‘ভাঙা পায়েই খেলা হবে’, নতুন স্লোগান আর নতুন রণনীতি নিয়ে ময়দানে তৃণমূল

এই মুহূর্তে মমতার ভাঙা পায়েই ভর করে ফের একবার নীল বাড়ি দখলের স্বপ্ন দেখছে তৃণমূল। 
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

এতদিন ‘খেলা হবে’ স্লোগানে সরগরম ছিল রাজ্য- রাজনীতি৷ শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিজেপি বা বাম কর্মী সমর্থক৷ কমবেশি সব দলের নেতা কর্মীদের গলাতেই শোনা গিয়েছে খেলা হবে হুঁশিয়ারি৷ এবার নন্দীগ্রামে ভোট প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে চোট লাগার পর সেই স্লোগানই কিছুটা বদলে নিলেন তৃণমূল সমর্থকরা৷ যার ফলে এসএসকেএম হাসপাতালেই উঠল নয়া স্লোগান, ‘বন্ধু আবার আসছো কবে, ভাঙা পায়েই খেলা হবে৷’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে বুধবার থেকেই এসএসকেএম হাসপাতালে ভিড় করছেন তাঁর সমর্থক এবং ভক্তরা৷ সেরকমই বেশ কিছু সমর্থকের হাতে এই অভিনব স্লোগান লেখা ব্যানার এ দিন দেখা গেল হাসপাতাল চত্বরে৷

যাঁরা এই ব্যানার লিখে এসএসকেএম হাসপাতালে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পায়ে হেঁটে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে যান৷ কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ভাবেই সেটা আটকাতে তাঁর পায়ে আক্রমণ করা হয়েছে৷ তবু আমরা জানি, পা যদি ভেঙেও যায় সেই ভাঙা পা নিয়ে মাঠে নেমে তিনি উন্নয়ন, ভালবাসা, হৃদয়ের খেলাকে নিয়ে এগিয়ে যাবেন৷’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোড়ালিতে চিড় ধরেছে৷ পায়ের ফোলা কমলে প্লাস্টারও করা হতে পারে৷ তাঁকে কবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে সে বিষয়ে শুক্রবার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন চিকিৎসকরা৷ তৃণমূলের তরফে অবশ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শনিবার থেকেই প্রচার শুরু করবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ হুইলচেয়ারে করেই তিনি প্রচারে ঝড় তুলবেন, সেটা ধরে নিয়েই সভাস্থলে ব্যবস্থা রাখছে তৃণমূল নেতৃত্ব৷ তৈরি রাখা হচ্ছে হুইলচেয়ার৷ হাসপাতাল থেকে ভিডিও বার্তায় মমতা নিজেও জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই ফের প্রচার শুরু করবেন তিনি৷আর সেই বার্তা পেতেই নতুন রণনীতি নিয়ে ময়দানে তৃণমূল।

আরও পড়ুন: শনিবার থেকেই ফের প্রচারে, পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধেই ভোটের ময়দানে ‘স্ট্রিট ফাইটার’ মমতা

প্রধানত পাঁচটি রণকৌশল নেওয়া হয়েছে। প্রথম রণকৌশল হল, অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলি যেরকম তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করার দিনক্ষণ ছিল, যেমন অন্যান্য কেন্দ্র বিরোধী নানা রকমের বিষয়। পেট্রোল-ডিজেলের দামবৃদ্ধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলন করার কথা ছিল। সমস্ত কিছু এখন শিকেয় তুলে দিয়ে মূল প্রচারের বিষয়বস্তু করা হচ্ছে আক্রান্ত মমতা। এই আক্রমণের পিছনে আছে বিজেপি। এই আক্রমণ হল প্রতিরক্ষার একটা শ্রেষ্ঠ রণকৌশল।

দ্বিতীয় রণকৌশল হল, এই আক্রমণের পেছনে একটা ষড়যন্ত্র আছে। তার কারণ হল, কদিন আগেই নির্বাচন কমিশন বিজেপির অঙ্গুলি হেলনে ডিজি পুলিশকে সরিয়ে দিয়ে নতুন ডিজিকে নিযুক্ত করেছেন আইন শৃঙ্খলার ইস্যু তুলে। সেটা বিজেপি সুপরিকল্পিত ভাবে করেছে। এমনটাই অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের।

তৃতীয় কৌশল হল, রণকৌশল হল, যে এইটাকে এই ইস্যু করে এখন রাজ্য জুড়ে অবরোধ। রাজ্য জুড়ে অবস্থান-বিক্ষোভ এই সমস্ত হচ্ছে। আবার আরেক দিকে যারা সমর্থক-কর্মী-শুভানুধ্যায়ীরা সমস্ত যাগ-যজ্ঞ শুরু করে দিয়েছেন। তারা মৃত্যুঞ্জয়ী যজ্ঞ করছে। তারপর আরও নানান যজ্ঞ করা হচ্ছে। সেটা ঘরে ঘরে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচারিত, যতক্ষণ না মমতার সুস্থ হয়ে উঠছে। ততক্ষণ পর্যন্ত এই যাগযজ্ঞ পালনের কাজ মানুষ করবে। সেটা চূড়ান্ত ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস সক্রিয়। শুধুমাত্র কলকাতা শহরে নয়। জেলায় জেলায় এই কাজ শুরু হয়ে গেছে।

চতুর্থ রণকৌশল হল, কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী এবং বিজেপি নেতা অর্জুন সিং অবশ্য অভিযোগ করছেন, যে সবটাই নাটক। এই নাটকের ভিত্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতি করছেন। কেননা তিনি ভোটে নন্দীগ্ৰামে হেরে যাবেন। এইসব করে কিছু লাভ হবে না বলে জানিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু মমতার দলের যেটা রণকৌশল, সেটা হল যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এধরনের নাটুকেপনার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। ততই জোরদার ভাবে তারাও এটা বলতে শুরু করেছেন, যে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, যিনি এরকম ভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। আহত হয়েছেন। অতীতেও তিনি বারবার আক্রান্ত হয়েছেন। তা সত্ত্বেও তাঁকে ব্যাঙ্গবিদ্রুপ করা। এমনকী মেডিকেল রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা না করে ব্যঙ্গবিদ্রুপ শুরু করে দেয়া। এটা আরও বেশি মর্মান্তিক। দুঃখজনক। এবং সেই আবেগকে মথিত করার চেষ্টা। তার ফলে আরও বেশি করে হওয়া সম্ভব হচ্ছে।

মমতার আহত হওয়ার ঘটনা এটা এই মুহুর্তে সবথেকে বড় ঘটনা হয়ে উঠেছে। এই কারণে অন্য সমস্ত ইস্যুগুলো- যেমন জেলায় জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কলহ। যারা স্টার বা চিত্রতারকা তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় তৃণমূল বলছে, তারা বহিরাগত। তাদেরকে এখানে ঢুকতে দেওয়া হবে না – এগুলো ঢাকা পরে গিয়েছে। তাই এই মুহূর্তে মমতার ভাঙা পায়েই ভর করে ফের একবার নীল বাড়ি দখলের স্বপ্ন দেখছে তৃণমূল।

আরও পড়ুন: বিজেপির ‘রূপ’ বোঝাতে বঙ্গে কৃষক নেতারা, ১৩ তারিখ নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতে থাকবেন রাকেশ টিকায়েত

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest