খাস কলকাতায় বুকে ফের স্ত্রী-কে খুনের অভিযোগে ধৃত এক ব্যক্তি। ওই অভিযোগে শনিবার রবীন্দ্র সরোবর থানা এলাকার এক মধ্যবয়সি ব্যক্তিকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। অভিযোগ, স্ত্রী-কে খুনের পাশাপাশি তাঁর হামলায় জখম হয়েছেন দম্পতির কিশোরী মেয়েও।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের নাম অরবিন্দ বাজাজ। দক্ষিণ কলকাতার মনোহর পুকুর রোডের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা তিনি। স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ও একমাত্র মেয়ে অদ্রিজাকে নিয়ে থাকতেন একটি আবাসনে। শ্বশুরের সিমেন্টের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন অরবিন্দ। পুলিস সূত্রে খবর, এদিন রাতে সাড়ে আটটা নাগাদ অরবিন্দ নিজেই ফোন করেন রবীন্দ্র সরোবর থানায়। কেন? ফোনে তিনি জানান, স্ত্রী ও মেয়ে কুপিয়ে খুন করেছেন! এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিস। ফ্ল্যাট উদ্ধার হয় অরবিন্দের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার রক্তাক্ত দেহ। মেয়ে অদ্রিজার শরীরেরও একাধিক জায়গায় ধারালো অস্ত্রে আঘাতে চিহ্ন ছিল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এসএসকেএম ভর্তি সে।
জানা গিয়েছে, একটি বেসকরি সংস্থায় চাকরি করত অরবিন্দ। তবে বছরদুয়েক ধরে সে বেকার। সে কারণে অরবিন্দ তার শ্বশুরের সঙ্গেও কাজ শুরু করে। কিন্তু সেখানেও তৈরি হয় জটিলতা। তা নিয়েই স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন পারিবারিক অশান্তি চলছিল।
পুলিস সূত্রের খবর, জেরায় অরবিন্দ দাবি করেছেন যে, দীপাবলি বড় করে উৎযাপন করে তাঁরা। পুজোর জন্য স্ত্রী প্রিয়াঙ্কাকে আলমারি থেকে তাঁদের পৈতৃক বাসন বের করে দিতে বলেছিলেন অরবিন্দ। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা (৪৫) জানান তাঁর কাছে চাবি নেই! অরবিন্দ এরপর শ্বশুরকে ফোন করেন চাবির জন্য। তিনি আবার জানান যে চাবি অন্য এক বন্ধুর কাছে আছে। এই চাবি নিয়ে অশান্তির জেরেই এরপর রান্নাঘরে থাকা ছুরি নিয়ে এসে স্ত্রীকে কোপাতে শুরু করেন অরবিন্দ (৪৭)। কিশোরী মেয়ে বাঁচাতে এলে তারও হাতে ও পেটে আঘাত লাগে।
এই ঘটনায় খুন ও খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছে পুলিস। আজ ধৃতকে আদালতে তোলা হবে। তদন্তে পুলিস আরও জানতে পেরেছে যে, অরবিন্দরা দুই ভাই-বোন। দিদি থাকেন টালিগঞ্জে। বাবা-মা প্রয়াত হয়েছেন। বাবার কেনা মনোহরপুকুরের ফ্ল্যাটেই থাকতেন অরবিন্দ। এছাড়া তাঁর আত্মীয় বলতে তেমন কেউ নেই। ওদিকে শ্বশুরের সিমেন্টের ব্যবসার কাজ করতেন অরবিন্দ।
পুলিসের কাছে অরবিন্দ দাবি করেছেন, শ্বশুরবাড়িই তাঁর পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ করত। তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হতো না। যা তাঁর পছন্দ ছিল না। এমনকি, শ্বশুরের কাছে তাঁকে ফের কাজে বহালের দাবিও করেছিলেন। শ্বশুরবাড়ির পরিবার তাঁদের থেকে অনেক বেশি স্বচ্ছল। একবার টালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন স্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে। মামলা না হলেও বিয়েতে দেওয়া স্ত্রীধন সে সময় অরবিন্দের থেকে ফিরিয়ে নেন প্রিয়াঙ্কা। নিজের কৃতকর্মের পর এখন ‘অনুতপ্ত’ অরবিন্দ। রাতভর তিনি লকআপে কেঁদে কাটান বলে খবর।