তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছিল। টিকিট না পেয়ে এবার দলের অন্দরে ‘বিদ্রোহ’ আরও বাড়ছে। শুক্রবার বিকেল থেকে যে ক্ষোভ শুরু হয়েছিল শনিবার সকালে তা কার্যত আছড়ে পড়ল রাজ্যের সর্বত্র। সাতগাছিয়ার বিধায়ক সোনালি গুহ (Sonali Guha) শুক্রবার কান্নাকাটি করেছিলেন। আর শনিবার তা চেপে রেখেই দলবদলের বার্তা দিলেন তিনি। জানালেন, বিজেপিতে যোগ দেবেন। তবে প্রার্থী হতে চান না, বিজেপির (BJP) হয়ে স্রেফ প্রচার করবেন। মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। একই সুর সাঁকরাইলের বিধায়ক শীতল সর্দার, শিবপুরের বিধায়ক জটু লাহিড়ীর।
তৃণমূলে থাকাকালীন সকলের কাছে ‘মুশকিল আসান’ ছিলেন তিনিই। গত কয়েক বছরে সময়-দল-অবস্থান সবই বদলেছে তাঁর। কিন্তু এখনও যে তিনিই তৃণমূলের বঞ্চিতদের কাছে ‘মুশকিল আসান’, তা আরও একবার প্রমাণিত হল। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত মুকুল রায়ের বাড়িতে বঞ্চিত তৃণমূল বিধায়করা ভিড় জমালেন। তাঁর ভোটে লড়ার টিকিট চান। টিকিট নামক বিভুতি পেতে ‘মুকুলবাবা’-র সল্টলেকের থানে ভিড় জমাতে শুরু করেন বেশিরভাগ বঞ্চিত বিধায়করা। এ
কদা তৃণমূলের অঘোষিত দু’নম্বর ছিলেন মুকুল। তখন তাঁর হাতেই ছিল টিকিট দেওয়ার ক্ষমতা। এখন তিনি বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। টিকিট দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর ততখানি আছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক এবং জল্পনা আছে। কিন্তু তাতে কি আর বঞ্চিতদের থামানো যায়! তাঁরা গিয়ে ভিড় করেন সেই মুকুলের কাছেই। সেই উদ্যোগের ‘নান্দীমুখ’ করেন জোঁড়াসাকোর প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দীনেশ বাজাজ। দলনেত্রী ও দলের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ উগরে দিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুকুলের সল্টলেকের বাড়িতে যান তিনি। সেখানেই মুকুলের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দেন, আর তৃণমূল নয়। এবার বিজেপি-র হয়েই কাজ করবেন তিনি।
আরও পড়ুন: WB election 2021 : টিকিট না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সোনালি, ক্ষুব্ধ দীপেন্দু-আরাবুল
রাত ঘনানোর সঙ্গে সঙ্গেই মুকুলের সঙ্গে একে একে যোগাযোগ শুরু করেন সোনালি গুহ, শীতল সর্দার, জটু লাহিড়িরা। মমতার প্রার্থিতালিকা থেকে বাদ পড়েছেন পুড়শুড়ার বিধায়ক নুরুজ্জমান ও জগৎবল্লভপুরের বিধায়ক আব্দুল গনি। রাতের দিকেই তাঁরাও প্রকাশ্যেই এসে মুকুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিজেপি-তে যোগদান করার ইচ্ছে প্রকাশ করে যান।
এমন নয় যে, শুধুমাত্র বিধায়করাই মুকুলের বিধাননগরের বাড়িতে হানা দেন। টিকিটের প্রত্যাশায় থাকা তৃণমূল নেতারাও মুকুলের কাছে এসে দলবদলের ইচ্ছা প্রকাশ করে যান। মুকুল-ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি কর্মী শনিবার জানান, ‘‘টিকিট পেতে ব্যর্থ তৃণমূল নেতারা সারারাত মুকুলদার সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করেছেন। এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে সারারাত দাদা ঘুমোতে যেতে পারেননি। একসময় নিজেই বলেছেন, ‘এবার একটু ঘুমোতে দাও, সবার সব কথাই আমি শুনব’। কিন্তু কে শোনে কার কথা!’’
মুকুল-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, উত্তর থেকে দক্ষিণ— সব জেলা থেকেই মুকুলের কাছে ঘনঘন ফোন আসছে তৃণমূল নেতাদের। কেউ বা টিকিটের দাবি নিয়ে কেউ বা যোগদানের। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘এই সমস্ত বিধায়ক ও তৃণমূল নেতা মুকুলের দরজায় ভিড় জমাচ্ছেন টিকিটের প্রত্যাশায়। কিন্তু বিজেপি তো আর তৃণমূলের মতো দল নয়, যে এলেই টিকিট পাওয়া যাবে। আমরা খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, দলে যোগদানের কথা বললেও মুকুল’দা কাউকেই টিকিট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন না। সেই শর্তে যদি কেউ আসতে চান, তা হলে তাঁকে দলে নেওয়া যেতেই পারে।’’
আরও পড়ুন: হুমায়ুন কবীর বনাম ভারতী ঘোষ, দুই প্রাক্তন আইপিএসের লড়াইয়ে জমজমাট ডেবরা