কলকাতায় এ বার তৈরি হতে পারে ‘সেমিকন্ডাক্টর কারখানা’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এক বিবৃতি জারি করে এ কথা জানানো হয়েছে।
চতুর্দেশীয় অক্ষ বা ‘কোয়াড’ সদস্য রাষ্ট্রগুলির বৈঠকে যোগ দিতে আমেরিকায় গিয়েছেন মোদী। তার মাঝেই দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকেই কলকাতায় ‘সেমিকন্ডাক্টর কারখানা’ তৈরির সম্ভাবনাময় দিক নিয়েও আলোচনা হয়েছে দু’পক্ষের। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এর ফলে দুই দেশেরই কর্মসংস্থান তৈরি হবে। সেই সুবাদেই কলকাতার বুকে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের(FDI) দরজা খুলে যেতে চলেছে।
এই কারখানার জন্য যে জমির প্রয়োজন হবে সেই জমি Global Foundries’র হাতে তুলে দিতেও প্রস্তুত থাকছে রাজ্য সরকার। ৪০ একর জমি এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন হতে পারে মনে করে রাজ্য সরকার রাজারহাটের পাশাপাশি নৈহাটির Electronics Manufacturing Cluster-এ সেই জায়গা রেখে দিচ্ছে।
মার্কিন সফরে গিয়ে কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন নরেন্দ্র মোদি। ভারত-মার্কিন যৌথ উদ্যোগে তৈরি হবে এই প্ল্যান্ট। এই ঘোষণায় বেজায় খুশি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। নিজেকে গর্বিতবোধ করছেন। তিনি লিখেছেন, কলকাতার জন্য ঐতিহাসিক বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের বিষয়ে আমি গর্বিত ও সৌভাগ্যবান মনে করছি। কলকাতার বুকে এই কারখানা তৈরি হলে বিরাট কর্মসংস্থানের পাশাপাশি তৈরি হবে দূষণমুক্ত দেশ। উন্নতি হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও।
‘সেমিকন্ডাক্টর কারখানা’ তৈরি হলে কলকাতা বা বাংলা কোঠায় লাভবান হবে? প্রথম লাভ হবে এটাই যে, বিশ্বের চিপ উৎপাদন মানচিত্রে পাকাপাকি জায়গা করে নেবে কলকাতা তথা বাংলা। সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে বিশ্বের দরবারেও Global Competence Center হিসাবে উঠে আসবে এই শহর ও রাজ্য। দ্বিতীয় লাভ, অবশ্যই কয়েক হাজার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, Global Foundries যে কারখানা এখানে করতে চাইছে তা আদতে Semiconductor Fabrication Plant যা বেশি সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারে এবং তার ওপর ভর দিয়ে বেশ কিছু অনুসারী শিল্পও গড়ে উঠতে পারে। ঠিক যেমনটি সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানার ক্ষেত্রে ধরা হয়েছিল।
তৃতীয় লাভ, একলপ্তে ৬০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আসতে চলেছে এই প্রকল্পের হাত ধরে। সবটাই প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ, যা বাংলার বুকে এখন ভীষণ ভীষণ প্রয়োজন ছিল। এর ফলে বিশ্বমঞ্চে বাংলার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। চতুর্থত, Semiconductor Fabrication Plant গড়ে তোলার প্রস্তাব রাখাই হচ্ছে জাতীয় সুরক্ষা, পরবর্তী প্রজন্মের টেলিকমিউনিকেশন ও গ্রিন এনার্জির বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য। সেক্ষেত্রে সেখানে জোর দেওয়া হবে Advanced Sensing, Communication আর Power Electronics’র ওপর যা কলকাতা ও বাংলার বুকে তথ্যপ্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের দরজা খুলে দেবে।