বিরল দৃশ্য রাজপথে! পেট্রোপণ্য মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদের স্টিয়ারিং হাতে নিলেন মমতা

একটা বাড়িতে মানুষের ২টো গ্যাস কমপক্ষে লাগে। দুটো গ্যাসের দামই যদি ১৬৫০ টাকা হয় তাহলে সে বাজার করবে কী, খাবে কী, ছেলে মেয়ের পড়াশুনো চালাবে কী করে, রাস্তায় যাতায়াত করবে কী করে’?
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

বিরল দৃশ্য! রাজপথে ই-স্কুটারে চালকের আসনে স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী! অবিশ্বাস্য মনে হলেও বৃহস্পতিবার সূর্য পশ্চিমপানে ঢলে যাওয়ার আগে এমনই বিরল ছবি তৈরি করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee)। এদিন নবান্নে যাওয়ার পথে তিনি ছিলেন সওয়ারি আর বিকেলে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনি নিজেই সারথী। পরনে সাদা শাড়ি, মাথায় নীল হেলমেট পরে ইলেকট্রিক স্কুটারে নিজেই চড়ে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী। সকালে তাঁকে স্কুটারে চড়িয়ে নিয়ে নবান্নে গিয়েছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ফেরার পথে তিনি চললেন পাশে পাশে।

নবান্ন থেকে বেরিয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর মাঝামাঝি পর্যন্ত মমতা ওই ই-স্কুটার চালান। এর পর তা চালান ফিরহাদ হাকিম। পরে হরিশ মুখার্জি রোডে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফের নিজের হাতে নেন স্কুটারের ‘হ্যান্ডল’। প্রতীকী প্রতিবাদে তো বটেই, এই বয়সে অনভ্যস্ত হাতে মমতা যে ভাবে স্কুটার চালালেন, তা চমকে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতাকে স্কুটার কেন সাইকেল চালাতেও কেউ কখনও দেখেননি।

মমতা যখন রাস্তা দিয়ে ই-স্কুটার চালিয়ে যাচ্ছেন, তখন তাঁর নিরাপত্তায় শহরের আকাশে উড়েছে ড্রোন। তবে কলকাতার রাস্তায় ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে কোনও আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীকে স্কুটার চালিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে সমস্ত গাড়িই রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে। রাজপথে মমতাকে এ ভাবে স্কুটার চালাতে দেখে ভিড় জমে যায় রাস্তার দু’ধারে। মোবাইলে ছবি তুলতে থাকে উৎসাহী জনতা। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এটাই আসল জননেত্র্রীর ছবি। প্রতিবাদের প্রতীক এ ভাবেই হয়ে উঠতে হয়।’’

সন্ধে প্রায় ৬ নাগাদ কালীঘাটের বাড়িতে পৌঁছেও প্রতিবাদের স্বর এতটুকুও কমাননি মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, ”জ্বালানির দাম এতটা বাড়িয়ে দিয়েছে, লোকজন কীভাবে যাতায়াত করবে? এই দাম অবিলম্বে কমাতে হবে। যে দাম ৮০০ টাকায় চড়িয়েছে, তা ৪০০এ নামাতে হবে। নাহলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। মানুষ একবার আন্দোলন শুরু করলে, তখন  সিবিআই দেখিয়েও লাভ নেই।”

আরও পড়ুন: ফাঁকা মাঠে ‘পাওরি’! মিম শেয়ার করে বিজেপিকে একহাত নিলেন নুসরত

রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে দুষে তিনি বলেন, ‘মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার আগে গ্যাসের দাম ছিল ৪০০ টাকা। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই গ্যাসের দাম বেড়ে হয়েছে ৮২৫ টাকা। একটা বাড়িতে মানুষের ২টো গ্যাস কমপক্ষে লাগে। দুটো গ্যাসের দামই যদি ১৬৫০ টাকা হয় তাহলে সে বাজার করবে কী, খাবে কী, ছেলে মেয়ের পড়াশুনো চালাবে কী করে, রাস্তায় যাতায়াত করবে কী করে’?

কেন্দ্রীয় সরকার বাজেটে কেরসিনের ওপর থেকেও ভর্তুকি প্রত্যাহার করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন. ‘আজকে রান্না ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। কেরসিন তেলে ৪,০০০ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। শুধু মানুষের জীবনের দাম ছাড়া সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে’।

মমতার দাবি, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৪০০ টাকা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন একেকটা করে নেতা আসছে। একটা কথা বলে না। পেট্রোলের দাম কেন বাড়ল? উত্তর নেই। ডিজেলের দাম কেন বাড়ল উত্তর নেই। এলপিজির দাম কেন বাড়ল উত্তর নেই। যা ইচ্ছে মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছে। তাই সবাই বলছে, চাই না চাই না বিজেপিকে চাই না। এই ধান্দাবাজ, লুঠোরাবাজ, এলপিজির দাম বাড়ানো। পেট্রোলের দাম বাড়ানো, ডিজেলের দাম বাড়ানো চলবে না। দাম অবিলম্বে কমাতে হবে।’

এদিন ই-স্কুটার চালিয়ে বাড়ি ফিরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চালানো একদম সহজ। এবার থেকে একা একাই বেরিয়ে পড়বো। কিন্তু সমালোচনাও কম হল না। বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র প্রতিক্রিয়া, পরিবেশ রক্ষায় ই-গাড়ি চালানোয় উৎসাহ দিতে কেন্দ্রের যে উদ্যোগ, মুখ্যমন্ত্রী তারই প্রচার করে দিলেন।  প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মতে, ভোটের আগে রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে অনেক নাটক হবে। এটাও তার মধ্যে একটা।

সিপিএম-ও প্রায় একই সুরে আক্রমণ করেছে মুখ্যমন্ত্রীকে। দলের নেতা তথা উত্তর দমদমের বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা পেট্রোপণ্যের প্রতিবাদ না কি ইলেট্রিক স্কুটারের বিজ্ঞাপন? তৃণমূল তো সব জায়গা থেকেই কাটমানি খায়। এ ক্ষেত্রেও বি়জ্ঞাপন থেকেও কাটমানি নিতে পারে। রাজনীতিকে মুখ্যমন্ত্রী এত লঘু করে দিচ্ছেন কেন? কেন এমন বালখিল্যতা দেখালেন তিনি? সব কিছুকেই নাটকের কায়দায় পেশ করে প্রতিবাদের রাজনীতিকে তিনি বালখিল্যতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, এমন বালখিল্য আচারণ করে বাঙালির লজ্জার কারণ হবেন না।’’

তৃণমূল যদিও এর মধ্যে কোনও ‘চমক’ বা ‘নাটক’ দেখছে না। দলের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায় বলেন, ‘‘দলনেত্রী যে কোনও প্রতিবাদই রাস্তায় নেমে করেন। গত ৪০ বছর ধরে রাজ্যের মানুষ তা দেখে আসছে। আজও সে ভাবেই রাস্তায় নেমে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। আচ্ছে দিনের নামে নরেন্দ্র মোদীর সরকার যে ভাবে পেট্রল ও ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে, তা এক কথায় নজিরবিহীন। পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের গরিব মানুষের ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তা একেবারেই যথার্থ।’’

আরও পড়ুন: আমাকে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিত রাকেশ, কোকেন-কাণ্ডে ফের বিস্ফোরক পামেলা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest