Site icon The News Nest

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান, সাতসকালেই আটক সু চি-সহ বহু রাজনীতিক, এক বছরের জন্য দেশের দখল নিল সেনা

aung san suu kyi ap

গুজব রটছিল গত দুই দিন ধরে। অবশেষে তাতে সিলমোহর লাগল। ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে সরকার-সেনার দ্বন্দ্বের জেরে ক্ষমতা হারালেন মায়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। এদিন মায়ানমারের মিলিটারির অধীন টিভি চ্যানেল মিয়াওয়াডি টিভিতে ঘোষণা করা হয় যে এক বছরের জন্য দেশের রাশ নিজেদের হাতে তুলে নিল সেনাবাহিনী।

আজ থেকেই সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই দেশের শীর্ষনেতাদের আটকের ঘটনাকে সামরিক অভ্যুত্থান বলেই মনে করছেন কূটনৈতিকরা।বিগত এক সপ্তাহ ধরেই দেশের মিলিটারি বাহিনীর সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়েছিল। গত নভেম্বরে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে গত সপ্তাহেই সেনাবাহিনী জানিয়েছিল তাঁরা ক্ষমতা দখল করে নিতে পারে। এরপরই আজ সকালে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রাসি দলের মুখপাত্র মিও নিউন্ট জানান, ভোরবেলায় সু কি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।

সংবাদসংস্থার কাছে তিনি বলেন, “ওনাদের আটক করা হয়েছে বলে শুনেছি। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে সেনাবাহিনী দেশের শাসনব্যবস্থা দখল করে নিয়েছে। তবে দেশের মানুষকে বলব উত্তেজনার বশে কিছু করবেন না, আইন ও শান্তি বজায় রেখে চলুন।” এরপরই মিলিটারি বাহিনীর তরফ থেকেও নিজেদের টেলিভিশন চ্যানেলে ঘোষণা করা হয় যে দেশে একবছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। দখল করে নেওয়া হয়েছে সিটি হলও।

সু কিকে আটক করার ঘটনার পরই অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার তরফে এই ঘটনার বিরোধিতা করে এনএলডি নেতাদের মুক্তির দাবি তোলা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার তরফে বলা হয়, “ফের একবার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নিয়েছে মিলিটারি”। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি একটি বিবৃতি জারি করে বলেন, “মায়ানমারের রাষ্ট্রব্যবস্থায় বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টার বিরোধিতা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদি এই পদক্ষেপ শীঘ্রই প্রত্যাহার না করা হয়, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে”।

আরও পড়ুন: শেষ হল ট্রাম্প যুগ, ৪৬ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন Joe Biden, উপ রাষ্ট্রপতি হলেন কমলা হ্যারিস

সেনাবাহিনীর হাতে রাষ্ট্রপ্রধানদের আটক হওয়ার ঘটনা সামনে আসার পরই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বন্ধ সমস্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট পরিষেবাও সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। রাজধানীতে যোগাযোগের জন্য যাবতীয় ফোন নম্বরও “আনরিচেবল” বলা হচ্ছে।

দীর্ঘ দেড় দশক বন্দিদশা কাটিয়ে ২০১৫ সালে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দেশের নেত্রী নির্বাচিত হন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী সু চি। কিন্তু দেশের পশ্চিমে রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উচ্ছেদ এবং গণহত্যার অভিযোগে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক মহলে সু চি-র ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও দেশীয় রাজনীতিতে আগের মতোই জনপ্রিয়তা ছিল তাঁর। কিন্তু নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ ঘিরে সম্প্রতি আঙুল উঠতে শুরু করে তাঁর দিকে। দেশের নির্বাচন কমিশন যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সংবিধান এবং আইন রক্ষার দায়িত্ব তাঁদের হাতেই বলে শনিবারই ঘোষণা করে সে দেশের সেনা। তার পর থেকেই অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

এই মুহূর্তে মায়ানমার সংসদের ২৫ শতাংশ আসনই সেনার জন্য সংরক্ষিত। সু চির সরকারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্বও সংরক্ষিত তাদের জন্য। কিন্তু সে দেশের সেনা নাগরিক আইন মেনে চলে না বলে অভিযোগ করেছেন এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর ফর হিউম্যান রাইটস-এর অধিকর্তা জন সিফটন। মায়ানমার সেনা নেতৃত্বের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বসাতে জো বাইডেন সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: অবশেষে মিলল জয়, হিজাব পরার অনুমতি পেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সেনারা

Exit mobile version