একের পর এক ইন্দ্রপতন ঘটে চলেছে বাংলা সাহিত্যজগতে। সম্প্রতি,করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ‘জাতির বিবেক’ শঙ্খ ঘোষের। সেই শোক কাটতে না কাটতেই ফের খারাপ খবরে মন খারাপ বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের। বুধবার সকালে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন জনপ্রিয় রহস্য রোমাঞ্চ লেখক অনীশ দেব। বয়স হয়েছিল ৭০। লেখকের মৃত্যুর খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন লেখক-কন্যা মোনালিসা।শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার তাঁকে রক্তও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে হাসপাতাল সূত্রে। প্লাজমার প্রয়োজন বলে সেইমতো ডোনারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।
প্রয়াত লেখকের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে,গত বেশ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়াতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। এরপর সেখানে তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট আসে পজিটিভ। ধীরে ধীরে তাঁর শারীরিক অবনতি শুরু হয়। ডাক্তারদের অক্লান্ত চেষ্টা সত্ত্বেও অবশেষে এদিন ভোরে মৃত্যু হয় তাঁর।
আরও পড়ুন: ধূমপানের চেয়েও ক্ষতিকারক ‘গেরুয়া’! অভিনব পোস্টার দক্ষিণ কলকাতায়
সাহিত্যিক অনীশ দেবের জন্ম ১৯৫১ সালে কলকাতায়। লেখালিখি শুরু করেন ১৯৬৮ সালে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ– ঘাসের শীষ নেই, সাপের চোখ, তীরবিদ্ধ, জীবন যখন ফুরিয়ে যায় ইত্যাদি। সম্পাদনা করেছেন সেরা কল্পবিজ্ঞান, সেরা কিশোর কল্পবিজ্ঞান ইত্যাদি গ্রন্থ। একদিকে বাংলায় কল্পবিজ্ঞান ও হররধর্মী সাহিত্যে যেমন তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন তেমনই অনুবাদ করেছেন বিশ্বের নানান হরর ধর্মী গল্প উপন্যাস,যা আজও বেস্টসেলারের তালিকার অন্তর্ভুক্ত।
বাংলার প্রথম ফিউচারিস্টিক থ্রিলার ‘ তেইশ ঘন্টা ষাট মিনিট’-এর লেখাও ছিলেন তিনি। বলাই বাহুল্য, লেখকের ভাবনা ও লেখার গুণে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল সেই বই। পাশাপাশি ছোট ও কিশোরদের জন্য লিখেছেন বিজ্ঞানের হরেকরকম, হাতে কলমে কম্পিউটার, বিজ্ঞানের দশদিগন্ত ইত্যাদি বিজ্ঞান গ্রন্থ যা পাঠকমহলে ভীষণ জনপ্রিয়। এর সঙ্গে সম্পাদনাও করেছেন নানান কল্পবিজ্ঞানের গ্রন্থ। উনিশ দেবের উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ, উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে,’ ভয়পাতাল’,’ অনীশের সেরা ১০১’, বিশ্বের সেরা ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প।
২০১৯ সালে কিশোর সাহিত্যে জীবনব্যাপী অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কারে সম্মানিত হন অনীশ দেব। এর আগে প্রাচীন কলাকেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৮) ও ডঃ জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পুরস্কারে (১৯৯৯) সম্মানিত হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভোরবেলা আগুন রাজভবনে, ৬টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে