#ওয়াশিংটন: কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। সোমবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরানের খানের সঙ্গে বৈঠকের সময় একথাই বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই সমস্যা মেটাতে মধ্যস্থতার ইচ্ছাও প্রকাশ করলেন। আমেরিকা সফররত পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকের পর সোমবার ট্রাম্প বলেন, ভারতও পাকিস্তান দুই দেশ চাইলে তিনি কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতা করতে তৈরি। যদিও ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সেই দাবি নস্যাৎ করে বলেছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এমন কোনও অনুরোধ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে করেননি। কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা হলে দ্বিপাক্ষিক স্তরেই তা হবে।’’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এখন মার্কিন সফরে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সেনাপ্রধান কমর জাভেদ বাজওয়া, আইএসআই প্রধান ফৈয়জ হামিদ ও বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। হোয়াইট হাউসে ইমরানের সঙ্গে প্রথম বৈঠক হয় ট্রাম্পের। তার পরে ওভাল অফিসে ইমরানের পাশে বসেই ট্রাম্প মধ্যস্থতার কথা তোলেন। ইমরান প্রথমে বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু হওয়া দরকার।’’ সে কথার সূত্রেই ট্রাম্প যোগ করেন, ‘‘দু’সপ্তাহ আগে মোদীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি জানতে চান, আমি মধ্যস্থতা করতে রাজি কি না। আমি প্রশ্ন করি, কোন বিষয়ে। তিনি বলেন, কাশ্মীর। কারণ, বিবাদটা অনেক দিন ধরে চলছে। আমি ওঁকে জানাই, মধ্যস্থতা করতে পারলে আমি খুশিই হব।’’ এ কথা শুনে ইমরান বলেন, ‘‘এটা হলে ১০০ কোটি মানুষের শুভেচ্ছা আপনার সঙ্গে থাকবে।’’
ট্রাম্পের এই বক্তব্য সামনে আসার পরেই রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে শুরু হয় গুঞ্জন। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ টুইট করে বলেছেন, “এ বার কি ভারত ট্রাম্পকে মিথ্যেবাদী বলবে? নাকি স্বীকার করে নেবে যে কাশ্মীর সমস্যা মেটাতে পারছেন না মোদী। তাই তৃতীয় শক্তির সাহায্য চেয়েছেন তিনি।” এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর টুইট করে বলেন, “আমার মনে হয় ট্রাম্প কী বলছেন, সেটা উনি নিজেই জানেন না। হয় তাঁকে ঠিকমতো বলে দেওয়া হয়নি, নয়তো তৃতীয় শক্তির সাহায্যের ব্যাপারে মোদী কী বলেছেন, সে ব্যাপারে ওনার জানা নেই। আমার মনে হয়, বিদেশমন্ত্রকের উচিত এ ব্যাপারে দিল্লির ভাবনাটা ঠিকমতো বুঝিয়ে দেওয়া।”
এরপরই ট্রাম্পের মন্তব্য খারিজ করে নজিরবিহীন কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় ভারত সরকার। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার এদিন রাতে এক বিবৃতিতে জানান, “আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য শুনেছি। স্পষ্ট জানাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কস্মিনকালেও এই রকম কোনও প্রস্তাব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেননি। তাছাড়া ভারতের নীতি খুব পুরনো ও সুস্পষ্ট। তা হল, পাকিস্তানের সঙ্গে যে কোনও বিবদমান বিষয় বা ইস্যু দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে মেটানো হবে। সেখানে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বা মধ্যস্থতার কোনও জায়গাই নেই। দ্বিপাক্ষিক যে কোনও বিষয় নিয়ে সিমলা চুক্তি ও লাহোর ঘোষণাপত্র মেনেই এগোবে ভারত ও পাকিস্তান। এর অন্যথা হবে না। এছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে এখন যে ব্যাপারে আলোচনা সবচেয়ে জরুরি তা হল, সন্ত্রাসে মদত চিরতরে বন্ধ করা নিয়ে।”
কিন্তু ভারতের ঘরোয়া রাজনীতিতে বিষয়টা এত সহজে মেটার নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা রাতেই টুইট করেন, ‘‘ভারত কোনও দিন তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মানেনি। কাশ্মীরে একটি বিদেশি শক্তিকে মধ্যস্থতা করতে বলে প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থকে বলি দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’’ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘এর পরে শিমলা চুক্তিতে কাশ্মীর নিয়ে ভারতের অবস্থানের কী হবে?’’ জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি আবার ট্রাম্পের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘‘এর ফলে উপমহাদেশে শান্তি স্থায়ী হতে পারে।’’