প্রয়াত হলেন কবি শঙ্খ ঘোষ (Sankha Ghosh)। বুধবার সকালে বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। গত ১৪ এপ্রিল থেকে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন নবতিপর কবি। হাসপাতালে অনীহা তাই বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বাংলা সাহিত্য মহল।
জানা গিয়েছে, গত ১২ এপ্রিল থেকে কবির জ্বর এসেছিল। এছাড়াও একাধিক উপসর্গ থাকায় তাঁর কোভিড পরীক্ষা করানো হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। যদিও তাঁর হাসপাতালে যাওয়ায় আপত্তি ছিল। তাই বাধ্য হয়েই হোম আইসোলেশনের ব্যবস্থা করেন পরিজনেরা। বাড়িতেই ICU-র পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। এমনিতেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন কবি। তার উপর কোভিডের জেরে শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতে আচমকাই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। বুধবার ভোর তাঁকে ভেন্টিলেটরে দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে সকাল ৮টা নাগাদ তাঁর জীবনাবসান ঘটে। গত জানুয়ারি মাসেও তাঁর শারীরিক সমস্যার তৈরি হয়েছিল। তখনও একবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, তাঁর পরিবারের বাকি সদস্যরাও করোনায় আক্রান্ত।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টার জন্য মমতার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা কমিশনের
কবির মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘শঙ্খদার মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করছি। তাঁর পরিবার এবং শুভানুধ্যায়ীদের সকলকে সমবেদনা জানাই। কোভিডে মারা গিয়েছেন শঙ্খদা। তা সত্ত্বেও যাতে রাষ্ট্রীয় সম্মানের সঙ্গে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা যায়, মুখ্যসচিবকে তেমন নির্দেশ দিয়েছি। তবে শঙ্খদা গান স্যালুট পছন্দ করতেন না। সেটা বাদ রাখছি।’’
দীর্ঘ কর্মজীবনে নানা ভূমিকায় দেখা গিয়েছে শঙ্খবাবুকে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনাও করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব আইওয়ায় ‘রাইটার্স ওয়ার্কশপ’-এও শামিল হন। বছর দুয়েক আগে ‘মাটি’ নামের একটি কবিতায় কেন্দ্রীয় সরকারের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধেও গর্জে উঠেছিলেন তিনি।
বাংলা কবিতার জগতে শঙ্খ ঘোষের অবদান কিংবদন্তিপ্রতিম। ‘দিনগুলি রাতগুলি’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তাঁর প্রসিদ্ধি সর্বজনবিদিত।
দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। ১৯৭৭ সালে ‘বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে কন্নড় ভাষা থেকে বাংলায় ‘রক্তকল্যাণ’ নাটকটি অনুবাদ করেও সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়াও রবীন্দ্র পুরস্কার, সরস্বতী সম্মান, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে তাঁকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার।
আরও পড়ুন: একসঙ্গে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা পাঁচ তরুণীর, চাঞ্চল্য পার্কস্ট্রিটে