সোমবার মন্ত্রীসভার শপথ, প্রথম ক্যাবিনেট মিটিং। তার আগে অধ্যক্ষ মনোনয়নের দিনেই বিধানসভায় প্রথম বক্তব্য রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিনা ভোটাভুটিতে তৃতীয়বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সেই নির্বাচন উপলক্ষে সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে বাংলার মানুষ, নারীশক্তি এবং তরুণ প্রজন্মকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশিই বিরোধীদের একহাত নিলেন।
মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন রাজ্যের কোনও এলাকায় কোনও অশান্তি তিনি বরদাস্ত করবেন না! মমতার কথায়, ‘বাংলার মানুষ প্রমাণ করেছেন, তাঁদের মেরুদন্ড আছে। বাংলার মেরুদন্ড আছে। তাঁরা বলেছেন, চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির।’ অধ্যক্ষ মনোনয়নের দিনে বিধানসভা বয়কট করেছিল বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বক্তব্য়ে কোভিড রুখতে কেন্দ্রের ব্যর্থতাকে নিশানা করলেন। চাঁচাছোলা ভাষায় বিজেপিকে ভর্ৎসনা করলেন। পাশাপাশি বিনম্র হতে বলে আগামী দিনের পাথেয় বুঝিয়ে দিলেন নবনির্বাচিত বিধায়কদের। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিলেন উপস্থিত বিধায়কদের।
মমতা বলেন, ‘এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। ইতিহাস। মিরাকেল! আমি বাংলার নারীশক্তির কাছে মাথা নত করছি। পাশাপাশি, তরুণ প্রজন্মের ভোটও আমার পেয়েছি। অনেকের কোভিড হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতায় আমার মাথা নত হয়ে আসছে।’
আরও পড়ুন: নেতাদের উস্কানিমূলক মন্তব্যেই রাজ্যে ভোট-পরবর্তী হিংসা, বিজেপি-কে দায়ী করল তৃণমূল
মমতার আরও বক্তব্য, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কোথাও কোথাও রিগিং হয়েছে। আমরা সব জানি। সব বুঝতে পেরেছি। আমরা আবার বলছি, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার হওয়ার প্রয়োজন আছে। কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার একটা চিরকুট লিখে লোককে বদলি করে দিচ্ছেন!’ বিজেপি-র শীর্ষনেতৃত্বকে একহাত নিয়ে মমতা বলেছেন, ‘কত কোটি টাকা খরচ করেছে, তার কোনও বিসেব নেই। হোসপাইপে করে জল ঢালার মতো টাকা খরচ করেছে। ওই টাকাটা খরচ করে যদি সকলকে টিকা দেওয়া যেত, তা হলে এতদিনে সকলের টিকা পাওয়া হয়ে যেত। সার্বিক টিকাকরণ হত।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি হিংসার পক্ষে নয়। আমি শান্তির পক্ষে। ৯৯% ফেক ভিডিও ছড়াচ্ছেন। আমাকে এক সংঘের নেতা এসএমএস করে মহিলা অত্যাচার হয়েছে বললেন। আমি খবর নিয়ে দেখলাম এমন ঘটনা ঘটেনি। একটা মেয়েকে অসম্মান কেন করলেন? আসলে জনগণের জয় তারা সহ্য করতে পারছে না।’
বিধায়কদের অনুরোধ করে মমতা বলেন, ‘বিধায়কদের অনুরোধ, তাঁরা এলাকায় শান্তি রাখুন। আমাদের আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। কোভিড রোগীদের সাহায্য করতে হবে। আমি কিন্তু কোথাও কোনও রকমের অশান্তি বরদাস্ত করব না। কোথাও কোনও দাঙ্গা করার চেষ্টা হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাবেন। ওরা প্রচারের সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল। এখন হেরে গিয়েও সেই চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলার মানুষ এসব মেনে নেননি। নেবেনও না।’
বিজেপির বয়কট প্রসঙ্গে মমতা বলেন , ‘যে বিরোধিরা জিতে এসেছেন, তাঁরা বেশিরভাগই জিতে এসেছেন কমিশনের দয়ায়। তাঁরা স্পিকার নির্বাচন বয়কট করেছেন! ওঁদের তো জনগণ বয়কট করেছে! ইলেকশন কমিশন না থাকলে ওরা ৩০টা আসনও পেত না।’
আরও পড়ুন: একা বিরোধী নওশাদ সিদ্দিকীর হাজিরায় স্পিকার নির্বাচন, হ্যাটট্রিক করলেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়