে।
রিপোর্টে সাফ উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের ১০ শতাংশ ভারতের মোট জাতীয় আয়ের ৫৭ শতাংশ রোজগার করে। নীচের সারির ৫০ শতাংশ অর্থাৎ গরিব-নিম্ন মধ্যবিত্তদের দেশের মোট আয়ের ১৩ শতাংশ নিয়েই জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের মধ্যবিত্তরা আদতেই গরিব। যাঁদের গড় সম্পদ মাত্র ৭ লক্ষ ২৩ হাজার ৯৩০ টাকা যা দেশের মোট আয়ের ২৯.৫ শতাংশ মাত্র। সেই তুলনায় দেশের প্রথম সারির ১০ শতাংশ এবং শীর্ষের ১ শতাংশ ভারতের ৬৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ আয় করে।
২০২১ সালে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয়ের গড় বার্ষিক মোট আয় ২ লক্ষ ৪ হাজার ২০০ টাকা। বার্ষিক আয়ে দেশের নীচুস্তরের ৫০ শতাংশ মানুষ গড়ে ৫৩ হাদার ৬১০ টাকা রোজগার করে। এবং শীর্ষের ১০ শতাংশ তার কুড়ি গুণ বেশি রোজগার করে। যা প্রায় ১১ লক্ষ টাকার বেশি গড়ে।
‘ওয়ার্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাব’-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে লিঙ্গ বৈষম্যও চরমে। মোট আয়ে মহিলা শ্রমিক-কর্মীদের ভাগ মাত্র ১৮ শতাংশ। এই হার গোটা বিশ্বের মধ্যেই নিম্নতম। পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতেই মহিলাদের আয়ের ভাগ ১৫ শতাংশ। চিন বাদ দিয়ে এশিয়ার দেশগুলিতে এর হার ২১ শতাংশ। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, করোনা মহামারী ও কেন্দ্রের অর্থনৈতিক সংস্কার যেমন বেসরকারিকরণের জেরে আর্থিক বৈষম্য বাড়ছে। দ্রুত নীতি পালটে পদক্ষেপ না করলে ভবিষ্যতে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য চরম রূপ ধারণ করবে।
নীতি আয়োগের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বহুমুখী দারিদ্র সূচকে ভারতের প্রত্যেক চারজনের মধ্যে একজন এই ক্যাটাগরিতে পড়েন। বিহারে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা (রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৫১.৯১ শতাংশ) অত্যন্ত দরিদ্র ক্যাটাগরিতে পড়েন। তারপরেই রয়েছে ঝাড়খণ্ড (৪২.১৬ শতাংশ) এবং উত্তরপ্রদেশ (৩৭.৭৯ শতাংশ)।