পুরভোটের জন্য প্রার্থীতালিকা প্রকাশের আগেই জানা গিয়েছিল, যুব ও মহিলাদের প্রাধান্য দেবে তৃণমূল। শুক্রবার তালিকা সামনে আসার পর তা স্পষ্ট হয়ে গেল। ১৪৪ টি ওয়ার্ডে ৮৭ জন পুরনো প্রার্থী। নতুন মুখ ৪২ জন। বাদ পড়েছেন ৩৯। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ পুরুষ প্রার্থী, বাকি ৪৫% মহিলা। তালিকায় একাধিক চমক রয়েছে। ঘাসফুল শিবিরের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর পরবর্তী প্রজন্মকে এবার পুর-লড়াইয়ের ময়দানে দেখা যাবে। তবে সবচেয়ে বড় চমক দিতে চলেছে যাদবপুরের ৯৬ নম্বর ওয়ার্ড।
মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বামনেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীর মেয়ে বসুন্ধরা গোস্বামী (Basundhara Goswami)। আগামী ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা পুরভোটে তৃণমূলের টিকিটে লড়বেন তিনি। মাস কয়েক আগে তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য় লিখে শিরোনামে উঠে এসেছিলেন। স্বাধীনতা পূর্ব থেকে আধুনিক যুগে সমাজ গঠনে নারীদের ভূমিকা নিয়ে লিখতে গিয়ে দলের কোপে পড়েছিলেন আরেক বাম শীর্ষ নেতা অনিল বিশ্বাসের মেয়ে অজন্তা বিশ্বাস। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে বামেদের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন বসুন্ধরা। এমনকী সম্প্রতি ত্রিপুরার জমি শক্ত করতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত বসু পাশে নিয়েছিলেন বসুন্ধরাকেই। পেশায় মনোবিদ ক্ষিতিকন্যাই এবার পুরভোটের লড়াইয়ে।
২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রয়াত হন আরএসপি নেতা ক্ষিতি গোস্বামী। তার পরই বসুন্ধরার তৃণমূলে যোগদানের জল্পনা ছড়িয়েছিল। সেই জল্পনা আরও বেড়েছিল অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তার সমর্থনে তৃণমূলের মুখপত্রে বসুন্ধরার কলম ধরার পর। তৃণমূলের মুখপত্রের উত্তর সম্পাদকীয় স্তম্ভে অজন্তার ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ শীর্ষক প্রবন্ধে উঠেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। বামনেতার মেয়ের তৃণমূলের মুখপত্রে লেখা এবং মমতার প্রশংসা নিয়ে সমালোচনায় মেতেছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা থেকে মুছে যাওয়া বামশিবির। কারণ দর্শানোর জন্য অজন্তাকে নোটিসও ধরানো হয়েছিল।
তখনই অজন্তার সমর্থনে এগিয়ে আসেন বসুন্ধরা। তৃণমূলের মুখপত্রে লেখেন, ‘এটা বাস্তব যে বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি নিয়ে কোনও লেখা হলে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়া সম্পূর্ণ হতে পারে না। অজন্তা এটা লিখে কোনও ভুল করেননি। লেখায় বামপন্থীদের অংশ অটুট রেখে অজন্তা উদারতার পরিচয় দিয়েছেন।’
বসুন্ধরা গোস্বামী ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু নামটি তাঁর জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। মেধাবী ছাত্রী বসুন্ধরা বাম রাজনীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। তাই সরে গিয়েছিলেন। জাগো বাংলায় কলম ধরার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে জল্পনা চলছিল। সেই জল্পনার অবসান হল শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর।