প্রিন্সেস ডায়নার সাক্ষাৎকার পেতে প্রতারণার আশ্রয়, ২৭ বছর পর ক্ষমা চাইল বিবিসি

১৯৯৫ সাল। বিবিসিকে দেওয়া ব্রিটিশ রাজবধূ ডায়নার এক সাক্ষাৎকার আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল দুনিয়াজুড়ে।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

২৭ বছর আগের ঘটনা। ১৯৯৫ সাল। বিবিসিকে দেওয়া ব্রিটিশ রাজবধূ ডায়নার এক সাক্ষাৎকার আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল দুনিয়াজুড়ে। যে সাক্ষাৎকারে প্রিন্সেস অব ওয়েলস সেই প্রথম অকপটে স্বীকার করে নিয়েছিলেন, তাঁর দাম্পত্য জীবনে অসুখের কথা, তাঁর নতুন বন্ধুসঙ্গের কথা, স্বামী চার্লসের বান্ধবীর কথা। বিবিসির তুমুল জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘প্যানোরামায়’ সম্প্রচার হয়েছিল সেই সাক্ষাৎকার।

কিন্তু সেই সাক্ষাৎকার যতটা আলোড়ন ফেলেছিল, ততটাই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল সাক্ষাৎকার পেতে বিবিসির সাংবাদিক মার্টিন বশির যে পন্থা নিয়েছিলেন তা নিয়ে। সে ব্যাপারে অভিযোগ তুলেছিলেন, ডায়নার ভাই আর্ল স্পেনসার। তাঁর দাবি ছিল, বশির এই সাক্ষাৎকার পেতে প্রতারণা করেছেন।

এর পর টেমস নদী দিয়ে দিয়ে জল গড়িয়েছে অনেক। ওই সাক্ষাৎকারের আড়াই দশক পর ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি লর্ড ডাইসনের নেতৃত্বে শেষমেশ তদন্ত করিয়েছে বিবিসি। তার পর ডাইসনের তদন্তেও এখন স্পষ্ট যে বশির প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার ডাইসন তাঁর তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতেই বিবিসি তা ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবেই সম্প্রচার করেছে। সেই সঙ্গে তারা ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছে গোটা বিষয়টির জন্য। ক্ষমা চেয়েছেন সাংবাদিক মার্টিন বশিরও।

১৯৯৫ সালের ২০ নভেম্বর বিবিসির প্যানোরামায় সম্প্রচারিত হয়েছিল সাক্ষাৎকারটি। সেই সময়ে ২০ মিলিয়নের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক সাক্ষাৎকারটি দেখেছিলেন। যা ছিল রেকর্ড। সাংবাদিক মার্টিন বশিরকে সেই ইন্টারভিউতে তাঁর কষ্টের কথা জানিয়েছিলেন প্রিন্সেস অফ ওয়েলস ডায়না। তাঁর মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ থেকে শুরু করে তাঁর বেড়ে ওঠা, বিবাহিত জীবনের কথা— সবই জানিয়েছিলেন তিনি। খুবই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে রাজ পরিবারের গৃহবধূ হয়েছিলেন ডায়না। প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে তাঁর বিবাহিত জীবনে যে সুখ ছিল না বরং কষ্ট ও বঞ্চনার মধ্যে দিয়েই সময় কাটছিল, সে কথা অকপটে বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তাঁর মাতৃত্বকালীন ঝড়ঝাপটার কথা। এবং সেই সব ঘটনা কীভাবে তাঁকে অবসাদগ্রস্ত করে তুলেছিল তাও লুকোননি ডায়না। রাজপরিবারের অন্দরমহলের নানা অনিয়মের কথাও উঠে এসেছিল তাঁর সাক্ষাৎকারে।

সাক্ষাৎকারটি যখন সম্প্রচারিত হয়, তখনও ডায়না-চার্লসের বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি। তবে তখন তাঁরা আলাদা থাকছিলেন। দাম্পত্য জীবনের বঞ্চনা নিয়ে ডায়ানা বলেছিলেন, ‘আমাদের বিয়ের সময়েই আমরা তিনজন লোক ছিলাম।’ অর্থাৎ তখন থেকেই ক্যামিলা পার্কার বোলসের সঙ্গে যে চার্লসের সম্পর্ক ছিল সে কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন ডায়না। সেই সঙ্গে ডায়না শুনিয়েছিলেন, তাঁর নিঃসঙ্গতা ও অবসাদের কারণে নিজের ওপর অত্যাচার করার, আত্মহত্যার চেষ্টার গল্প। ডায়নার সেই সাক্ষাৎকার ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের অন্দরমহলের অন্ধকার দিকটা যেন বেআব্রু করে দেয়।

