টিটাগড়ে খুন হওয়া বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লর মরদেহ নিয়ে বেনজির রাজনীতিতে নেমে পড়লেন বিজেপি নেতৃত্ব। সোমবার বিকেলে এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মণীশের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তার পরেই মরদেহ নিয়ে এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে রাজভবনের উদ্দেশে এগোতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা।
গতকাল রাত ৮ টা নাগাদ টিটাগড়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন বিজেপি নেতা মণীশ শুক্ল। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তার পর তাঁর ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ময়নাতদন্তে কেন দেরি হচ্ছে, পুলিশ কেন মরদেহ রিলিজ করছে না সেই সব অভিযোগ নিয়ে সোমবার দুপুরেই রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের কাছে নালিশ করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
মণীশ খুনের ঘটনায় রাজ্যপালও আন্দোলিত। এ ঘটনা নিয়ে জানতে চেয়ে গতকাল রাতেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেক্সট মেসেজ করেছিলেন। সেই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র ও স্বরাষ্ট্র সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে তলব করেছিলেন রাজভবনে। শাসক দলের অনেকের মতে, রাজ্যপালের ইন্ধনেই এ সব করছে বিজেপি। রাজভবনকে কার্যত বিজেপির পার্টি অফিস বানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন: আলিপুর–সহ পশ্চিমবঙ্গের সকল চিড়িয়াখানার দরজা খুলছে আজ, জেনে নিন প্রবেশের নিয়ম
এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে কলকাতা পুলিশের তরফে বিজেপি নেতাদের বলা হয়েছে যে মরদেহ নিয়ে রাজভবনে যাওয়ার অনুমতি আপনাদের নেই। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি বিজেপি নেতারা। বাস ভাঙচুর করল বিজেপি।এসএন ব্যানার্জি রোড ধরে তাঁরা এগোচ্ছেন। নিউ মার্কেট চত্বরে পুলিশের ব্যারিকেড। এর পরেই রাজভবনে সরাসরি ফোনে কথা বলেন অর্জুন সিং। তার পরে সেই ফোনটি ডিসি সেন্ট্রালকে দেন তিনি। রাজভবনের সঙ্গে কথা বলার পরে ডিসি জানান, প্যারাডাইস সিনেমা হলের সামনে ডেড বডি ও গাড়ি রেখে, বিজেপির চার জন সদস্য রাজভবনে যাবেন।
বিজেপির গোটা নেতৃত্ব এ দিন আরও জোর গলায় আঙুল তুলতে শুরু করেছে তৃণমূল এবং পুলিশের দিকে। রাজ্যের শাসক দল এবং পুলিশের যোগসাজসেই মণীশকে খুন করা হয়েছে, না হলে থানার সামনে ‘ব্রাশ ফায়ার’ করে মণীশকে খুন করা সম্ভব ছিল না— দিলীপ ঘোষ থেকে অর্জুন সিংহ, সবাই এ দিন এই সুরে কথা বলেছেন। বিজেপির এই আক্রমণের জবাব দিতে সন্ধ্যায় তৃণমূলের হয়ে আসরে নামেন কলকাতা পুরসভার প্রশাসক তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি, সব ব্যাপারে কেন তৃণমূলের নাম জড়ানো হচ্ছে! আমরা গান্ধীবাদী দল। আমরা হিংসায়, দাঙ্গায় বিশ্বাস করি না।’’ নিহত মণীশ তাঁর খুব ‘প্রিয়পাত্র’ ছিলেন বলে ফিরহাদ জানান। তাঁর দাবি, মণীশ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যেতে চাননি, বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের এনে চাপ দিয়ে তাঁকে বিজেপিতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। সম্প্রতি মণীশ আবার তৃণমূলে ফেরার জন্য বার্তা পাঠাচ্ছিলেন এবং তখনই তাঁকে খুন হতে হল বলে ফিরহাদ মন্তব্য করেন।
তাঁর অভিযোগের আঙুল যে অর্জুনের দিকে, তা বেশ স্পষ্ট ভাবেই এ দিন বোঝানোর চেষ্টা করেন ফিরহাদ। কেন হঠাৎ মণীশের দেহরক্ষীরা থাকলেন না? রবিবার সন্ধ্যায় মণীশ যখন অর্জুনের সঙ্গে ছিলেন, তখন কেন পরে মণীশ টিটাগড়ে ফিরলেন আর অর্জুন সিংহ কলকাতার দিকে চলে গেলেন? কৈলাসের কাছ থেকে কী এমন জরুরি ফোন হঠাৎ অর্জুন পেলেন যে, তাঁকে কলকাতা চলে যেতে হল? এই সব প্রশ্ন এ দিন তোলেন ফিরহাদ। তদন্তে সব রহস্যের সমাধান হবে বলে ফিরহাদ দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা উত্তরপ্রদেশ নয়। এখানে অপরাধীদের এনকাউন্টার হয় না। এখানে অপরাধীদের খুঁজে বার করে বিচারকের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়।’’
এনআরএস হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে অর্জুন জবাব দিয়েছেন ফিরহাদের এই মন্তব্যেরও। তাঁর কথায়, ‘‘ফিরহাদ হাকিমের সময় শেষ হয়ে এসেছে। মেটিয়াবুরুজ থেকে দুষ্কৃতী পাঠিয়ে খুনের রাজনীতি আর চলবে না। মণীশের খুন এত সস্তা হবে না। মন্ত্রিত্বটা যেতে দিন, লোকে ফিরহাদকে রাস্তায় পেটাবে।’’
আরও পড়ুন: জগদীপ ধনখড়কে নৈ-রাজ্যপাল বলে কটাক্ষ ব্রাত্য বসুর,পাল্টা দিলেন লকেট