একরাম কবির ‘ঢাকা ট্রিবিউন’-এ একটি নিবন্ধে প্রশ্ন তুলেছেন ভারত কবে বাংলাদেশকে ‘আন্ডারডগ’ ভাবা বন্ধ করবে ? নিবন্ধটি ‘ঢাকা ট্রিবিউন’ থেকে তুলে প্রকাশ করে স্ক্রল ডট ইন।তাতে খানিকটা অভিমান রয়েছে ভারতের প্রতি। আইএমএফ বলেছে পারক্যাপিটা জিডিপিতে বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের আগে। এই খবর বহু ভারতীয় হজম করতে পারছে না। তাছাড়া সোশ্যাল সাইটে তারা বাংলাদেশের এমন উন্নয়ন নিয়ে মস্করা করছে। বাংলাদেশের এই উন্নয়ন ভারতের বহু মানুষকে মানসিকভাবে কষ্ট দিচ্ছে বলে মনে করেন একরাম।
বাংলাদেশের কাছে ক্রিকেটে হেরে গেলে ভারতীয়রা সেটা কোনোমতেই মেনে নিতে পারেন না। তারা মনে করেন বিশ্বের যেকোনো দেশের কাছে হারা ‘জায়েজ’। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে নয়। ক্রিকেটের ধারাভাষ্যকার হিসাবে একসময় আবির্ভাব হয়েছিল মন্দিরা বেদির। বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে দেবার পর তিনি কিরকম প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন তা দিয়ে একরাম তাঁর লেখা শুরু করেছেন। তাঁর লেখার মোদ্দা কথা হল এতবছর পরও বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের মানসিকতার বদল হয়নি। অথচ বাংলাদেশ বরাবর ভারতের মিত্র দেশ। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান বাংলাদেশ অস্বীকার করে না।
আরও পড়ুন : ভোটে জেতালেই বিহারবাসীকে বিনামূল্যে করোনা টিকা! সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য নিয়েও রাজনীতি বিজেপির
কিন্তু তাই বলে একটা স্বাধীন দেশকে কোনও ভাবে খাটো মনে করা ঠিক না। ভারত একটা বিশাল দেশ। তাঁর জনবসতি বিশাল। ভারত একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। পারক্যাপিটা জিডিপিতে ভারতের ভারতের আগে বাংলাদেশের অবস্থান। ক্ষুধা সূচকেও বাংলাদেশের পিছনে ভারতের অবস্থান।
অথচ ভারতে শিল্পপতিরা দিন দিন ‘দানবিক ধনী’ হচ্ছেন। একই সঙ্গে ভারত জুড়ে বাড়ছে ধন বৈষম্য। এগুলি অবশ্য একরাম লেখেননি। এই লেখাটি একরামের লেখার অনুবাদ নয়। তবে তাঁর নিবন্ধ যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলেছে তা নিয়ে আলোচনা।
একরাম লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা বহু বাংলাদেশী অকপট স্বীকার করে।অথচ বহু ভারতীয় বাংলাদেশিদের অসফল হিসাবেই দেখতে চায়। তারা চায় ভারতের অনুগ্রহের পাত্র হিসাবে থাকুক বাংলাদেশ। তাদের আবার সাবলম্বী হবার কি আছে ? এই দেশটার কিসসু হবে না। এরা পিছনেই পরে থাকবে।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতীয়দের এই মানসিকতা অত্যন্ত বেদনাদায়ক বলে লিখেছেন নিবন্ধকার। একই সঙ্গে তিনি লিখেছেন তাঁর দেশেও কিছু মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব যে নেই তা নয়। কিন্তু তাবলে ভারতকে তারা কোনোদিন পিছিয়ে পড়া দেশ বলে মনে করে না। ভারতের উন্নয়নে তারা কষ্ট পায় না।
ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে একটা বড় টাকা রেভেনিউ পায়। বাংলাদেশ দেশ থেকে বহু মানুষ ভারতে চিকিৎসা করতে যান। বিদেশ থেকে যত মানুষ ভারতে চিকিৎসা করাতে আসেন তার বেশিরভাগই বাংলাদেশী। 2019 এর নভেম্বরের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছে ১৬.৬৭ বিলিয়ন ডলার।
ভারতে চিকিৎসা করতে যাওয়া প্রতি ৩ জন বিদেশী রোগীর মধ্যে ১ জন বাংলাদেশী। 2017এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে তখন রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৬০,০০০ জন। যার মধ্যে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬৫,০০০। বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে ৩৪৩ মিলিয়ন ডলারের স্বাস্থ্য পরিষেবা কেনে। কলকতার কয়েকটি বাজার টিকিয়ে রাখে বাংলাদেশিরা। তারপরও তাদের উন্নয়নে খুশি না হয়ে এমন দুঃখ কেন। এই দুঃখ কি ভারতের মত ঐতিহ্যশালী দেশকে মানায়? প্রশ্ন তুলেছেন নিবন্ধকার।