করোনা হানা দেওয়ার আগে গত বছর নভেম্বরে চীনের উত্তরের স্বায়ত্তশাসিত ইনার মঙ্গোলিয়ায় দু’জনের শরীরে নিউমোনিয়াগ্রস্ত প্লেগ ধরা পড়ে। সেই মঙ্গোলিয়াতেই সম্প্রতি ফের নতুন করে থাবা বসিয়েছে বিউবোনিক প্লেগ।ই রোগের থেকে মানুষকে সতর্ক করতে ইতিমধ্যেই তৃতীয় পর্যায়ের সতর্কতা জারি হয়েছে সেখানে।
স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, সময় থাকতে রাশ টেনে না ধরলে, করোনার মতো এই প্লেগও মহামারির আকার নিতে পারে। গত ১ জুলাই সে দেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জিনহুয়ার তরফে জানানো হয়, ইনার মঙ্গোলিয়ার খোভডের একটি হাসপাতালে ২৭ বছরের এক যুবক ও তাঁর ১৭ বছরের ভাইয়ের বিউবোনিক প্লেগ ধরা পড়েছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আক্রান্তু দু’জন পার্বত্য ইঁদুর অর্থাৎ মারমটের মাংস খেয়েছিলেন। দু’টি পৃথক হাসপাতালে আইসোলেশনে রেখে ওই দু’জনের চিকিৎসা চলছে। তাঁদের সংস্পর্শে আসা আরও ১৪৬ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সেই নিয়ে হইচইয়ের মধ্যেই শনিবার বায়ান্নুরের একটি হাসপাতালে আরও এক জন সন্দেহভাজন বিউবোনিক প্লেগ আক্রান্তের হদিশ মেলে।
আরও পড়ুন : একঘেয়েমি কাটাতে দেদার যৌনতা! কোয়ারেন্টাইনেই লাফিয়ে বাড়ল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা
বিউবোনিক প্লেগকে মধ্য যুগে বলা হত ব্ল্যাক ডেথ। অত্যন্ত ছোঁয়াচে এই রোগ মূলত ছড়ায় ইঁদুর, কাঠবেড়ালি জাতীয় প্রাণী থেকে। আক্রান্ত মাছি কামড়ালে এই রোগ হতে পারে। এর মাধ্যমে প্লেগ ব্যাসিলাস, ওয়াই পেসটিস শরীরে ঢুকে যায় আর লসিকা নালী দিয়ে বাহিত হয়ে চলে যায় লসিকা গ্রন্থিতে, সেখানে নিজের ক্লোন তৈরি করে। লসিকা গ্রন্থি তখন ফুলে যায়, শুরু হয় ব্যথা। এর নাম বিউবো।
এই রোগের অ্যাডভান্সড স্টেজে লসিকায় ঘা হয়ে যায়, ভরে যায় পুঁজে।তবে মানুষ থেকে মানুষে এই রোগের সংক্রমণ বিশেষ দেখা যায় না। ব্যাকটিরিয়া ফুসফুসে পৌঁছলে বিউবোনিক প্লেগ নিউমোনিক প্লেগের চেহারা নিতে পারে।”হু” জানিয়েছে, এই অসুখে আক্রান্ত রোগীর সময় মতো চিকিৎসা না হলে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হতে পারে।
প্লেগের মধ্যে সব থেকে বিপজ্জনক এই নিউমোনিক প্লেগ। কাশির মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। বিউবোনিক প্লেগে মৃত্যুর হার ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ কিন্তু নিউমোনিক প্লেগের এখনও কোনও চিকিৎসা নেই। তাই তা সব থেকে ভয়াবহ। তবে ঠিক সময়ে ধরা পড়লে বিউবোনিক ও নিউমোনিক- দুই ধরনের প্লেগ থেকেই সেরে ওঠা সম্ভব। সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক প্লেগ সারাতে পারে, তবে রোগ দেখা দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তা দিতে হবে। কারণ এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে অত্যন্ত দ্রুত বেগে। নিউমোনিক প্লেগ দেখা দিলে রোগীকে অবশ্যই আইসোলেশনে রাখতে হবে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তাঁর কাছাকাছি আসতে হবে পিপিই পরে।
আচমকা ধুম জ্বর উঠে যাওয়া এই রোগের লক্ষণ। মাথায় ও গোটা শরীরে যন্ত্রণা হতে পারে, দুর্বলতা থাকতে পারে। বমি হতে পারে, থাকতে পারে বমি বমি ভাব। এছাড়া লসিকা গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে, শুরু হতে পারে ব্যথা।
নিউমোনিক প্লেগের লক্ষণ দ্রুত দেখা দেয়, এমনকী সংক্রমণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। শ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা শুরু হয়, দম নিতে কষ্ট হয়, দেখা দেয় কাশি। থুতুতে রক্ত উঠতে পারে। মৃতদেহ থেকেও ছড়াতে পারে প্লেগ। যাঁরা দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করছেন তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মৃতদেহের তরলে তখনও অবস্থিত ব্যাকটিরিয়া ছড়াতে পারে রোগ।
আরও পড়ুন : বিচিত্র এই দেশ ! জাল কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট মিলছে মাত্র আড়াই হাজার টাকায়