Site icon The News Nest

চোর সন্দেহে রাতভর পোস্টে বেঁধে ‘মার’, মানিকতলায় অটোয় মিলল যুবকের দেহ

auto scaled

মোবাইল চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল উত্তর কলকাতার মানিকতলা থানা এলাকায়। বুধবার সকালে এলাকারই একটি অটোর ভেতর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় পাপ্পু প্রসাদ নামে এক ব্যক্তিকে। তাঁকে উদ্ধার করে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।  পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতের নাম অমরনাথ প্রসাদ ওরফে পাপ্পু (৩৮)। তিনি বসাকবাগান এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

এ দিন দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশ দ্রুত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। তবে রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করার খবর নেই। পুলিশকর্তাদের দাবি, পিটিয়ে মারার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃতদেহের ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার পরেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে কলকাতা পুলিশের ইস্টার্ন সাবার্বান ডিভিশনের এন্টালি থানায় তামার তার চোর সন্দেহে এক কিশোরকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল। এ দিনের ঘটনা যে এলাকায় ঘটেছে, সেটিও এই ডিভিশনের অন্তর্গত। এর আগেও মানিকতলা থানা এলাকায় চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, বসাকবাগান এলাকার একটি বস্তিতে দুই দাদার সঙ্গে থাকতেন পাপ্পু। তাঁর বাবা-মা মারা গিয়েছেন। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিনিই সব চেয়ে ছোট। বড় দাদা, ষাটোর্ধ্ব মহেশ প্রসাদ কোনও কাজ করেন না। তার পরের জন উত্তম প্রসাদ অটোচালক এবং তাঁর রোজগারেই সংসার চলে। পাপ্পুও সে ভাবে কোনও কাজ করতেন না। তবে মাঝেমধ্যেই রাতে ঘরে ফিরতেন না তিনি। পাপ্পু নেশাগ্রস্ত ছিলেন বলেও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।

বুধবার সকালে অটোর মধ্যে দেহটি পড়ে থাকতে দেখে এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। দেহটি যে পাপ্পুর, তা চিনতে পারার পরেই স্থানীয়েরা খবর দেন মানিকতলা থানায়। পুলিশ পৌঁছে দেখে, একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির সামনে দাঁড়ানো ফুলবাগান-গণেশ টকিজ় রুটের অটোর পিছনের আসনে হেলান দিয়ে পড়ে এক যুবক। মুখে গ্যাঁজলা, পায়ে গভীর চোট। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে আর জি করে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, বহুক্ষণ আগেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দেহে রাইগর মর্টিস শুরু হয়ে গিয়েছে বলেও জানান তাঁরা। এর পরেই পাপ্পুর দুই দাদাকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে দাঁড় করানো রয়েছে অটোটি। তবে সেটি ঘিরে দেওয়ার কোনও পুলিশি বন্দোবস্ত চোখে পড়েনি। স্থানীয়দের দাবি, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অন্য পাড়ায় কয়েক বার মারধর খেয়েছিলেন পাপ্পুকে। ওই রাতেও মোবাইল চোর সন্দেহে মানিকতলার একটি ক্লাবের মাঠ লাগোয়া গাঙ্গুলিপাড়া এলাকায় তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ

এই ঘটনায় আরও একবার প্রশ্ন উঠছে শহরবাসীর ভূমিকায়। চোর সন্দেহে কেউ ধরা পড়লে, পুলিশকে খবর না দিয়ে তারা নিজেরাই কেন আইন হাতে তুলে নিলেন, সেই প্রশ্ন তুলছে নাগরিক সমাজ। একাধিক মানুষ গণধোলাইয়ে হাত মেলালেও, কেউ একবার পুলিশে খবর পর্যন্ত দেননি। এখানেই এলাকাবাসীর ভূমিকায় উঠছে প্রশ্ন।

 

Exit mobile version