কলকাতায় শিল্পপতি পরিবারের বধূর রহস্যমৃত্যু। ১৬ই ফেব্রুয়ারি আলিপুরে তাঁর বাড়ির নিচে মৃতদেহ উদ্ধার হয় রসিকা জৈন আগরওয়ালের। তাঁকে আত্মহত্যায় (Suicide) প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ পরিবারের। বুধবার সেই বাড়িতে তদন্তে গোয়েন্দা বিভাগের উওমেন্স সেলের আধিকারিকরা।
বছর দুয়েক আগে মহা ধূমধামে বিয়ে হয়েছিল রসিকা-কুশলের। কলকাতা শহরের দুই বড় শিল্পপতি পরিবারের সন্তান তাঁরা। রসিকা জৈন ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করে ডিগ্রিও পেয়েছেন। অন্যদিকে কুশল আগরওয়াল ডিএলখান রোড এলাকার আর এক নাম করা ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে।
কুশলের সঙ্গে রসিকার বিয়ের আসর বসে রাজস্থানের উমেদ ভবনে। (প্রসঙ্গত, এই উমেদ ভবনেই মার্কিন পপ তারকা নিক জোনাসের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ২০১৮ সালে)
২০১৯ সালে দেখাশোনা করে বিয়ের পরে ২০২০ সালে প্রথম বছরের বিবাহবার্ষিকীও পালন করেন তাঁরা। কিন্তু তার বছর ঘুরতেই যে এত বড় বিপদ ঘটবে, কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন রসিকা। অভিযোগ উঠেছে এ মৃত্যুর কারণ নিছক দুর্ঘটনা নয়। রসিকার শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে রসিকার পরিবার।
পুলিশ জানিয়েছে, রসিকার পরিবারের দাবি, গত বছর লকডাউন শুরুর পর থেকেই দাম্পত্য অশান্তি শুরু হয়। রসিকা জানতে পারেন, কুশল মাদকাসক্ত। প্রতিবাদ করায় অশান্তি চরমে ওঠে। শুরু হয় অত্যাচারও। পরিবারের কয়েক জনকে নানা সমস্যার কথা জানিয়েওছিলেন রসিকা। এমনকি ভাই ঋষভের কাছে কয়েক বার টাকা চেয়েছেন তিনি, খাবার কিনে পাঠিয়ে দিতেও বলেছেন।
এসবের মধ্যেই ১৬ ফেব্রুয়ারি খবর আসে, ছাদ থেকে পড়ে গেছেন রসিকা! রসিকার মায়ের দাবি, হাসপাতালে গিয়ে তিনি মেয়েকে চোখের দেখাও দেখতে পাননি। বরং রসিকার স্বামী কুশলের পরিবারের তরফ থেকে বলা হয়, তাড়াতাড়ি চলে যেতে, নইলে পুলিশ ও মিডিয়া সমস্যা করবে। রসিকার পরিবারের প্রশ্ন, “কীসের এত লুকোছাপা! মেয়ে কীভাবে মারা গেল, তার কোনও তথ্য বা প্রমাণ কেন দেওয়া হচ্ছে না!”
আরও পড়ুন: ভোট ঘোষণার ২৪ ঘণ্টায় রাজ্য পুলিশে বড় রদবদল! সরানো হল এডিজি আইনশৃঙ্খলাকে
রসিকার পরিবারের দাবি, প্রভাব খাটিয়ে রসিকার মৃত্যুর আসল কারণ ধামাচাপা দিতে চাইছে তাঁর শ্বশুরবাড়ির পরিবার। তাঁদের মেয়ে অনেকবারই বলেছেন সংসারে অশান্তির কথা। রসিকার ভাইয়ের থেকে টাকাও চাইতে হতো তাঁকে। এসব কারণ রয়েছে রসিকার রহস্যমৃত্যুর পেছনে, এমনটাই দাবি পরিবারের। তবে প্রশ্ন উঠেছে, আগে থেকে জানার পরেও কেন মেয়েকে নিয়ে আসেননি রসিকার মা-বাবা। কেনই বা কাউকে জানাননি এসব ঘটনা। বরং জানা গেছে, তাঁরা ‘মানিয়ে নেওয়া’রই পরামর্শ দিয়েছিলেন মেয়েকে।
ঘটনাটি ঘটার ১৫ মিনিট আগে রসিকা তাঁর বাবাকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানান, যে তিনি আর ওই পরিবারে থাকতে পারবেন না। তাঁর কিছুক্ষণ পরেই রসিকার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর মেলে।
পুলিশ সব দিক তদন্ত করে দেখছে বলে জানা গেছে। সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলেছে উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৭ বছরের রসিকার। এখন এই পড়ে যাওয়া নিছক কোনও দুর্ঘটনা, অসাবধানতা, ইচ্ছাকৃত, নাকি অভিসন্ধিমূলক– সে উত্তর এখনও অন্ধকারে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘জাস্টিস ফর রসিকা’ প্ল্যাটফর্মে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
আরও পড়ুন: প্রার্থী ঘোষণার আগেই আরও এক তারকা যোগ, তৃণমূলে নাম লেখালেন সায়ন্তিকা