ফেসবুকের পর এ বার আমেরিকার টেলিভিশন নেটওয়ার্কের কাছেও মুখ পুড়ল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ভোটগণনা নিয়ে একের পর এক মিথ্যাভাষণের অভিযোগে ট্রাম্পের ভাষণের লাইভ সম্প্রচার বন্ধ করে দিল সে দেশের একাধিক টিভি চ্যানেল।
৩ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচন (US Presidential Election 2020) শেষ হলেও বেনজিরভাবে কয়েকটি সুইং স্টেটে এসে দাঁড়িয়েছে দুই প্রার্থীর ভাগ্য। তবে ২৬৪টি ইলেক্টোরাল ভোট বা আসন নিয়ে ২৭০-এর ম্যাজিক ফিগার প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছেন বাইডেন (Joe Biden)। এদিকে ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি ভোট। কিন্তু অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা ও নেভাডার মতো রাজ্যের ফল এখনও আসেনি। তবে ফের প্রেসিডেন্ট পদে বসতে হলে এই সব রাজ্যেই জয়ী হতে হবে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে। অথচ মাত্র একটি রাজ্য দখল করলেই হোয়াইট হাউসে পৌঁছে যাবেন বিডেন। যা পরিস্থিতি তাতে ট্রাম্পের হার এখন অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেই হার মানতে রাজি নন।
বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউসে প্রথম বার জনসমক্ষে আসেন ট্রাম্প। সেখান থেকেই রিপাবলিকান সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। তবে সেই ভাষণ শুরু হতে না হতেই তার সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় এবিসি, সিবিএস এবং এনবিসি-র মতো আমেরিকার প্রথম সারির টিভি নেটওয়ার্ক। ভাষণের মাঝেই ওই চ্যানেলগুলির সঞ্চালক সরাসরি ট্রাম্পের ভাষণকে ‘মিথ্যা’ বলে আখ্যা দেন।
আরও পড়ুন: ভাঙল ওবামার রেকর্ড, মার্কিন ইতিহাসে সর্বাধিক ভোট পেয়ে ম্যাজিক ফিগার ছোঁয়ার পথে বাইডেন
ভোটগণনায় ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেনের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চললেও নিজের ১৭ মিনিটের সংক্ষিপ্ত অথচ উত্তেজক ভাষণে ভোটচুরির মতো অভিযোগ করেন ট্রাম্প। এমনকি, আইনি ভাবে ভোটগণনা হলে তিনিই যে জিতছেন, সে দাবিও করেন তিনি। রিপাবলিকানদের থেকে ভোটচুরির জন্য ডেমোক্র্যাটরা যে বেআইনি পথ নিয়েছেন, সে অভিযোগও শোনা যায় ট্রাম্পের মুখে। তবে প্রেসিডেন্টের এই ভাষণ যে পুরোপুরি মিথ্যা এবং কোনও তথ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করে করা নয়, তা সাফ জানিয়েছেন আমেরিকার একাধিক টিভি চ্যানেলের সঞ্চালক। ট্রাম্পের ভাষণের সম্প্রচার বন্ধের আগে দর্শকদের উদ্দেশে এমএসএনবিসি চ্যানেলের সঞ্চালক ব্রায়ান উইলিয়ামস বলেন, “ওকে, আমরা এমন এক অদ্ভুত অবস্থায় পড়েছি যখন শুধুমাত্র আমেরিকার প্রেসিডেন্টের (ভাষণের) সম্প্রচার বন্ধ করতে হচ্ছে না, তাঁকে শুধরেও দিতে হচ্ছে।” এর পরেই ওই সম্প্রচার মাঝপথেই বন্ধ করে দেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। যদিও সে সময় ভিউয়ারশিপের নিরিখে সবচেয়ে বেশি দর্শক টানছিল ওই চ্যানেলগুলি।
Here’s the moment @msnbc cut out of the president at the podium.
— Lauren Peikoff (@laurenpeikoff) November 6, 2020
এমএসএনবিসি বা সিবিএস-এর মতো চ্যানেলে ট্রাম্পের ভাষণ কোপের মুখে পড়়লেও শেষ পর্যন্ত ফক্স নিউজ বা সিএনএন-এ তা বন্ধ করেনি। যদিও প্রেসিডেন্টের ভাষণ নিয়ে আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছে সিএনএন-এর সঞ্চালকের মুখে। বিরোধীদের ভোটচুরির প্রসঙ্গে ওই চ্যানেলের সঞ্চালক জেক ট্যাপার বলেন, “আমেরিকার পক্ষে কী দুঃখজনক রাত, যখন তাঁদের প্রেসিডেন্ট এ কথা (ভোটচুরির) বলেন। অন্যদের বিরুদ্ধে ভোটচুরির মিথ্যে অভিযোগ আনেন।” এখানেই থামেননি জেক। তাঁর মন্তব্য, “কোনও প্রমাণ নেই। তবুও ভোটচুরি করা নিয়ে একের পর এক একের পর এক মিথ্যা বলেই চলেছেন (ট্রাম্প)। শুধুমাত্র কালিমা লেপন করা।”
টিভি নেটওয়ার্কগুলির কাছে ‘ধাক্কা’ খাওয়ার আগে ফেসবুকের কাছ থেকেই হুঁশিয়ারি পেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ভোটগণনা চলাকালীন জেতার দাবি করায় তাঁর টুইটে সতর্কীকরণের নোটিফিকেশন দেয় ফেসবুক। তবে সে সময় ট্রাম্পের মতো একই দাবি করায় বাইডেনের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। যদিও এ যাত্রায় তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেন নন, অস্বস্তিতে পড়েছেন স্বয়ং ট্রাম্প!
আরও পড়ুন: আগামী বছর অবসর নিচ্ছেন পুতিন? নতুন বছরে নয়া প্রেসিডেন্ট পাচ্ছে রাশিয়া!