রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির মাথায় বসানো রয়েছে বিজেপি-র লোক, আরটিআই জবাবে উঠে এল তথ্য

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

নরেন্দ্র মোদীর সরকারের আমলে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাধীনতা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই প্রশ্ন তুলে আসছেন বিরোধীরা। কেন্দ্রের তরফে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও, এ বার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি (পিএসইউ)-র মাথাতেও গেরুয়া আধিপত্য ধরা পড়ল। কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ দেশের ৬৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বোর্ডের ডিরেক্টরদের মধ্যে অন্তত ৮৬ জনের সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ উঠে এল।

আরও পড়ুন : হাওয়ালা কাণ্ডে ‘মিথ্যা’ বলেছেন ধনখড়, অভিযুক্তদের মুক্তির প্রমাণ চাইলেন সাংবাদিক

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির মাথায় যে ডিরেক্টররা রয়েছেন, তাঁরা কতটা স্বাধীন, কতটা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, তা নিয়ে আলোচনা চলে আসছে বহু দিন ধরেই। নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়েও কম বিতর্ক নেই। এই নিয়োগপ্রক্রিয়া সংশোধন করা নিয়ে মঙ্গলবারই বৈঠক রয়েছে মার্কেট রেগুলেটর সিকিয়োরিটিজ এবং এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়ার। তার আগেই দেশের সিংহ ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে গেরুয়া সংযোগ উঠে এল।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর তরফে সম্প্রতি তথ্য জানার আইনে (আরটিআই) রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির অধিকর্তাদের সম্পর্কে বিশদ তথ্য চেয়ে আবেদন জানানো হয়। তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ দেশের ১৪৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অধিকর্তা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, ৯৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মাথায় ১৭২ জন স্বাধীন ডিরেক্টর রয়েছেন। এর মধ্যে ৬৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কমপক্ষে ৮৬ জন ডিরেক্টরের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে বিজেপি-র।

এই সংস্থাগুলির মধ্যে অধিকাংশই ব্লু-চিপ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, গত তিন বছর ধরে যাদের বার্ষিক ব্যবসা ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই সংস্থাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (ভেল), ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড, স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (সেল), হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড, পেট্রোপণ্য এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের অধীনস্থ গেল, পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড, শিপিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড, রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেড, হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেডের মতো সংস্থা।

উত্তরপ্রদেশ বিজেপি-র সহ-কোষাধ্যক্ষ সদস্য মণীশ কপূর ২০২০-র ৩০ জানুয়ারি ভেল-এর ডিরেক্টর নিযুক্ত হন। সংস্থার অন্য দুই ডিরেক্টর, প্রাক্তন জাতীয় আহ্বায়ক রাজেন্দ্র শর্মা উত্তরপ্রদেশ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের নিয়ে বিজেপি-র যে বিশেষ সেল রয়েছে, তার প্রাক্তন আহ্বায়ক ছিলেন। রাজকমল বিন্দল ১৯৯৬ সাল থেকে বিজেপি-র সদস্য। ছোট থেকে সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রাজেন্দ্র আরলেকর। ১৯৮৯ সালে বিজেপি-তে যোগ দেন তিনি। গোয়া বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার এবং সেখানকার প্রাক্তন মন্ত্রীও তিনি। তিনিই এখন ইন্ডিয়ান অয়েলের মাথায়। ছত্তীসগঢ় বিজেপি-র প্রাক্তন বিজেপি সহ-সভাপতি, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বিধায়ক, লতা উসেন্দিও ইন্ডিয়ান অয়েলের ডিরেক্টর।

সেল-এর ডিরেক্টর এন শঙ্করাপ্পা এখনও কর্নাটক বিজেপি-র কার্যনির্বাহী সদস্য। এক সময় রাজ্যের বিধানপরিষদের সদস্য এবং অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের চেয়ারপার্সনও ছিলেন। হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের ডিরেক্টর বিজেপি-র হয়ে কেরল বিধানসভা ভোটে প্রতিদ্ব্ন্দ্বিতাও করেন। গেইল-এর এআর মহালক্ষ্মী তামিলনাড়ু বিজেপি-র সহ-সভাপতি। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান তিনি। ২০০৯ সালে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়া বিজয় তুলসিরামজি জাধাও শিপিং কর্পোরেশনের প্রধান।

একই ভাবে এনএলসি ইন্ডিয়া, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড, এনবিসিসি (ইন্ডিয়া) লিমিটেড, হিন্দুস্তান কপার লিমিটেড, এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া, গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, ইন্ডিয়ান ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড, ওয়েস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড-এর মাথাতেও বিজেপি-র লোকজন বসে রয়েছেন। যদিও তাঁদের দাবি, রাজনৈতিক যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে দায়িত্ব হাতে পাননি তাঁরা। গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স-এর ডিরেক্টর বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘গার্ডেনরিচের কর্মী হিসেবেই সকলকে নিয়ে বৈঠক করি, বিজেপি সদস্য হিসেবে নয়।’’

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির মাথায় যাঁরা রয়েছে, তাঁরা আদৌ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আজকের নয়। দু’বছর আগে এ নিয়ে সরব হয়েছিল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স। বলা হয়, ‘‘রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাগুলিতে স্বাধীন ডিরেক্টর নিয়োগের প্রক্রিয়াটাই আর স্বাধীন নেই। অভিজ্ঞতার নিরিখে নিয়োগের চেয়ে, প্রাক্তন আইএএস অফিসার এবং রাজনৈতিক যোগ রয়েছে যাঁদের, তাঁরাই প্রাধান্য পান।’’

আরও পড়ুন : এক গাছে ১২১ জাতের আম! অবাক হচ্ছেন? জেনে নিন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest