ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় খুন, ধর্ষণ ও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় সিট গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশে খুশি নয় রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে তারা।
সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy) বলেন, “আমি এই রায়ে অখুশি। কারণ, আইনশৃঙ্খলা যা পুরোপুরি রাজ্যের বিষয় সেটার মাঝে বারবার সিবিআইয়ের (CBI) চলে আসা কাম্য নয়। রাজ্য সরকার নিশ্চয়ই এর বিচার করবে এবং প্রয়োজন মনে করলে আপিলে যাবে। যদি রায় বলবৎ থাকে তাহলে সিবিআই বা সিট যা তদন্ত করার করবে। কিন্তু আমি মনে করছি এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার আবেদন করবে। এটাকে আটকানোর চেষ্টা করা হবে। বিজেপি জনগণের আদালতে হেরে গিয়ে এখন হাই কোর্টের আশ্রয় নিয়েছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) কোনও এক্তিয়ার নেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার ব্যাপার দেখার। ওরা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও বাহিনী বা সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে তা দেখতে পারে। সেখানে হাই কোর্ট দায়িত্ব দিয়েছিল মানবাধিকার কমিশনকে। তাদের মধ্যেও এমন লোক ছিল যারা প্রত্যক্ষভাবে বিজেপি (BJP) করত। আমরা হাই কোর্টে আপত্তি জানিয়েছিলাম। তারা এরকম রায় দিলে আমাদের আর কী করার আছে? আমরা তো আর হাই কোর্টের রায়কে প্রভাবিত করতে পারব না। সরকার নিশ্চয়ই আদালতে যাবে।”
এই ঘটনা নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে না চাইলেও রায়ে খুশি নন বলেই জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি টুইট করে বলেন, ‘হাই কোর্টের নির্দেশ নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধিতা করা যায় না। ওঁরা নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই নির্দেশ খতিয়ে দেখে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। সম্ভাব্য আইনি দিকগুলি বিবেচিত হবে। আমরা মনে করি কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে হাই কোর্টের মন্তব্য নিয়ে এখন কোনও মন্তব্য করছি না।’
আরও পড়ুন: স্বামী-সন্তানকে ছেড়ে গাড়িচালককে বিয়ে , অভিযোগ অস্বীকার বিজেপি বিধায়কের
হাই কোর্ট রায়ে জানিয়েছে, ভোট পরবর্তী খুন, ধর্ষণ ও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করে সিবিআই-কে ছ’সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এ ছাড়া ভাঙচুর করা, আগুন লাগানো, মারধর করা, ঘরছাড়া করার মতো অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় তিন আইপিএস আধিকারিক সুমনবালা সাহু, সৌমেন মিত্র এবং রণবীর কুমারের নেতৃত্বে সিট গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নজরদারিতে কাজ করবে সিট। সেই রিপোর্টও ছ’সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে হবে। ভোট পরবর্তী হিংসায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারকে।
আদালত আরও জানিয়েছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে পক্ষপাতিত্বের যে অভিযোগ রাজ্য সরকারের তরফে করা হয়েছিল তা সঠিক নয়। আদালত সমস্ত অভিযোগের তথ্য খতিয়ে দেখেছে। একটি নতুন ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করেছে আদালত। সেই বেঞ্চে এই মামলা সংক্রান্ত শুনানি, আবেদন, রিপোর্ট জমা দেওয়া প্রভৃতি পরবর্তী প্রক্রিয়া হবে।
আরও পড়ুন: ৫০০০ টাকায় সদ্যোজাত কন্যাকে বেচে দিলেন বিধবা মা, চাঞ্চল্য মেদিনীপুরে