আরও পড়ুন: সাংবাদিক রোজিনাকে গ্রেফতারের খবর বিশ্ব মিডিয়ায়

ওই সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের পরের বছরই বিবাহবিচ্ছেদ হয় ডায়নার। তারও এক বছর পর প্যারিসে এক রহস্যময় সড়ক দুর্ঘটনায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যান প্রিন্সেস ডায়না। রহস্যময় সেই দুর্ঘটনা ও তাঁর মৃত্যুর পেছনে বিবিসি প্যানোরমার ওই সাক্ষাৎকার অন্যতম অনুঘটক ছিল বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।

এরপর ডায়নার ভাই আর্ল স্পেনসার অভিযোগ করেছিলেন, সাংবাদিক বশির তাঁকে ডায়ানা সম্পর্কিত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কিছু ভুয়ো নথি দেখিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল, রাজপ্রাসাদের দু’জন ঊর্ধ্বতন কর্মচারী ডায়ানার ব্যাপারে তথ্য দেওয়ার বিনিময়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অর্থ পাচ্ছেন। আসলে সেই ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট বিবিসির গ্রাফিক আর্টিস্টকে দিয়ে বানিয়েছিলেন বশির।

আর্ল স্পেনসারের অভিযোগ, এর মাধ্যমে বিবিসির সাংবাদিক মার্টিন বশির তাঁর সহানুভূতি আদায় করেছিলেন। সেই কারণেই তিনি বশিরকে ডায়নার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। যা ডায়ানার সাক্ষাৎকার পেতে বশিরকে সাহায্য করেছিল। বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভিকে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব অভিযোগ জানিয়েছিলেন স্পেনসার। ওই সময় স্পেনসার বলেছিলেন, ‘আমি যদি ওই নথিগুলো না দেখতাম তাহলে আমি আমার বোনের সঙ্গে বশিরের পরিচয় করিয়ে দিতাম না।’

আর্ল স্পেনসারের দাবি, সাংবাদিক বশিরের লক্ষ্য ছিল তাঁর আস্থা অর্জন করে ডায়নার কাছে পৌঁছনো এবং সাক্ষাৎকারের জন্য ডায়নাকে রাজি করানো। রাজপ্রাসাদে ডায়নার ব্যক্তিগত চিঠিপত্র খুলে দেখা হচ্ছে, ডায়ানার দেহরক্ষী তাঁর এবং তাঁর বন্ধুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং ডায়নার বিষয়ে নানা গল্প সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিচ্ছে, ডায়নার গাড়িকে অনুসরণ করা হচ্ছে এবং ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে— এমন নানা প্রতারণামূলক গল্প ফেঁদেছিলেন বশির।

লর্ড ডাইসন তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছেন, সাক্ষাৎকার পাওয়ার জন্য ডায়নার আস্থা অর্জনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন সাংবাদিক বশির। তিনি স্পেনসারকে বেশ কিছু ভুয়া নথি দেখিয়েছিলেন। যা ডায়ানার কাছাকাছি যেতে ও তাঁর আস্থা অর্জন করতে বশিরকে সাহায্য করেছিল। আর এ কারণেই ডায়না সাক্ষাৎকারে বশিরকে অকপটে তাঁর জীবনের অজানা গল্প শুনিয়েছিলেন। লর্ড ডাইসন বলছেন, সাংবাদিক বশিরের এসব কর্মকাণ্ড ছিল ‘অবিশ্বাস্য, অবিশ্বস্ত ও কিছু ক্ষেত্রে অসৎ’।

ওই রিপোর্ট প্রকাশের পরই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছে বিবিসি।

আরও পড়ুন: ইসরাইলের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা গাজায়, রাস্তায় রাস্তায় ‘বিজয়োল্লাস’

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest