কলের পরিষ্কার জলই খেয়েছিল ছেলেটা। প্রথমে কিছু বোঝা যায়নি। কিন্তু পরে ভয়ঙ্কর মাথা যন্ত্রণা আর জ্ঞান হারানোর পরে হাসপাতালে নিয়ে যেতেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়। ডাক্তাররা জানান, জলের সঙ্গেই অ্যামিবা ঢুকে গেছে শরীরে এবং সটান পৌঁছে গেছে মস্কিষ্কে। মাথার ভেতরের স্নায়ুকোষ প্রায় ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে। বাঁচানো যায়নি শিশুটিকে।
ঘটনা গত ৮ সেপ্টেম্বরের। শিশুটি আমেরিকার টেক্সাসের বাসিন্দা। পরিবার জানিয়েছে, বাগানে খেলা করতে করতে কলের জল খেয়েছিল বাচ্চাটা। তারপরেই জ্ঞান হারায়। কলের জলে এককোষী প্রাণীর নমুনাও পাওয়া গেছে বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনার পরেই হইচই শুরু হয়ে যায় হাউস্টনের টাউন সেন্টারে। শহরের একটি ফোয়ারার জলেও অ্যামিবার খোঁজ মেলে। জরুরি অবস্থা জারি করে সকলকে কলের জল খেতে নিষেধ করেন টেস্কাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট।
আরও পড়ুন: পাক অধিকৃত গিলগিট-বালটিস্তানে ফের ভোট করানোর সিদ্ধান্ত ইসলামাবাদের, আপত্তি জানাল নয়াদিল্লি
আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানাচ্ছে, এই এক-কোষী অ্যামিবা উষ্ণ জলে জন্মায়। মাটিতেও থাকে। নাকের মধ্য দিয়ে মানুষের শরীরে একবার ঢুকলে, সোজা মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। এর সংক্রমণ যদিও খুব কম শোনা যায়। কিন্তু, একবার হলে প্রাণসংশয় দেখা দিতে পারে।
Brain-Eating Amoeba বা নাইগ্লেরিয়া ফোলেরির বৈশিষ্ট্য হল এই একখোষী প্রাণী নাক দিয়ে ঢুকে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। তারপর স্নায়ুকোষকে টার্গেট করে। কোষ বিভাজন ঘটিয়ে সংখ্যায় বেড়ে স্নায়ুকোষের দফারফা করে দেয়। প্রচণ্ড সংক্রামক এবং দ্রুত কোষে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই এককোষী প্রাণী। দ্রুত অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ড্রাগ না দিলে মস্তিষ্কের কোষ ছিঁড়েখুঁড়ে দেয় এই প্রাণীরা। এই সংক্রমণে যে রোগ হয় তাকে বলে নাইগ্লেরিয়াসিস বা প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফেলাইটিস (PAM)। এর উপসর্গ হল জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশির খিঁচুনি, হাইপারথারমিয়া, হ্যালুসিনেশন।
বছরের ছয়েকের শিশুটির মস্তিষ্কে অ্যামিবা সংক্রমণে নাইগ্লেরিয়াসিস রোগই হয়েছিল বলে মনে করছেন ডাক্তাররা। খুব দ্রুত সেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে যে কারণে শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, Naegleria fowleri-র সংক্রমণ বিরল। কিন্তু, মৃত্যুহার ৯৭ শতাংশ। ১৯৬২ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১৪৫ জন এই মগজখেকো অ্যামিবায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে মাত্র ৪ জনকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প, নেতানিয়াহুর পর নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত পুতিন! এবার কী মোদির পালা!