কলকাতার রাস্তায় চলছে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোড শো। হুইলচেয়ার বসেই এগিয়ে চলেছেন মমতা। পাশে পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী তথা অভিনেত্রী জয়া বচ্চন। পরনে হলুদ শাড়ি, মাথায় পরিচিত সমাজবাদী পার্টির লাল টুপি। নববর্ষের দুপুরে এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল কলকাতা।
বৃহস্পতিবার নববর্ষের দিন কোনও জনসভা ছিল না মমতার। তার বদলে দুপুরে বেলেঘাটা গান্ধী ভবন থেকে জোড়াসাঁকো পর্যন্ত রোড শো ছিল। সেখানেই মমতার পাশে দেখা গেল জয়াকে। একাধিক প্রার্থী, কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেই এগিয়ে চলল মিছিল।
হুইলচেয়ারে বসা মমতার পাশেই হাঁটতে দেখা যায় অমিতাভ জায়াকে৷ মমতার হুইলচেয়ারও ধরে থাকতে দেখা যায় তাঁকে৷ মিছিলের মাঝেই জয়া বচ্চনের সঙ্গে কথাও বলতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে৷ প্রায় ফুলবাগান মোড় পর্যন্ত মমতার সঙ্গে হাঁটেন প্রবীণ সাংসদ৷ এর পর গাড়িতে করে তিনি চলে যান আহমার্স্ট স্ট্রিটের কাছে৷ সেখানে মিছিল এসে পৌঁছলে ফের মমতার পাশে হাঁটতে শুরু করেন জয়া বচ্চন৷
তবে মিছিলের মধ্যমনি একজনই – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাস্তার দু’ধারে সমবেত জনতার উদ্দেশে কখনও তিনি হাত নাড়ছেন, কখনও হাত জোড় করে নমস্কার করছেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর রোড শো পৌঁছয় বউবাজার মোড়ে।
আরও পড়ুন: এ বার দিলীপকে চিঠি কমিশনের, শীতলকুচি নিয়ে মন্তব্যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব তলব
রাস্তার মাঝে হুইলচেয়ারে বসেই হাতে মাইক্রোফোন তুলে নেন মমতা। বলেন, ”নয়না, সাধন, বিবেক গুপ্তা – সবাইকে আপনারা ভোট দেবেন। জয়ী করবেন। ওঁরা কাজ করেছেন, আরও কাজ করবেন। ভোটটা দেবেন সবাই।” বার্তা সংক্ষিপ্তই। কিন্তু তার মধ্যে লুকিয়ে আসল কথা। কাজ আরও চাইলে, তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করতেই হবে। বিশেষত কলকাতার এই অঞ্চলে তৃণমূলের পাল্লা ভারী। দু, একটি কেন্দ্রে বিজেপির উত্থান যদিও চিন্তায় রাখছে। তবে তৃণমূল নেত্রী আত্মবিশ্বাসী।
শ্রদ্ধানন্দ পার্কের কাছে মিছিল থামলে জয়া বচ্চনের হাতে মাইক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ রাস্তার পাশে ভিড় করা বিপুল সংখ্যক মানুষকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে জয়া বলেন, ‘আমি মমতাদিদির সাথী হয়ে এখানে এসেছি৷ যে কাজটা উনি করেন, করতে চান, তাঁকে সমর্থন করি৷ বাংলায় পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই৷ মমতাদিদি অনেক উন্নয়ন করেছেন, আরও করবেন৷ খেলা হবে তো? কিন্তু তার জন্য তো মাঠটা পরিষ্কার করুন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আপনারা জেতান৷’
বিজেপিকে বিঁধে তিনি বলেন, ”বাংলায় পরিবর্তন দরকার নেই। অনেক কাজ হয়েছে। মমতা থাকলে আরও কাজ হবে। পরিবর্তনের স্লোগান যাঁরা তুলছেন, তাঁদের কথায় কান দেবেন না। কোনও দরকার নেই পরিবর্তনের।”
জয়া প্রথম দিন প্রচারের আগে তৃণমূল ভবনে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, তিনি অভিনয় করতে আসেননি। বরং তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে সেই দায়িত্বে পালন করতে এসেছেন। মমতাকে ‘বাংলার নিজের মেয়ে’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, মমতার পা ভাঙলেও মন ভাঙতে পারেনি বিজেপি।
এ দিন মূলত তিনটি কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে রোড শো করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বেলেঘাটার পরেশ পাল, মানিকতলার সাধন পাণ্ডে এবং জোড়াসাঁকো বিধানসভার প্রার্থী বিবেক গুপ্তর সমর্থন প্রচার করেন তৃণমূল নেত্রী৷ ছিলেন চৌরঙ্গীর তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যদিও মমতার সঙ্গেই মিছিলের বড় আকর্ষণ হয়ে ওঠেন জয়া বচ্চন৷ এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের মূল স্লোগান, ‘বাংলা তার মেয়েকে চায়৷’ আর জয়া বচ্চনকেও বাংলার আরও এক মেয়ে বলেই প্রচারে তুলে ধরছে শাসক দল৷
আরও পড়ুন: চার দফার ভোট এক দফায় হোক, কমিশনকে প্রস্তাব দেবে তৃণমূল