জোটের ফাটল প্রকট ব্রিগেডের মঞ্চেই, অধীরকে ‘হক’ ছিনিয়ে নেওয়ার বার্তা আব্বাসের, শাঁকের করাত বাম নেতৃত্ব

আব্বাস বলেন, বামেরা যেখানে প্রার্থী দেবে রক্ত দিয়ে তাদের জেতাবে আইএসএফ।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

ভাগীদারিই লক্ষ্য, তোষণ নয়। তাই কেউ যদি হাত বাড়িয়ে দেয়, তবেই আইএসএফ পাল্টা হাত বাড়াবে। ব্রিগেডের মঞ্চে সকলকে এক প্রকার চমকে দিয়ে কংগ্রেসকে এমনই বার্তা দিলেন আব্বাস সিদ্দিকি। একইসঙ্গে বিমান বসু, মহম্মদ সেলিমদের প্রতি যে তিনি যথেষ্ট খুশি, তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করলেন সে বিষয়ও।

ব্রিগেড সমাবেশের আগের রাতেও আসন নিয়ে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে একদফা আলোচনা হয়েছে আইএসএফ-এর। তবে তাতেও রফাসূত্র মেলেনি। সোমবার ফের একদফা আলোচনা হবে ঠিক হয়েছে। সূত্রের খবর, সিপিএম ইতিমধ্যেই আইএসএফ-কে ৩০টি আসন দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু বেঁকে বসেছে কংগ্রেস। আইএসএফ-কে যত আসন দেওয়া হবে, সেই সংখ্যক আসন তাদের পুষিয়ে দিতে হবে বলে গোঁ ধরেছে তারা। তাতেই আসন সমঝোতা আটকে রয়েছে। সেই পরিস্থিতিতেই ব্রিগেডের মাঠে রবিবার মুখোমুখি হন আব্বাস এবং অধীর।

বেশ কয়েক জনের পর রবিবার বক্তৃতা করতে আসেন অধীর। চাঁচাছোলা ভাষায় তৃণমূল এবং বিজেপি-কে আক্রমণ করেন তিনি। স্লোগান তোলেন, ‘ইয়ে তো সির্ফ ঝাঁকি হ্যায়, সরকার গিরনা অভি বাকি হ্যায়’। এত বড় সভায় আগে কখনও বক্তৃতা করেননি বলেও জানান অধীর। তাঁর গা গরম করা ভাষণে সবে একটু একটু করে তেতে উঠছে ব্রিগেডের মাঠ, ঠিক সেই সময়ই ভিড়ের মধ্যে থেকে মঞ্চে উঠে আসেন আব্বাস। তাঁকে দেখেই ‘ভাইজান, আব্বাস’ রবে গমগম করে ওঠে গোটা ব্রিগেড চত্বর। তাতে মাঝপথে বক্তৃতা থামিয়ে দিতে হয় অধীরকে।

আব্বাসকে মঞ্চে স্বাগত জানাতে এগিয়ে যান পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যসভার সাংসদ মহম্মদ সেলিম। এগিয়ে আসেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও। মঞ্চের সকলে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আব্বাসকে স্বাগত জানান। সেই সময় ডায়াসের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সকলের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করলেও, অধীরের সঙ্গে একটি বাক্যও বিনিময় করতে দেখা যায়নি তাঁকে। এমন পরিস্থিতিতে বক্তৃতা শেষ না করেই ডায়াস ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হন অধীর।

আরও পড়ুন: ব্রিগেডে থাকছেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, লিখিত বার্তায় জানালেন ‘অকল্পনীয় যন্ত্রণার’ কথা

তাঁর মঞ্চে আগমনে জোটের ফাটলের যে ছবি স্পষ্ট হয়েছিল, নিজের বক্তৃতায় সেই ফাটল আরও প্রকট করে তোলেন তিনি। বারংবার বাম শিবিরকে ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করলেও, জোটসঙ্গী কংগ্রেসকে আগাগোড়া ‘বাম-শরিক’ বন্ধনীতেই বেঁধে রাখতে দেখা যায় তাঁকে। এমনকি, আসন সমঝোতা নিয়ে কথা বলতে গিয়েও কংগ্রেসকে উহ্যই রাখেন তিনি। বরং বলেন, ‘‘দাবি অনুযায়ী বামেরা আমাদের ৩০টি আসন ছেড়েছে। তাই যেখানেই বাম-শরিকরা প্রার্থী দেবেন, রক্ত দিয়ে তাঁদের জেতাব আমরা। বিজেপি এবং তাদের ‘বি’ টিম মমতাকে উৎখাত করব আমরা। এ বারের ভোটে মমতাকে শূন্য করে ছাড়ব।’’

তবে আব্বাস যে কংগ্রেসকে এড়িয়ে যাচ্ছেন, মঞ্চে উপস্থিত নেতৃত্বের চোখেমুখে তখন তা স্পষ্ট। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সুর নরম করার পরিবর্তে আরও ঝাঁঝালো মন্তব্য করেন আব্বাস। সরাসরি কংগ্রেসের নাম নিয়ে বলেন, ‘‘যাঁরা ভাবছেন, কেন কংগ্রেসের নাম নিচ্ছি না, তাঁদের বলছি, ভিক্ষা চাই না। আমরা অংশীদারি করতে এসেছি, তোষণ করতে নয়। হক বুঝে নিতে হবে।’’ কংগ্রেসকে তাঁর বার্তা, ‘বন্ধুত্ব করতে চাইলে দরজা খোলা…।’  ঠিক পিছনেই মঞ্চে বসে রয়েছেন অধীর চৌধুরী, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল।

আব্বাসের এই মন্তব্যে অস্বস্তি এড়াতে পারেননি জোট নেতৃত্বের কেউই। মঞ্চের এক প্রান্তে সূর্যকান্তের পাশে বসেছিলেন অধীররঞ্জন। অন্য প্রান্তে ছিলেন আব্বাস এবং আরও কয়েক জন। সাধারণত সমাবেশ শেষ হওয়ার পর হাত ধরে ঐক্যের বার্তা দিতে দেখা যায় নেতাদের। কিন্তু আব্বাসের মন্তব্যের পরই বাম-জোটের সকলে হাত ধরে দাঁড়িয়ে পড়েন। অধীরকে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে ওঠেন সূর্যকান্তও। কিন্তু তখনও পাশাপাশি দেখা যায়নি আব্বাস এবং অধীরকে। বরং মঞ্চের দু’প্রান্তে একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই চলছিলেন তাঁরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আব্বাস একেবারে মঞ্চ থেকেই কংগ্রেসের ওপর চাপ তৈরি করলেন। উল্লেখ্য, আসন রফার ক্ষেত্রে আব্বাসকে ৫-৬টি আসনে বেশি ছাড়তে রাজি ছিলেন না অধীর। কিন্তু শেষমেশ বামেদের থেকে পছন্দের ৩০ টি আসন পেয়েছেন আব্বাস। নন্দীগ্রামও দাবি করেছেন তিনি। আসন নিয়ে যে অধীরকেই পাল্টা চাপে রাখলেন আব্বাস। বিশ্লেষকরা বললেন, আব্বাস দেখিয়ে দিলেন তাঁর রাজনৈতিক ঔদ্ধত্য।

আরও পড়ুন: সায়নী, রাজ থেকে মনোজ, মমতার প্রার্থী তালিকায় তারকার ছটা, দেখে নিন গুঞ্জনে এগিয়ে কারা…

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest