নয়াদিল্লি: করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশের প্রত্যেক মানুষ এগিয়ে এসেছেন। একে অপরের সাহায্য করেছেন। সেজন্য সারা বিশ্বে করোনার বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই নিয়ে আলোচনা হবে বলে বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৫ মার্চ থেকে ভারতজুড়ে লকডাউন করা জারি হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল তা উঠে যাওয়ার কথা থাকলেও সংক্রমণ বৃদ্ধির হার দেখে ফের তার সময়সীমা বৃদ্ধি করে কেন্দ্র। তারপর থেকে কেটে গিয়েছে ১২ দিন। শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি মাত্র ৬ শতাংশ। যদিও রবিবার সকালেই আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৬ হাজার। মৃত্যু হয়েছে ৮২৪ জনের। তবে সুস্থও হয়েছেন ৫৮০৪ জন। এই অবস্থার মধ্যে রবিবার সকালে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে নিজের বক্তব্য পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রতি মাসের শেষ রবিবার রেডিয়োতে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে দেশবাসীকে নিজের ‘মনের কথা’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার সেই অনুষ্ঠান হল। আগের বার একাধিক রাজ্য থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে। প্রায় আধ ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে এ দিন অবশ্য পুরো সময় নিজেই কথা বলেছেন।
এ দিন তিনি বলেন, ‘এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়ছে সারা বিশ্ব। ভবিষ্যতে এই মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হবে। এর বিভিন্ন ঘটনা স্মরণ করা হবে। আমি নিশ্চিত ভারতের জনগণচালিত এই লড়াই (সারা বিশ্বে) আলোচিত হবে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে, একে অপরকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন মানুষ। গরীবদের খাওয়ানো থেকে রেশনের বন্দোবস্ত করা, লকডাউন পালন করা, দেশীয় প্রযুক্তিতে স্বাস্থ্য সামগ্রী উৎপাদন করা – হাতে হাত ধরে পুরো দেশ একসঙ্গে একইদিকে একই লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’
করোনা মোকাবিলায় যেভাবে দেশবাসী নিজেদের ভূমিকা পালন করছেন, তারও প্রশংসা করেন মোদী। তাতে যোগ্যসংগত করছে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্য। মোদীর কথায়, ‘করোনার বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই সত্যিই জনগণ চালিত। যৌথভাবে তা (যুদ্ধ) লড়ছে মানুষ ও প্রশাসন। আমরা ভাগ্যবান যে, প্রত্যেক নাগরিকের সঙ্গে সারা দেশ এগিয়ে আসছে এবং সেনার মতো যুদ্ধে লড়ছে।তাঁদের এই লড়াইকে আমি মাথা ঝুঁকিয়ে প্রণাম করছি আমি।’
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১৯৯০ জন সংক্রমিত,দেশে করোনা আক্রান্ত ছাড়াল ২৬ হাজার, মৃত ৮০৯
এই সংক্রামক ভাইরাস কী ভাবে মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছে, এবং করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে কী ভাবে পাল্টে যাবে, তাও উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসাক্ষেত্র, অফিস, শিক্ষাকেন্দ্র বা স্বাস্থ্যক্ষেত্র— সর্বত্রই করোনা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি চলছে। আর এই সময়ে আমরা প্রত্যেক মানুষের মূল্য বুঝতে পারছি। বাড়ির কাজের লোক, দোকানের কর্মী, গাড়ির চালক— সবার গুরুত্ব বোঝা যাচ্ছে।’’
এদিনের অনুষ্ঠানে দেশবাসীকে মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তার কথা আরও একবার মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমাদের মাস্ক পরতে হবে। এটা আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। সভ্য সমাজের প্রতীক হয়ে উঠেছে মাস্ক। এটা এক নতুন বাস্তব। মাস্কের ব্যাপারে আমাদের ধারণা আরও বদলে যাবে। আমরা বুঝতে পারছি রাস্তায় থুতু ফেলা খারাপ। এই অভ্যাস আমাদের ছাড়তে হবে।”
অক্ষয় তৃতীয়ার সকালে মন কি বাত-এ মোদী বলেন, এই মহামারী বিভিন্ন উৎসব পালনের রীতিই বদলে দিয়েছে। তিনি বলেন, “আজ আমরা অক্ষয় তৃতীয়া পালন করছি। রমজান মাস শুরু হবে। গত বছর রমজানে আমরা ভাবিইনি এবার এরকম কিছু হতে পারে। আমাদের সংযত হয়ে রমজান পালন করতে হবে। ইদ-ও এমনভাবেই পালন করব আমরা। আসুন সবাই মিলে প্রার্থনা করি যাতে ইদের আগেই গোটা পৃথিবী করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়।”
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দেশবাসীকে আরও একবার উদ্বুদ্ধ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা যেন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী না হই। আমরা যেন না ভাবি, আমাদের বাড়ি, অফিস বা এলাকাতে কোভিড ঢুকতে পারবে না। তাই আমাদের কখনও অসতর্ক হলে চলবে না। দু’গজ দূরত্ব সবসময় বজায় রাখতে হবে।”
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ডিএ-তে কোপ, সরব মনমোহন- রাহুল