গুয়াহাটি: দ্বীপে একা একা বসবাস করত সে। তার সঙ্গীরা আগেই চলে গিয়েছিল সব। গাছপালা, চারিদিকে থইথই করছে জল— তার মধ্যেই ধীরে ধীরে একা হয়ে যায়। সেও চলে গেল অবশেষে। সম্প্রতি আসামের উমানন্দ দ্বীপে মারা গেল একটি গোল্ডেন লেঙ্গুর। সে মারা যাওয়ার সঙ্গেই, ওখান থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে গেল এই প্রজাতির বাঁদরের অস্তিত্ব।
ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে যে কয়েকটি ছোট বড় দ্বীপ রয়েছে, তার মধ্যে উমানন্দ একটি। এই দ্বীপেই ১৯৮৪ সালে আনা হয় দু’টি সোনালি লেঙ্গুর। তারা প্রথম বাচ্চা দেয় ১৯৯০ সালে। পরে আরও ৬ বার বাচ্চা প্রসব করে স্ত্রী সোনালি লেঙ্গুরটি। ২০০২ সালে এই দ্বীপে সোনালি লেঙ্গুরের সংখ্যা দাঁড়ায় আট। পরে সেই সংখ্যা সর্বাধিক ১১-তে পৌঁছয়।এক সময়ে ১১ থেকে কমতে কমতে ১-এ এসে দাঁড়ায় এই বিরল প্রাণীটির সংখ্যা। গোবিন্দই ছিল এই দ্বীপে সোনলি লেঙ্গুর পরিবারের সেই শেষ সদস্য। বেশ কিছু দিন ধরে তাকে ওই দ্বীপে একা থাকতে হয়। সংরক্ষণবিদদের দাবি, শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। দীর্ঘদিনের একাকিত্বই তার অসুস্থতার কারণ। সেই অসুস্থতাতেই শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হল।অসম ট্রিবিউনের তরফে জানানো হয়েছে, এই সোনালি লেঙ্গুরটির নাম ছিল ‘গোবিন্দ’ ।
The last surviving golden langur of Umananda island of Assam, died.
Golden langurs are critically-endangered species which is endemic to Bhutan and some parts of western Assam. One of the most endangered primate species of India, more closer to extinction. PC Internet. pic.twitter.com/LnR5I4Juds
— Parveen Kaswan, IFS (@ParveenKaswan) February 26, 2020
ঘন সোনালি লোমে ঢাকা শরীর, তার ফাঁক দিয়েই বেরিয়ে আছে কালো মুখ। গোল্ডেন লেঙ্গুরের এই চেহারার সঙ্গে পরিচিত অনেকেই। কিন্তু এখন এরাই বিপদে পড়েছে।একে খাবার নেই, থাকার জায়গাও কমে আসছে; তার ওপর রয়েছে চোরাশিকার। এদের সোনালি ঘন লোমের লোভে মানুষ শিকার করেছে। তারই ফল দেখা যাচ্ছে এখন।
আজ শুধু ভারত নয়, গোটা পৃথিবীতে এদের অস্তিত্ব গভীর সংকটের মুখে। বেশ কিছু বছর ধরে এদের সংখ্যা কমেছে মারাত্মকভাবে।
পশ্চিম অসম, হিমালয় পার্বত্য এলাকা, ভুটানই পছন্দের জায়গা সোনালি হনুমানদের (Trachypithecus Geei) । ত্রিপুরার উত্তর-পশ্চিম অংশেও এদের দেখা মেলে। সাধারণত দলবেঁধে থাকতেই দেখা যায় এই প্রজাতিকে। এক একটি দলে কম করেও ৮টা পুরুষ ও স্ত্রী হনুমান থাকে। সবচেয়ে বেশি ৫০টি। সাধারণ হনুমানের থেকে আকারে বেশ কিছুটা বড় এই প্রজাতি অত্যন্ত বিরল। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল, ভারতে মাত্র ১৫০০টি সোনালি হনুমান টিকে আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই সংখ্যা কমে গেছে। ভুটানে এদের সংখ্যা হাজার চারেক। ঘন জঙ্গলে উঁচু গাছের ডালে থাকতেই পছন্দ করে এরা। আইইউসিএন কয়েক বছর আগেই সোনালি হনুমানদের লাল তালিকাভুক্ত করেছে। খাবারের অভাব, অজানা রোগের সংক্রমণে বর্তমানে এদের সংখ্যা ৩০ শতাংশেরও কম।