উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনের অত্যাচারের মর্মন্তুদ ঘটনা নতুন নয়। কোনও দেশের শাসক দল যদি নিজের দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করে তাহলে সেই সংখ্যালঘুদের করার কিছু থাকে না। কিন্তু সময়ের চাকা বদলায়। হিটলারও ইহুদিদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার করেছিলেন। গেরুয়া ভক্তরাও অনেকে চায় সংখ্যালঘুদের আতঙ্কে রাখতে। মূলত শাসক দলের প্রশ্রয়েই তারা সাহস পায়।
সরকারি নির্দেশে চিনের শিনজিয়াং প্রদেশেই শুধুমাত্র কয়েক হাজার মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে। বলপূর্বক ধর্মীয় কাজকর্ম বন্ধ রাখার পাশাপাশি, সেখানে কয়েক লক্ষ মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে ডিটেনশন শিবিরে। অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই)-এর একটি রিপোর্টে এমনই দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : সর্ষের তেলে মেশানো যাবে না ভোজ্য তেলও, জানিয়ে দিল FSSAI
ক্যানবেরায় এএসপিআই-এর সদর দফতরটি অবস্থিত। সেটি সরকার প্রতিষ্ঠিত এবং অস্ট্রেলীয় প্রতিরক্ষা দফতরের অনুমোদন প্রাপ্ত থিঙ্কট্যাঙ্ক সংস্থা। স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে এবং চিনা সরকারের নির্দেশে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরে এমন দাবি করেছে তারা।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উইঘুরদের ওপর চূড়ান্ত নির্যাতন, নির্বিচারে তাদের মানবাধিকার হরণ এবং ডিটেনশন শিবিরে দিনের পর দিন বন্দি রাখার মতো একাধিক অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকেই উঠেছে জিনপিং সরকারের বিরুদ্ধে। এবার অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই)-এর একটি রিপোর্টের সূত্রে জানা গিয়েছে শুধু মাত্র শিনজিয়াং প্রদেশেই বলপূর্বক কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি কয়েক লক্ষ মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে ডিটেনশন শিবিরে। শুধু তাই নয়, সরকারি নির্দেশেই সেখানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার মসজিদ।
মূলত স্যাটেলাইট ইমেজ এবং চিন সরকারের নির্দেশে ধ্বংসপ্রাপ্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত রিপোর্ট অনুসারে নিজেদের রিপোর্টে এই দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। তাদের মতে, সাম্প্রতিক কালে শুধু শিনজিয়াং প্রদেশেই প্রায় ১৬ হাজার মসজিদ ধ্বংস করেছে সে দেশের সরকার। একাধিক মসজিদ আবার মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। তবে এর মধ্যে গত তিন বছরেই অধিকাংশ মসজিদ ভাঙা হয়েছে বলে দাবি রিপোর্টে। মূলত উরুমকি এবং কাশগড়ের শহুরে এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মসজিদ ভাঙার ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে ।
হাতে গোনা যে ক’টি মসজিদ দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাদের অধিকাংশেরই চূড়া এবং গম্বুজ ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মসজিদ ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। শিনজিয়াং প্রদেশে অক্ষত এবং ভগ্নপ্রায় অবস্থায় এই মুহূর্তে যে’কটি মসজিদ রয়েছে, তার সংখ্যা ১৫ হাজারের আশপাশে হবে।
সবমিলিয়ে উইঘুর এবং তুর্কিক ভাষায় কথা বলা ১০ লক্ষের বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে ডিটেনশন শিবিরে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলেও জানি গিয়েছে ওই রিপোর্টে। বলপূর্বক সেখানে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
ই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে বেজিং। তাদের দাবি, শিনজিয়াং প্রদেশে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করেন সাধারণ মানুষ। এএসপিআই-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টটি নিয়েও একই দাবি করেছে তারা। শুক্রবার চিনা বিদেশমন্ত্রকের তরফে বলা হয়, ‘‘ওই রিপোর্টটির কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। চিনকে বদনাম করার জন্যই সেটি তৈরি করা হয়েছে।’’
শিনজিয়াং প্রদেশে ২৪ হাজার মসজিদ রয়েছে বলে দাবি করেন চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন। তিনি বলেন, ‘‘আমেরিকায় মোট যত মসজিদ রয়েছে, তার চেয়ে দশ গুণ বেশি মসজিদ রয়েছে শিনজিয়াং প্রদেশে। এমনকি শিনজিয়াং প্রদেশে এক জন মুসলিম ব্যক্তি প্রতি গড়ে যত মসজিদ রয়েছে, মুসলিম দেশগুলিতেও তা নেই।’’
আরও পড়ুন : ট্রাম্প, নেতানিয়াহুর পর নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত পুতিন! এবার কী মোদির পালা!