ইস্তফা যে দিতে চলেছেন, তা কার্যত নিশ্চিত ছিল। কখন দেবেন, তা নিয়ে ধন্দ ছিল। শেষপর্যন্ত যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শুক্রবার রাতে ইস্তফা দিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তিরথ সিং রাওয়াত। যিনি চার মাসও মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে থাকলেন না। তিরথ সিং রাওয়াতের আগে উত্তরাখণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত। কিন্তু তার বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও নানা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি সামলাতে তাঁকে সরিয়ে দেয় বিজেপি। তাঁর জায়গায় বসানো হয় তিরথ সিং রাওয়াতকে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে জল্পনার মধ্যে শুক্রবার রাতের দিকে রাজভবনে যান তিরথ। সেখানে রাজ্যপাল বেবি রানি মৌর্যের হাতে নিজের ইস্তফাপত্র তুলে দেন। যিনি গত ১০ মার্চ ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতের পরিবর্তে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন।
সূত্রের খবর, শনিবার দুপুর তিনটেয় বিজেপির সদর দফতরে যে পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে, সেখানেই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঠিক করা হবে। সেজন্য নরেন্দ্র সিং তোমরকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হচ্ছে। নাম গোপন রাখার শর্তে এক বিজেপি নেতা বলেছেন, ‘পর্যটনমন্ত্রী সতপাল মহারাজ, উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ধন সিং রাওয়াত-সহ কমপক্ষে চারজনের নাম বিবেচনা করছে হাইকমান্ড। প্রথমজন কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে এসেছেন। দ্বিতীয়জন আরএসএস করে তৃণমূলস্তর থেকে রাজনীতিতে উঠে এসেছেন।’
আরও পড়ুন: আজ থেকে নতুন নিয়ম SBI, Axis ব্যাঙ্কসহ একাধিক ব্যাঙ্কে, জেনে নিন ঝটপট…
রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, আগামী বছর মার্চে উত্তরাখণ্ড বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। হাতে মাত্র কয়েক মাস পড়ে আছে। তাই বিজেপির হাতে যে ৫৬ জন বিধায়ক আছেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়া হবে। কারণ বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সাধারণ কোনও উপ-নির্বাচনের পক্ষে নয় নির্বাচন কমিশন। এমনিতেও তিরথের ক্ষেত্রে সেই একই সমস্যা হয়েছিল। ত্রিবেন্দ্রের পরিবর্তে পাউরি গারোয়ালের সাংসদকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসিয়েছিল বিজেপি। নিয়ম অনুযায়ী, ছ’মাসের মধ্যে তাঁকে কোনও বিধানসভা আসন থেকে জিতে আসতে হত। যে মেয়াদ আগামী ১০ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছিল। কমিশনের এক আধিকারিকের কথায়, সেই বিশেষ আবেদনটাই আসেনি উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বা বিজেপির তরফ থেকে। ফলে আদৌও বিজেপি তিরথকে রাখতে চাইছিল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সেই বিষয়টাকেই হাতিয়ার করেছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক বিজয় সারস্বত বলেন, ‘বিজেপি নেতাদের স্বার্থের জন্য উত্তরাখণ্ডের ভবিষ্যৎ ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে এবং রাজ্যের মানুষ ভুগছেন। রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কখনও ভাবে না বিজেপি। ওরা শুধুমাত্র যে কোনও মূল্য ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়।’
ইস্তফা দেওয়ার পর তীরথ বলেছেন, ‘‘করোনার কারণে এখন উপনির্বাচন সম্ভব নয়। রাজ্যে সাংবিধানিক সঙ্কট হতে পারে। সে কথা মাথায় রেখে নৈতিক কারণে ইস্তফা দিয়েছি।’ মুখে নৈতিকতার কথা বললেও, উত্তরাখণ্ডে বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ বিবাদ থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন তীরথ। যে জন্য ত্রিবেন্দ্র রাওয়াতকে সরিয়ে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিল বিজেপি, সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি বলেই তাঁকে সরানো হয়েছে বলে খবর।
আরও পড়ুন: ডেল্টা স্ট্রেন রুখতে সক্ষম, ৭৭.৮ শতাংশ কার্যকর কোভ্যাক্সিন! দাবি ভারত বায়োটেকের