Site icon The News Nest

আজ বাউল সম্রাট লালন শাহের ১৩০তম প্রয়াণ দিবস, বন্ধ আখড়াবাড়ির দরজাতেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন

lalon kushtia2 wb

আজ শনিবার, ১ কার্তিক। ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস। প্রতিবছর এই দিনে তাঁর লাখো ভক্ত–অনুসারী জড়ো হন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে। স্মরণ করেন তাঁদের সাঁইজিকে। কিন্তু এবার করোনাকালে আগে থেকেই আয়োজন স্থগিত করে লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষ। তবুও কিছু সাধু-ভক্ত এসেছেন প্রিয় সাঁইজিকে ভক্তি-শ্রদ্ধা জানাতে।

সকাল ১০টার দিকে আখড়াবাড়ির প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায় তালা লাগানো। ওপরে ব্যানার টাঙানো। তাতে লেখা, ‘মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩০তম তিরোধান দিবস উদ্‌যাপন স্থগিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।—অনুরোধক্রমে কর্তৃপক্ষ।’

কুষ্টিয়ায় লালন শাহের আখড়াবাড়ির বন্ধ ফটকের সামনে ভক্তদের ভিড়

সকাল থেকেই অনেক ভক্ত-অনুসারী ধীরে ধীরে ফটকের সামনে জড়ো হন। সেখানেই ভক্তি-শ্রদ্ধা জানানো হয়।। ভক্ত–সাধু–অনুসারীদের আকুতি, যদি অল্প কিছুক্ষণের জন্য ফটকের তালা খুলে দিয়ে সাঁইজির চরণে শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো, তাঁদের মনটা শান্তি পেত। কিন্তু কতৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, রকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক কুষ্টিয়ায় সব ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ আছে। তাই আখড়াবাড়ির ফটক খোলা হবে না।

আরও পড়ুন: দেশে আর কেউ না খেয়ে থাকবে না, বললেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা

লালন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি; যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। তিনি অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘বাউল-সম্রাট’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তার গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

লালন ছিলেন একজন মানবতাবাদী সাধক। যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি তার গান রচনা করেছেন। তার গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাজী নজরুল ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে। তার গানগুলো মূলত বাউল গান হলেও বাউল সম্প্রদায় ছাড়াও যুগে যুগে বহু সঙ্গীতশিল্পীর কণ্ঠে লালনের এই গানসমূহ উচ্চারিত হয়েছে। গান্ধীরও ২৫ বছর আগে, ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম, তাকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দেয়া হয়েছিল।

বাংলা ১২৯৭ সালের পহেলা কার্তিক( ১৭ অক্টোবর) সাধক পুরুষ ফকির লালন শাহ দেহত্যাগ করেন। এরপর থেকে লালনের অনুসারীরা প্রতি বছর কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে আসছেন। তবে লালন একাডেমী প্রতিষ্ঠার পর এ আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। কোনো বছর সাঁইজির তিরোধান দিবস ঘিরে পাঁচ দিন আবার কোনো বছর তিন দিনের অনুষ্ঠান হত আখড়াবাড়িতে। স্মরণোৎসবের কয়েকদিন আগে থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে লালন ভক্তরা এসে একাডেমি ভবনের নিচতলার পুরো মেঝে জুড়ে আসন পেতে বসতেন। আর উৎসবের দিনগুলোতে তো আখড়াবাড়ির আঙিনা ছাড়িয়ে মরা কালী নদীর পাড় অব্দি বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে হাট বসত বাউল সাধুদের। তবে এবারের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ আলাদা, পুরো আখড়াবাড়ি জুড়ে সুনশান নীরবতা।

এবার সহজ মানুষদের মহা সম্মিলন হচ্ছে না। হচ্ছে না গুরু শিষ্যের ভাবের আদান প্রদান। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুক্তির পথ খুঁজে বেড়ানো মানুষগুলো এবারের তিরোধান দিবসে সাঁইজিকে স্মরণ করবে নিজ নিজ ধামে।

আরও পড়ুন: দীর্ঘ ১০ মাস চেষ্টার পর উঠল বাঘের গাছকে আলিঙ্গনের ছবি! জিতে নিলে বিশ্ব সেরা পুরস্কার

 

Exit mobile version