গতকাল (শুক্রবার) থেকে ফের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেল প্রিয়া, মেনকার মতো নামী সিঙ্গল স্ক্রিন থিয়েটারের। দর্শক সংখ্যা ৫০% আগেই বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তবে সেই সংখ্যারও অর্ধেক ভরছে না। মাছি তাড়ানো গোছের পরিস্থিতি সিনেমা হল গুলিতে। ফলে বন্ধ হয়েছে প্রাচী, ইন্দিরা, অশোকা, জয়া, বায়োস্কোপ (দুর্গাপুর), ডাকবাংলো (বারাসাত)-র মতো সিঙ্গল স্ক্রিনের দরজাও।
কেন এই সিদ্ধান্ত? প্রিয়া সিনেমার মালিক অরিজিৎ দত্ত বললেন, ‘‘হল খোলার পর থেকে দেখলাম সারাদিনে ৪-৫ জন লোক আসছে সিনেমা দেখতে। আর পেরে উঠছি না। এত বড় এস্টাবলিশমেন্ট চালাব কী করে?’’
নবীনা সিনেমার মালিক নবীন চোখানির কথায়, ‘‘ব্যবসায় লাভ-লোকসান তো থাকবেই। যে ব্যবসা আমায় এত দিন লাভের মুখ দেখাল তাতে ক্ষতি হলেই কি কর্মচারীদের মাইনে দেব না? হল বন্ধ করব?’’ নবীন আরও জানান, যে বাংলা ছবি এতদিন ধরে তাঁকে লাভের মুখ দেখিয়েছে, তার খাতিরে তিনি কষ্ট সহ্য করবেন। কিন্তু হল বন্ধ করবেন না।
আরও পড়ুন: নজরকাড়া নয়া ‘ফেলুদা’, নস্টালজিয়া উসকে দিল সৃজিতের ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’-এর ট্রেলার
দর্শকদের হল বিমুখ হওয়ার আরও অন্যতম কারণ কোনও উল্লেখযোগ্য ছবি রিলিজ নেই। কলকাতার সিঙ্গল স্ক্রিন এখনও বলিউডের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে হল খুললেও বলিউডে কিন্তু কোনও উল্লেখযোগ্য ছবি এ বছর মুক্তি পাচ্ছে না। সূর্যবংশী, ৮৩-র মতো হলে মুক্তি পেতে চলা সব ছবি আগামী বছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত পিছিয়ে গিয়েছে।
অরিজিত দত্ত বলেন- ক্রিসমাসে একটা বড় ব্যানারের বাংলা ছবি এই পরিস্থিতি পালটাতে পারবে না। আমার আরও ভালো বিষয়ভিত্তিক ছবির প্রয়োজন, যা দর্শক টানতে পারবে’।উল্লেখ্য ক্রিসমাসে হলে মুক্তি পাবে সৃজিত-প্রসেনজিত জুটির ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ এবং পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর ‘হাবজি-গাবজি’।
তা হলে করোনাকালে বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ কি অন্ধকার? পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বিষয়টা বোঝা এত সহজ নয়। এখানে প্রযোজকদের বিশেষ ভূমিকা আছে। যে প্রযোজনা সংস্থার নিজস্ব ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আছে, তারা যে মুহূর্ত থেকে বাংলা ছবি রিলিজ করতে শুরু করল, তখন থেকে ওটিটি নেই, এমন প্রযোজকরাও হলে ছবি রিলিজ করতে আরম্ভ করলেন। এ বার হল বন্ধ হলে তাঁরা কোথায় যাবেন? কই বড় ব্যানারের হিন্দি ছবি তো হল-এ রিলিজ হয়নি এখনও। আমরা কি বলব হিন্দি ছবি চলছে না!’’
বাংলা এবং হিন্দি ছবির ডিস্ট্রিবিউটর রাজকুমার দামানি মনে করেন, সিনেমা হল চালাতে গেলে যে ধরনের কনটেন্ট দরকার, এখন তা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘প্রযোজক থেকে ডিস্ট্রিবিউটার— পুজোর সময় থেকে সকলেরই লোকসান হচ্ছে। হল তো বন্ধ হবেই। শুধু বাংলা ছবি দিয়ে সিনেমা হল চলে না। তার উপর দর্শক সংখ্যা ৫০%। দর্শকরাও সে ভাবে বেরোচ্ছেন না। ফলে বলিউডও বড় বাজেটের ছবি রিলিজ করবে না।’’
ছবি ব্যবসা না দিলে হল মালিকেরা সিনেমা হল বন্ধ করতেই পারেন, এ বিষয়ে শিবপ্রসাদ একমত হলেও তিনি মানতে চান না যে, বাংলা ছবির ‘কনটেন্ট’-এর জন্য হল বন্ধ হয়েছে।
আরও পড়ুন: শ্রাদ্ধের আগের দিন হেঁটে ফিরলেন করোনায় ‘মৃত’ ! তদন্তে বিশেষ কমিটি রাজ্যের