ব্রিটিশ রাজপরিবারের দুই বৌমার মধ্যে ‘চুলোচুলি’ প্রকাশ্যে! বিস্ফোরক মেগান মার্কল

টেলিভিশনের প্রাক্তন অভিনেতা মেগানকে ‘জেদি’, ‘ছক কষে চলা’ এবং ‘বখে যাওয়া’— তকমা দিতে ছাড়েনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের একাংশ।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

রাজপরিবারে পা রাখার পর থেকেই নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবতেন। এমনকি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেও বার বার সেই চিন্তাই ঘুরেফিরে আসত তাঁর মনে। রবিবার ওপরা উইনফ্রে-র কাছে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছেন মেগান মার্কল। গোলাবারুদের সেখানেই শেষ নয়। বাকিংহাম প্যালেসকে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগেও বিদ্ধ করেছেন। মেগানের দাবি, রাজকুমার হ্যারি ও তাঁর প্রথম সন্তানের জন্মের আগেই তার গায়ের রং নিয়ে চলত আলোচনা। নিজে যখন মানসিক সমস্যায় যুঝছেন, সে সময়ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি ব্রিটেনের রাজপরিবার। এমনটাও শোনা গিয়েছে মেগানের কণ্ঠে।

রবিবার রাতে আমেরিকার টেলিভিশনে হ্যারি-মেগানের সাক্ষাৎকার নিয়ে উৎসাহের অন্ত ছিল না। অনেকেই ভেবেছিলেন, রাজকীয় পরিচয় ত্যাগ করে বাকিংহাম প্যালেস থেকে সরে যাওয়ার পর তাঁদের নতুন জীবন নিয়েই কিছু বলবেন দম্পতি। তবে ওপরার কাছে ঘণ্টা দুয়েকের দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে রাজপরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক তির ছুড়েছেন মেগান। তাঁকে ‘যোগ্য’ সঙ্গত করেছেন হ্যারিও।

২০১৮ সালের ১৯ মে বিয়ে হয়েছিল মেগান-হ্যারির। তার পরের বছরই তাঁদের প্রথম সন্তান আসে রাজপরিবারে। তবে ৬ মে তাঁদের ছেলে আর্চির জন্মের আগে থেকেই তার গায়ের রং নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। মেগান বলেছেন, ‘‘অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়… সেই মাসগুলোতে কথাবার্তা চলত, হয়তো ‘ওকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে না’, ‘ওকে হয়তো উপাধি দেওয়া হবে না’, জন্মের পর ওর গায়ের রং কতটা কালো হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলত। হ্যারির সঙ্গে তাঁর পরিবার এ ধরনের কথাবার্তাই বলত।’’

রাজকুমার হ্যারির সঙ্গে তাঁর ‘রূপকথা’র বিয়ের পর ট্যাবলয়েড থেকে পাপারাৎজিদের নিয়মিত নিশানায় ছিলেন মেগান। তার প্রভাবও পড়েছিল মেগানের মনের উপর। সঙ্গে ছিল তাঁদের প্রথম সন্তানের গায়ের রং নিয়ে বাকিংহামের সদস্যদের জল্পনা। শ্বেতাঙ্গ বাবার মেয়ে মেগানের মায়ের মতোই কি তাঁদের প্রথম সন্তানের গায়ের রং কালো বা বাদামি হবে? প্রশ্নটা ঘোরাফেরা করছিল রাজপরিবারের এক সদস্যের কথাবার্তায়। তা নিয়ে রীতিমতো ‘দুশ্চিন্তা’ও প্রকাশ করেছিলেন ওই সদস্য। তবে এ দাবি করলেও সেই সদস্যের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি মেগান।

যদিও আত্মহত্যার চিন্তা যে তাঁর মাথায় চেপে বসেছিল, সে কথা সাফ জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘আমি… কোনও ভাবেই বেঁচে থাকতে চাইতাম না। সব সময় এমন ভয়াবহ চিন্তা মাথায় ঘুরত। আর সেটা খুবই কঠোর, বাস্তব চিন্তা।’’ আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় ঘোরাফেরা করার সময় কেমন মনে হত তাঁর? ওপরার কাছে তা-ও খোলসা করেছেন মেগান। তাঁর কথায়, ‘‘খুব ভয় পেতাম। কারণ সেটাই আমার কাছে একেবারে সত্যি ছিল।’’

আরও পড়ুন: বিচ্ছেদেরও স্বাধীনতা নেই! থাকতে হবে ‘কুলিং পিরিয়ড’- এ, নয়া নিয়মে সরগরম চিন

সংবাদপত্রে দাবি করা হয়েছিল, ডাচেস অফ কেমব্রিজ কেট মিডলটন তাঁদের (মেগান ও হ্যারির) বিয়ের আগে কেঁদেছিলেন এবং এখান থেকেই মিডিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের মোড় ঘুরে যায়। মেগান বলেন, ‘এটাই টার্নিং পয়েন্ট ছিল।’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তিনি কি কেটকে কাঁদিয়েছিলেন? প্রত্যুত্তরে মেগান বলেন, ‘ঠিক এর উলটোটি হয়েছিল।’ বলেন, ‘বিয়ের কয়েকদিন আগে তিনি (কেট) কোনও কারণে হতাশায় ছিলেন। ফ্লাওয়ার গার্লদের পোশাক সংক্রান্ত কোনও বিষয় ছিল এবং এটিই আমাকে কাঁদিয়ে ছিল। বিষয়টি আমার অনুভূতিতে আঘাত হেনে ছিল।’

ডাচেস অফ সাসেক্স আরও বলেন যে, ‘আমাদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না এবং… আমার মনে হয় সেই ব্যাপারটি নিয়ে বিশদে যাওয়া উচিত হয়নি, কারণ তিনি (কেট) আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। তবে আমি কোনও মতেই ভুলতে পারছি না, যে কাজের জন্য আমাকে দোষারোপ করা হচ্ছে, তা আমি করিনি, বরং সেটি আমার সঙ্গেই ঘটেছে।’ মেগান বলেন, ‘আমি বলব যে, আমি সারল্যের সঙ্গে রাজ পরিবারে প্রবেশ করেছি। কারণ রাজ পরিবারের বিষয় খুব একটা ধারণা আমার ছিল না।’

এই সাক্ষাৎকারেই মেগান নিজের ও যুবরাজ হ্যারির গোপন বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। জানান যে, তিনি ও হ্যারি আনুষ্ঠানিক বিবাহের তিন দিন আগে গোপনে বিয়ে করেছিলেন। ২০১৮ সালের ১৯ মে ব্রিটেনের উইন্ডসোর ক্যাসেলে ক্যান্টারবেরির আর্চ বিশপ জাস্টিন ওলেসবির সামনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার রীতি পালনের আগেই তাঁরা প্রতিশ্রুতি বিনিময় করেছিলেন। ‘কেউ জানে না। কিন্তু আমরা আর্চবিশপকে ডাকি এবং বলি, ‘দেখুন, এ সমস্ত কিছুই পৃথিবীর জন্য।’ এই ইন্টারভিউয়ের জন্য তাঁকে কোনও মূল্য দেওয়া হয়নি বলেও স্পষ্ট জানিয়েছেন যুবরাজ হ্যারির ঘরণী।

ডিউক এবং ডাচেস অব সাসেক্স হিসাবে গত বছরের মার্চেই রাজপরিবার ত্যাগ করে উত্তর আমেরিকায় চলে যান হ্যারি-মেগান। তার পর থেকে টেলিভিশনের প্রাক্তন অভিনেতা মেগানকে ‘জেদি’, ‘ছক কষে চলা’ এবং ‘বখে যাওয়া’— তকমা দিতে ছাড়েনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের একাংশ। হ্যারির পাশাপাশি তাঁরও ‘স্বার্থপর’ তকমা জুটেছে। তবে রবিবারের সাক্ষাৎকারের পর বোধ হয় আরও বড় ঝড় উঠতে চলেছে ব্রিটেনের রাজপরিবারে। কারণ, ১৯৯৫ সালে হ্যারির মা তথা যুবরানি ডায়ানা নিজের একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া থেকে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ভঙ্গুর বিয়ের নানা কথা প্রকাশ্যে আনার পর এতটা বিস্ফোরক হননি রাজপরিবারের কোনও সদস্য!

আরও পড়ুন: নাবালককে ‘ধর্ষণ’ করে অন্তঃসত্ত্বা মার্কিন তরুণী, ঠাঁই হাজতে

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest