অর্ঘ্য কুন্ডু:
করোনা মানে অচেনা আতঙ্ক। যে আতঙ্কে পশ্চিমি দেশগুলি ত্রাহি ত্রাহি ডাক ছাড়ছে। এই আতঙ্কের কারণ হল, এখনও তাদের কাছে এই সংক্রমণের ওষুধ নেই। প্রশ্ন হল, তাহলে ভারতবাসী এমন বিনোদনের মোডে কেন। সেকি কেবল তাদের অশিক্ষা? নাকি শুধুই উদাসীনতা? ১৩০ কোটি ভারতবাসী কী মূর্খ?
আরও পড়ুন: সচেতনতা তলানিতে! কাঁসর-ঘণ্টা নিয়ে পথে জনতা, উঠল ‘জয় মা করোনা’ ধ্বনি
না, তা হতে পারে না। আসলে এমন উদাসীনতার সঙ্গত কারণ রয়েছে। এদেশের বহু হাজার মানুষ মামুলি রোগে মরে যায় প্রতিদিন। আজও ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু , চিকেনগুনিয়ার হাত ধরে ফি বছর মানুষ পরপারে যেতে বাধ্য হয়। তুচ্ছ রোগে মরে যাওয়া তাই এদেশের লোকের কাছে অতি সাধারণ বিষয়। সে কারণেই হাস্যমুখে অদৃষ্টকে পরিহাস করার এমন দুঃসাহস দেখাচ্ছেন দেশবাসী।
এদেশের লোক সেলিব্রেশন করতে ওস্তাদ। সে কারণে থালা ও ঘন্টা বাজানোর বিষয়ে তাদের যত আগ্রহ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে তার সিকি ভাগও নেই। দূরত্ব বজায় রাখার মোদী পরোয়ানা হেলায় অগ্রাহ্য করে দেশবাসী বিকেলে নেমে আসে রাস্তায়। যে কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার শর্ত রাস্তায় মারা যায়। আসলে পোড়া এই দেশে প্রাণ এমন সস্তা না হতো তাহলে হয়তো মানুষে খানিক ভয় পেত। তারা সচেতন হত।
আরও পড়ুন: করোনা-আক্রান্ত চিকিৎসকের সংস্পর্শে, কোয়ারেন্টাইনে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল
যে ছেলে স্কুলে যায়নি কোনওদিন, তার ভিতর কখনও পরীক্ষার ভীতি জন্ম নিতে পারে না। বাবুরা গৃহবন্দী থেকে সোশ্যাল সাইটে নানা উপদেশ দিচ্ছেন। এই উপদেশ শুনলে গরিব মানুষের চলবে কি করে বলতে পারেন। সেলেবদের কথা বাদ দিন। ১৪ দিন কেন ১৪ মাস ঘরে থাকলে তাদের রুজি রুটিতে টান পড়বে না। কিন্তু গরিবের চলবে কি করে। তাদের জন্য কেন্দ্র কোনও গঠনমূলক প্রকল্প ঘোষণা করেনি। কেবল একবার টাস্ক ফোর্সের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে কোনও স্পষ্ট বার্তা পৌঁছায়নি। শুধু থালা, বাটি নিয়ে বাজনা বাজানোর সার সত্যটুকু জেনে পথে নেমে পড়েছে মানুষ।
আরও পড়ুন: করোনার জের! শুরুর চার মাস আগেই পিছিয়ে যাচ্ছে টোকিও অলিম্পিক
এদেশের ধনী ব্যাক্তিরা অসুস্থ হলেই বিদেশ দৌড়ান। কখনও বা বেড়াতে, কখনও বা পড়তে। এখন তারা পড়েছেন ফাঁপড়ে। কথায় কথায় ইউরোপ আমেরিকা যাওয়া বন্ধ। সত্যি বলতে তাদের সৌজন্যেই মূলত অসুখটা এদেশে ছড়িয়েছে। এতদিন ওরা গরিব মানুযের ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলেছে। তারাই ইনফেকশন ছড়ায় বলে ধরে নিয়েছিল। কিন্তু আজ উপরওয়ালা তা বদলে দিয়েছন। ধনীরা আক্রান্ত না হলে ওষুধ বের হয় না। তা নিয়ে জোরদার আলোচনাও হয় না। গরিব মানুষ মরুক না মশা কামড়ে কিংবা পেট খারাপ হয়ে। বেহাল সরকারি চিকিৎসার অবহেলায় তাদের প্রাণ যাক। এটাই দেখেছে এদেশের বেশিরভাগ মানুষ। তাই তারা এমন উদাসীন। তাই তারা নিষেধ ভুলে, প্রাণের মায়া ত্যাগ করে মেতে উঠছে করোনা সেলিব্রেশনে।