সিলেবাসে রদবদল। আর তাতেই শেষমেশ ছুটি হয়ে গেল রবীন্দ্রনাথের। উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়ল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। আর যোগীরাজ্যের এ হেন আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করলেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর কথায়, “ওঁরা কোনওদিন বাঙালির ঐতিহ্য বোঝেনি। ওঁদের কাছ থেকে এহেন আচরণ প্রত্যাশিত। দেশের সংস্কৃতি বোঝে না ওঁরা।”
রবীন্দ্রনাথের বাদ পড়া নিয়ে সারা দেশেই জমেছে বিতর্ক। রবীন্দ্রনাথ শুধু নোবেলজয়ী কবি তো নন, তিনি আমাদের দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। তাঁর লেখার সঙ্গে পড়ুয়াদের পরিচয় না করানো কি নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁকে না চেনানোর রাস্তাই খুলে দিচ্ছে না! প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু একটি টুইটে জানিয়েছেন, যদি যোগী আর রামদেব রবীন্দ্রনাথকে সরিয়ে দিতে পারে, তবে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতে তিনি আশার আলো দেখছেন না। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, এই কারণেই বাংলা বিজেপিকে সর্বান্তকরণে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকী, সাংবাদিক সম্মেলন করেও যোগী রাজ্যের এ হেন আচরণের তীব্র নিন্দা করছেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী।
উত্তরপ্রদেশের স্কুলপাঠ্যে এতদিন ছিল রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্পটি। দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে পড়ানো হয় এনসিইআরটি-র বই। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যসূচি। সেখানেই ইংরেজি পাঠ্যসূচিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছুটি গল্পটির ইংরেজি অনুবাদ ছিল– ‘দ্য হোম কামিং’। দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং শিক্ষাবিদ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের নিবন্ধ ‘দ্য উইমেনস এডুকেশন’ও ছিল সেখানে। কিন্তু ওই সমস্ত লেখায় আপত্তি আছে যোগী সরকারের। তাই সিলেবাস থেকে লেখাগুলি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : কন্ডোম পরে যৌনতার মজা নেই’ বলায় আইনি গেরোয় টিকটকার! নিন্দা সোশ্যাল মিডিয়াতেও
অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশ সরকারের সুপারিশ অনুযায়ী চৌধুরী চরণ সিং বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের পাঠ্যক্রমে ঢোকানো হয়েছে বাবা রামদেবের নিবন্ধ ‘যোগ চিকিৎসা রহস্য’। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ‘হঠযোগ স্বরূপ’ও অবশ্যপাঠ্য করা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি বই থেকে বাদ পড়েছে আর কে নারায়ণের গল্প ‘অ্যান অ্যাস্ট্রোলজার্স ডে’। মুকুল আনন্দের ‘দ্য লস্ট চাইল্ড’ও বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে শেলির কবিতা। দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে সরোজিনী নায়ডুর কবিতা ‘দ্য ভিলেজ সং’।
স্বাভাবিক ভাবেই উত্তরপ্রদেশের এই নতুন সিলেবাস নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেন সরকার এই লেখাগুলি বাদ দিল, তা নিয়ে সরকারের তরফে কোনো কথা বলা হয়নি। বিরোধীরা সরব হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, লিবারাল লেখা বাদ দিয়ে হিন্দুত্ববাদী রচনা ঢোকানো হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের সিলেবাসে। এটাই সত্যিকারের মগজধোলাই। ছাত্রছাত্রীরা ছোটবেলা থেকেই তৈরি হবে হিন্দুত্ববাদী চেতনা নিয়ে।
বিজেপি বিরোধীরা অনেকেই বলেছেন এবার হয়ত পড়ানো হবে আশারামবাপুর জীবনী। রবীন্দ্রনাথের লেখা বাদ দেওয়ার কারণটাই বা কি হল ? এর জবাবে কেউ কেউ বলেছেন বাংলায় বিকৃত উচ্চারণে ভোটের আগে রবীন্দ্রনাথ কপচে ছিলেন মোদীজি। বাঙালি আবেগে সুড়সুড়ি দিতে তিনি তখন প্রায় রবীন্দ্রনাথের কথা বলতেন। যা তাঁর স্ক্রিপ্ট রাইটাররা লিখে দিত। কিন্তু তিনি তা সেভাবে ডেলিভার করতে পারেননি। প্রথমত, তিনি বাংলা জানেন না। সুতরাং তিনি যদি হিন্দিতে বলতেন বরং তা ভালো হত। কিন্তু বাঙালি আবেগে কাজে লাগাতে গিয়ে তিনি ভুল করেছিলেন। বাঙালি তাঁর এই হঠাৎ ‘রবিপ্রেমী’ হয়ে যাওয়াটাকে ভালোভাবে নেয়নি। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখায় উদারতার জয়গান গেয়েছেন। যা হজম করা- গুরু আরএসএস এবং শিষ্য বিজেপি-উভয়ের পক্ষেই মুশকিল। হয়ত সে কারণেই বিজেপির সব রাগ গিয়ে পড়ল রবীন্দ্রনাথের ওই লেখার ওপর !