মন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার পর কেঁদে ফেললেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজভবন থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে ইস্তফা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন রাজীব। এদিন তিনি বলেন, ‘খুব খারাপ লাগছে। আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছে। খুবই বেদনাগ্রস্ত হয়েছি। কোনও দিন ভাবিনি এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কাউকে আঘাত দিয়ে থাকলে মার্জনা করবেন। যতদিন বেঁচে থাকব আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। উনি আমায় কাজের সুযোগ দিয়েছেন। নতমস্তকে ওঁকে প্রণাম জানাচ্ছি।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সকালেই চিঠি পাঠিয়ে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাজীব। ফেসবুকে তা নিয়ে ‘আবেগঘন’ পোস্টও লিখেছেন। তার পরেই রাজভবনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করতে যান তিনি। রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে বেরনোর সময় সংবাদমাধ্যমের সামনে রীতিমতো ‘ভেঙে’ পড়েন রাজীব। ধরা গলায় বলেন, ‘‘অনেক বেদনা নিয়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য হলাম। সম্প্রতি সতীর্থদের কথায় অত্যন্ত আহত হয়েছি। ব্যক্তিগত আক্রমণও করা হয়েছে। আর নিতে পারছিলাম না, বিশ্বাস করুন।’’
আড়াই বছর আগে রাজীবের হাত থেকে সেচ দফতরের দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় ওই দায়িত্ব দেওয়া হয় শুভেন্দুকে। রাজীব দাবি করেছেন, তাঁকে না জানিয়েই ওই দিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তিনি তা মেনে নিতে পারেননি। রাজীবের কথায়, ‘‘আড়াই বছর আগে আচমকা দফতর বদল করে দেওয়া হয়েছিল। অত্যন্ত খারাপ লেগেছিল। সেই সময় ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও দেখাননি মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে উত্তরবঙ্গে বৈঠক করছিলাম তখন। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখে জানতে পেরেছিলাম, আমার দফতর বদল হয়েছে। সে দিনই ইস্তফা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উনিই নিরস্ত করেছিলেন।’’
তবে আড়াই বছর ধরে মনে ক্ষোভ পুষে রেখে হঠাৎ বিধানসভা নির্বাচনের আগেই কেন মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? রাজীবের যুক্তি, ‘‘প্রতিদিন মনে প্রাণে আহত হচ্ছিলাম। আঘাত আর সহ্য করতে পারছিলাম না।’’
মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিলেও, এখনও ডোমজুড়ের বিধায়ক পদ ছাড়েননি রাজীব। ছাড়েননি তৃণমূলের সদস্যপদও। তবে তিনি চলে গেলেও দলে কোনও প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা দল ছেড়ে যান, কী কারণে যান, তাঁরারই বলতে পারবেন। জনসমুদ্রের সমর্থনে তৃণমূল আজ এই জায়গায়। সমুদ্র থেকে দু’-ঘটি জল তুলে নিলে সমুদ্রের কিছু যায় আসে না। ঠিক যেমন দুটো পাতা ঝরে গেলে বটগাছের কিছু যায় আসে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো নিজেই একটা ইঞ্জিন। তিনিই সকলকে টেনে নিয়ে যান। কোন স্টেশনে কে নেমে গেলেন, তাতে কিছু যায় আসে না।’’
আরও পড়ুন: ‘মমতার আগুনে অনুপ্রাণিত, মানুষের জন্য কাজ করতে চাই’ তৃণমূলে যোগ দিয়ে বললেন সৌরভ