লাল গ্রহে কি কখনও প্রাণের অস্তিত্ব ছিল? সেই উত্তরের সন্ধানের ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ফেলল নাসা। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মঙ্গল গ্রহে ছুঁয়েছে ল্যান্ডার ও রোভার ‘পারসিভেরান্স’। যে মিশনের সঙ্গে যুক্ত আছেন চার ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী। তাঁদের মধ্যে দু’জন আবার বাঙালি।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, গত বছরের ৩০ জুলাই ফ্লোরিডা থেকে যাত্রা শুরুর পর বৃহস্পতিবার একটি প্রাচীন নদীর উপত্যকায় (জেজিরো ক্রেটার) অবতরণ করেছে নাসার সবথেকে আধুনিক রোভার। যা নাসার সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবতরণ ছিল। রোভারের এন্ট্রি, ডিসেন্ট এবং ল্যান্ডিং দলের প্রধান আল চেন জানিয়েছেন, আদতে যেখানে নামার কথা ছিল, তার এক মাইলের মতো দক্ষিণ-পূর্বে নেমেছে ‘পারসিভেরান্স’। শেষ পর্যায়ে নিজে থেকেই অবতরণের জন্য সবথেকে সুরক্ষিত জায়গা বেছে নিয়েছে রোভার। তারপরই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় নাসার জেট প্রপুলেশন ল্যাবরেটরি। সঙ্গে ‘পারসিভের্যান্স’-এর অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে টুইটবার্তায় বলা হয়, ‘অবতরণ নিশ্চিত।’ পরে লাল গ্রহের ছবি টুইট করে লেখা হয়, ‘নমস্কার বিশ্ব! চিরকালীন বাড়ি থেকে আমার প্রথম লুক।’
আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল রক্তের বন্যা! অবশেষে জানা গেল আসল কারণ
স্বাতী মোহন, অনুভব দত্ত, সৌম্য দত্ত, জে বব বলরাম- এই চার ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। ‘পারসিভেরান্স’ অপারেশনস লিড হলেন স্বাতী মেনন। বেঙ্গালুরুর জে বব বলরাম হলেন আবার ইতিহাসের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ‘ইনজেনুইটি’-এর চিফ ইঞ্জিনিয়ার। সেই সঙ্গে আছেন মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এরোডায়নামিক্স ও এরো-ইলেকট্রিসিটি বিভাগের অধ্যাপক অনুভব দত্ত। বছর ৩০ আগে মঙ্গল গ্রহে হেলিকপ্টার ওড়ানোর কথা ভেবেছিলেন মহিষাদলের ছেলে। পাশাপাশি যে প্যারাশুটের মাধ্যমে লাল গ্রহে ‘পারসিভেরান্স’ পা দিয়েছে, তার নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিজ্ঞানী সৌম্য দত্ত। যিনি বর্ধমানের বাসিন্দা।
Hello, world. My first look at my forever home. #CountdownToMars pic.twitter.com/dkM9jE9I6X
— NASA's Perseverance Mars Rover (@NASAPersevere) February 18, 2021
লাল গ্রহের মাটিতে কাজ চালাচ্ছে নাসার আরও দুটি মিশন – ২০১২ সালের মিশন কিউরিয়োসিটি এবং ২০১৮ সালের ইনসাইট ল্যান্ডার। নয়া ২.৭ বিলিয়ন ডলারের সর্বাধুনিক রোভারে ‘ইনজেনুইটি’ নামে চার রোটর বিশিষ্ট একটি ড্রোন হেলিকপ্টার আছে। সেটির মাধ্যমে এই প্রথম পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনও গ্রহে কপ্টার ওড়ানোর চেষ্টা করা হবে। বিভিন্ন জায়গার পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে আগামী মাসের মধ্যেই উড়তে পারে ‘ইনজেনুইটি’। তারইমধ্যে জেজিরো উপত্যকায় শিলা এবং পলি নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে ‘পারসিভেরান্স’। এলাকার ভূতাত্ত্বিক গঠন, অতীতের আবহাওয়ার জানার চেষ্টা করবে। সেই সঙ্গে প্রাণের সন্ধানে চলবে খোঁজ। যেদিকে তাকিয়ে আছে সারা বিশ্ব।
আরও পড়ুন: ‘এটা ভারত নয় যে,, আন্দোলন করলেই গ্রেপ্তার করা হবে’, সুযোগ বুঝে পাল্টা আঙ্গুল তুলল পাকিস্তান