শ্রীনগরে সাজানো পুলিশি সংঘর্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা। বৃহস্পতিবার সরকারি ভাবে এই নির্দেশিকা জারি হয়েছে।
সোমবার রাতে শ্রীনগরের হায়দরপোরায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চার জঙ্গির মৃত্যু হয় বলে সরকারি তরফের দাবি। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন রামবন জেলার বাসিন্দা আমির মাগরে। আমিরের বাবা আব্দুল লতিফ মাগরে ২০০৫ সালে এক জঙ্গিকে পাথর ছুড়ে নিকেশ করেছিলেন। এখনও এলাকার জঙ্গি-বিরোধী গ্রামবাসী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য তিনি। লতিফের দাবি, তাঁর ছেলের সঙ্গে কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগ ছিল না। শ্রীনগরের একটি দোকানে কাজ করতেন আমির। তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে সাজানো সংঘর্ষে খুন করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট গভর্নর জানিয়েছেন, অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায়বিচার হবে। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘হায়দরপোরায় পুলিশি সংঘর্ষের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলাশাসক পর্যায়ের এক প্রশাসনিক আধিকারিকের নেতৃত্বে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে রিপোর্ট জমা পড়বে এবং সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন ফের নিরপরাধ নাগরিকদের জীবনরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। অঙ্গীকার করছে, কারও প্রতি অন্যায় হবে না।’’
সোমবারের ‘সংঘর্ষে’ নিহতদের মধ্যে পাকিস্তানি জঙ্গি হায়দর রয়েছে বলে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে। অন্য দুই নিহতের নাম আলতাফ বাট এবং মুদাসির গুল। আলতাফ ওই বাণিজ্যিক ভবনের মালিক। তাঁর ওই ভবনে একটি দফতর ছিল। মুদাসির দন্তচিকিৎসক ও ব্যবসায়ী। হায়দরপোরার ওই ভবনে তিনি একটি ‘কম্পিউটার সেন্টার’ চালাতেন। প্রথমে তাঁদের জঙ্গি গোষ্ঠীর সহযোগী হিসাবে চিহ্নিত করলেও পরে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের তরফে জানানো হয় গুলিযুদ্ধের মাঝে পড়ে ওই দুই নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।
আলতাফ এবং মুদাসিরের পরিবারের সদস্যেরা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি অবস্থান বিক্ষোভে বসতে চাইলেও পুলিশ তাতে বাধা দেয়। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর তাঁকে গৃহবন্দি করা হয় বলে অভিযোগ। জম্মু ও কাশ্মীরের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, চাকরিতে পদন্নোতি আর বাহবা পাওয়ার লোভে নিরীহ গ্রামবাসীকে জঙ্গি সাজিয়ে খুনের অভিযোগ নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে আগেও উঠেছে উপত্যকায়। চলতি বছরেও জানুয়ারিতেও শ্রীনগরে তিন নিরীহ যুবককে সাজানো সংঘর্ষে খুনের অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে।